বাস্কেটবলের বুলবুল/ দুলাল মাহমুদ

একটা সময় বাস্কেটবল যে বেশ জনপ্রিয় খেলা ছিল, সেটা এখন আর অনুধাবন করা যাবে না। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাস্কেটবলের ব্যাপক চর্চা ছিল। বাস্কেটবলের সেই সুদিন এখন আর নেই। তার সোনালী দিনগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। বাস্কেটবল খেলা তার জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেললেও হারিয়ে যাননি মাহতাবুর রহমান বুলবুল। বাস্কেটবল ও বুলবুল যেন একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাস্কেটবল বললেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠেন তিনি। বাস্কেটবলের সঙ্গে তার আত্মিক সম্পর্ক। দীর্ঘদিন বাস্কেটবল খেলেছেন,তার চেয়ে বেশিদিন আছেন কোচ হিসেবে। তাছাড়া কোনো না কোনোভাবে বাস্কেটবলের সঙ্গে রয়েছে তার নিবিড় যোগাযোগ। তার জীবনের বড় সময়টাই কেটেছে বাস্কেটবলের সান্নিধ্যে। আপাদমস্তক তিনি বাস্কেটবলের লোক। বাস্কেটবলকে বাদ দিয়ে তিনি অন্য কিছু চিন্তা করতে পারেন না।
মাহতাবুর রহমান বুলবুলের রক্তেই রয়েছে খেলাধুলা। তার পিতা ছিলেন খ্যাতিমান ক্রীড়াব্যক্তিত্ব মাসুদুর রহমান। প্রথম জীবনে কলকাতা মোহনবাগানে হকি ও ফুটবল খেলেছেন। পশ্চিমবঙ্গে ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। দেশভাগের পর তিনি ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের হয়ে খেলেছেন। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশন (ইপিএসএফ)-এর সদস্য, ইস্ট পাকিস্তান রেফারি-আম্পায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং ব্রাদার্স ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ফুটবল, সাঁতার, ব্যাডমিন্টনের বিভিন্ন কার্যক্রমে তার সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। রেফারি হিসেবেও তিনি আলাদা অবস্থান গড়েন। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে বাস্কেটবল খেলা প্রচলনের ক্ষেত্রেও তার অবদান রয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে নিবেদিতপ্রাণ এই ব্যক্তিত্বের জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে খেলার মাঠে। খেলাধুলার আকর্ষণে মাসুদুর রহমানের কাছে ঘর-সংসার তুচ্ছ হয়ে যায়।
গৃহের প্রধান যখন খেলাধুলায় নিজেকে উৎসর্গ করে দেন,তখন পরিবারের সন্তানদের জন্য খেলার মাঠ হয়ে যায় অবারিত দ্বার। অবশ্য ৪ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে দ্বিতীয় বুলবুলই কেবল খেলাধুলায় ঝুঁকে পড়েন। নবাবপুর হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র থাকাবস্থায় খেলাধুলায় আকৃষ্ট হন তিনি। সে সময় আউটার স্টেডিয়ামে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে খেলতেন মনের আনন্দে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আউটার স্টেডিয়ামে বন্ধুরা মিলে ফুটবল, ক্রিকেট খেলতাম। বৃষ্টির কারণে মাঠ অনুপযোগী থাকায় একদিন ফুটবল খেলা সম্ভব হচ্ছিল না। মসজিদের উল্টোদিকে বাস্কেটবলের একটি কাঁচা কোর্ট ছিল। তখন বন্ধুরা মিলে ফুটবলকে বাস্কেটবল বানিয়ে খেলতে থাকি। এই খেলা দেখে বাবা আমাদের একটি বাস্কেটবল দেন। এই বল দিয়ে খেলতে খেলতে বাস্কেটবল খেলা শিখে ফেলি। বাবা আমাদের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিতেন। সেই থেকে বাস্কেটবলের নেশায় পড়ে যাই।’
তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৬ সালে শুরু হয় বাস্কেটবল লীগ। খেলা হতো ঢাকা স্টেডিয়ামে। এই লীগ প্রবর্তনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখেন ফাদার টিম, মাসুদুর রহমান প্রমুখ। সে সময় বাস্কেটবল লীগের প্রধান দল ছিল ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, ইগলেটস, স্পারস, আজাদ বয়েজ, ঢাকা মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন প্রভৃতি। বুলবুল ১৯৬২ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ বাস্কেটবল লীগে ওয়ান্ডারার্সে খেলা শুরু করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘বাস্কেটবলে ওয়ান্ডারার্স ছিল সে সময়কার সেরা দলগুলোর একটি। তাছাড়া এই ক্লাবের সঙ্গে আমার বাবার সম্পৃক্ততা ছিল। ক্লাবটিকে ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসতাম। এ কারণে এই ক্লাবেই খেলার ব্যাপারে মনস্থির করি। সেই যে ওয়ান্ডারার্সে ঢুকি আর কখনো তার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দেয়ার কথা ভাবিনি।’ ১৯৬২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা ওয়ান্ডারার্সে খেলেন। এর মধ্যে ওয়ান্ডারার্স চ্যাম্পিয়ন হয় ৯ বার। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দলের অধিনায়ক। জাতীয় বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশীপে তিনি ছিলেন ঢাকা জেলা দলের খেলোয়াড়। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এই দলে খেলেন। প্রথমদিকে দলের অধিনায়ক এবং শেষদিকে খেলোয়াড়ের পাশাপাশি কোচ ছিলেন। বুলবুল ইস্ট পাকিস্তান দলে খেলেছেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। ১৯৬৬ সালে ঢাকায় পাকিস্তান অলিম্পিক, একই বছর ডিসেম্বরে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ, ১৯৬৭ সালে লাহোরে পাকিস্তান জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ, ১৯৬৮ সালে ঢাকায় পাকিস্তান অলিম্পিক, ১৯৬৯ সালে লাহোরে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ, ১৯৭০ সালে করাচিতে পাকিস্তান জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ এবং ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে তিনি অংশ নেন। এ প্রসঙ্গে বুলবুল জানান,‘জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে লাহোর ও করাচির সঙ্গেই কেবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারতাম। অন্যদের সঙ্গে তেমন সুবিধা করতে পারতাম না। পাকিস্তান টিম তখন অত্যন্ত শক্তিশালী। পাকিস্তান দলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সুযোগ পাওয়া সহজ ছিল না। পাকিস্তান দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ের ভালো উচ্চতা ছিল। সবাই ছিলেন প্রফেশনাল। বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর খেলোয়াড়রাই মূলত পাকিস্তানে টিমে খেলতেন। পূর্ব পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়রা ছিলেন রোগা-পাতলা। আমরা খেলতাম মনের আনন্দে। খুব বেশি সিরিয়াস ছিলাম না। কোচ ছিল না। কোনো প্রতিযোগিতার মাত্র মাস দুয়েক আগে ট্রেনিং নিতাম। শামসুল আলম, রাইসউদ্দিন আহমেদরা আমাদের দেখাশোনা করতেন।’
তিনি জানান, ইস্ট পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন কাজী কামাল, নওশের হাসান, আকবর, সঞ্জয় কুমার সরকার, আবদুল্লাহ গুল, তারেক ফাতমী, আরশাদুল, ডাঃ মাসুদুর রহমান, মেসবাহ, কুটু, আহমেদ উল্লাহ, মঞ্জু, নাসিম, আঁকা নওয়াজ, ইউসুফ প্রমুখ। এই খেলোয়াড়দের বড় একটি অংশ ওঠে আসতেন সেন্ট গ্রেগরী, সেন্ট যোসেফ স্কুল থেকে।
বুলবুল জানান,‘পাকিস্তান জাতীয় দল এশিয়ান পর্যায়ে মোটামুটি ভাল দল ছিল। একবার তারা পঞ্চম হয়েছিল। সেই দলে পূর্ব পাকিস্তানে খেলোয়াড়দের সুযোগ পাওয়া ছিল স্বপ্নের মতো। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন খন্দকার নওশের হাসান। তিনি পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। ১৯৬৮ সালে ইরানে আরসিডি টুর্নামেন্টে তিনি খেলার গৌরব অর্জন করেন। নওশের ছিলেন অসম্ভব স্টাইলিশ খেলোয়াড়।’
বুলবুলের উচ্চতা ৫ ফুট সাড়ে ১০ ইঞ্চি। এই উচ্চতার কারণে কোর্টে বাড়তি সুবিধা পেতেন। তিনি ছিলেন সিরিয়াস খেলোয়াড়। ফরোয়ার্ডে খেলতেন। তার ক্ষিপ্রতা ও ফুটওয়ার্ক ছিল দারুণ। স্কোর করার ক্ষেত্রে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রতি ম্যাচেই স্কোর করতেন। তাকে দিয়ে স্কোর করাতেন কাজী কামাল, সঞ্জয়।
স্মরণীয় খেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘লীগে নটরডেম কলেজের সঙ্গে আমাদের ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের খেলা। নটরডেম কলেজ অনেক শক্তিশালী দল। এই খেলার দিন উপস্থিত ছিলেন সেন্ট গ্রেগরীর ব্রাদার নিকোলাস। তিনি ছিলেন বাস্কেটবলের জানা-শোনা একজন ব্যক্তিত্ব। ওইদিন তিনি আমার খেলা দেখে দারুণ প্রশংসা করেন। তিনি আমাকে বলেন, তোমার বয়স যত হচ্ছে, তুমি ততই ভালো খেলছো। এটা ছিল আমার জীবনের বড় একটি কমপ্লিমেন্ট।’
বাস্কেটবলে স্মরণীয় ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘১৯৭০ সালে করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে পাকিস্তান অলিম্পিক গেমসের আসর বসে। আমরা ইস্ট পাকিস্তান দলের হয়ে অংশ নেই। সেই গেমসের প্রধান অতিথি ছিলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। তাকে দেখে হঠাৎ আমরা পূর্ব পাকিস্তান দল সিদ্ধান্ত নেই, মার্চপাস্টে তার সামনে দিয়ে যাবার সময় জয়বাংলা শ্লোগান দেব এবং ইস্ট পাকিস্তান ক্রীড়া দলের পতাকা নমিত করবো না। যে কথা সেই কাজ। কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই আমরা এটা করেছিলাম। এজন্য অবশ্য আমাদের পস্তাতে হয়। রাতের বেলা গোয়েন্দারা এসে আমাদের ভীষণভাবে নাজেহাল করে। কারণ, গোয়েন্দারা অনেক চাপের মুখে পড়ে যায়। এমন একটি ঘটনার কথা তারা আগেভাগে জানতে পারেনি। তারা জানবে বা কীভাবে? আমরা তো মাঠের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
বুলবুল চতুর্থ জাতীয় বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশীপে ঢাকা জেলা ও ঢাকা মেট্রোপলিশ দলের মধ্যে ফাইনাল খেলায় অবসর নেন। তিনি ছিলেন মেট্রোপলিশের খেলোয়াড় ও কোচ। সেবার তার দলই চ্যাম্পিয়ন হয়।
অতীতের সঙ্গে বর্তমানের খেলার পার্থক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘আমাদের সময় ছিল ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের খেলা। ভালো খেলোয়াড় একাই দলকে জিতিয়ে আনতেন। খেলায় ছিল ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা। আর এখন তো দলগত নৈপুণ্যের খেলা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া খেলায় সাফল্য পাওয়া যায় না।’
তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে বাস্কেটবল লীগ ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য প্রতিযোগিতা হতো না। আজাদ বয়েজ ক্লাব শের-এ-বাংলা বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশীপ ৩ বার আয়োজন করে। ১৯৬৬ সালে ওয়ান্ডারার্স, ১৯৬৭ সালে ইগলেটস ও ১৯৬৮ সালে স্পারস চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়া ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব নিজেদের মাঠে আয়োজন করেছিল সুজাত আলী মেমোরিয়াল বাস্কেটবল টুর্নামেন্ট। ৩/৪ বারের মতো আয়োজিত হয়েছিল। তাতে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ২ বার, ইগলেটস ১ বার চ্যাম্পিয়ন হয়।
বুলবুলের মতে বাংলাদেশের বাস্কেটবলের রমরমা সময় ছিল সত্তর দশক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের মার্চে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হয় প্রথম মহসীন স্মৃতি বাস্কেটবল টুর্নামেন্ট। আয়োজন করে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর এটাই ছিল প্রথম কোনো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় ওয়ান্ডারার্স চ্যাম্পিয়ন এবং ইগলেটস রানার্সআপ হয়। সে সময় প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস টুর্নামেন্ট নিয়মিতভাবে আয়োজিত হত। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাস্কেটবল ছিল জমজমাট। এরপর বাস্কেটবল তার পথ হারিয়ে ফেলে। সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণে বাস্কেটবলের দুর্দশা শুরু হয়। সেই দুর্দশা আর কাটিয়ে ওঠা যায়নি।’
বুলবুল ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মেট্রোপলিশ লীগের বাস্কেটবল লীগের সেক্রেটারি এবং ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের বাস্কেটবল সেক্রেটারি ছিলেন।
খেলোয়াড় থাকাবস্থায় কোচিং-এর দিকে ঝুঁকে পড়েন বুলবুল। ১৯৭৫ সালে জার্মানির লিপজিগে কোচ হিসেবে ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৭৬ সালে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের হয়ে তার কোচিং জীবন শুরু হয়। এ বছরই তিনি প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপে ঢাকা জেলা দলের কোচ ছিলেন। ১৯৭৯ সালে পুরোপুরিভাবে কোচিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেন। সে বছর তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কোচ হিসেবে যোগ দেন। একই বছর জাপানের নাগোয়ায় ১০ম এশিয়ান বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশীপে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। ১৯৮০ সালে যুগোসøাভিয়ার বেলগ্রেড ইউনিভার্সিটি থেকে ফিজিক্যাল কালচারে প্রথম শ্রেণীতে ডিপ্লোমা অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে মালয়েশিয়ায় এশিয়ান বাস্কেটবল কনফেডারেশন আয়োজিত ওয়ার্ল্ড বাস্কেটবল কোচেস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাডভান্স কোচেস কোর্সে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আমন্ত্রণমূলক বাস্কেটবল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন। ১৯৮৭ সালে হংকংয়ে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি আয়োজিত উচ্চতর বাস্কেটবল প্রশিক্ষণে অংশ নেন। একই বছর ভারতের কলকাতায় তৃতীয় সাফ গেসসে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন। ১৯৯০ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত স্পোর্টস লিডারশীপ কোর্সে অংশ নেন। ১৯৯১ সালে শ্রীলংকার কলম্বোতে পঞ্চম সাফ গেমসে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন। ১৯৯২ সালে চীনের বেইজিংয়ে এশিয়া বাস্কেটবল কনফেডারেশন আয়োজিত ওয়ার্ল্ড বাস্কেটবল কোচেস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাডভান্স কোর্সে অংশ নেন। ১৯৯৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশীপে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ দলের কোচ। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন মালয়েশিয়ায় এবিসি জুনিয়রস বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশীপে। এছাড়াও তিনি ভারতে ওয়ার্ন্ড বাস্কেটবল কোচেস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত কোচেস কিনিক, ঢাকায় আইওসি আয়োজিত সলিডারিটি বাস্কেটবল কোচেস কোর্সে কোর্স কনডাক্টরের সহকারীর দায়িত্ব পালন, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের সহযোগিতায় ঢাকায় স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং প্রিন্সিপালস কিনিক, ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান বাস্কেটবল কনফেডারেশন কোচেস কিনিকে ইতালির ভ্যালেরিও বিয়ানচিনের সহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে ভারতের গৌহাটিতে সাউথ এশিয়ান বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশীপে এবং ২০০৭ সালে ঢাকায় ইন্দো-বাংলা গেমসে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন।
বুলবুল ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কোচ ছিলেন। এ সময় ওয়ান্ডারার্স তিনবার লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত অ্যাঞ্জেলসের কোচ থাকাকালে ক্লাবটি তিনবার লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০০২ সালে সর্বশেষ লীগে তার কোচিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মেরিনার্স। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর কোচ ছিলেন। তার সময় জাতীয় বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়নশীপে সেনাবাহিনী ৫ বার এবং নৌবাহিনী ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়াও তিনি পুলিশ ও বিডিআরের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি বিএসজেএ’র সেরা কোচ মনোনীত হন।
১৯৮২ সালে ঢাকায় হ্যান্ডবল খেলা প্রবর্তনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ২০০০ সালে মহিলা বাস্কেটবল প্রবর্তন হয় তারই উদ্যোগে। তিনি মেয়েদের বাস্কেটবল ট্রেনিং ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছেলে ও মেয়েদের জন্য বাস্কেটবল ট্রেনিং স্কুল পরিচালনা করেন।
মাহতাবুর রহমান বুলবুলের পৈতৃক নিবাস কলকাতার ভবানীপুরে হলেও তার বাবা চাকরিসূত্রে ১৯৪৬ সালে ঢাকায় স্থায়ী হন। ১৯৪৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকার লালবাগে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোচ হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন। বাস্কেটবল ছাড়াও ছোটবেলা তিনি ক্রিকেট ও ফুটবল খেলেন। তার ফিগার দেখে আজাদ বয়েজ ক্লাবের মুশতাক তাকে জোর করে ক্রিকেটে নিয়ে যান। ১৯৬৩ সালে টাউন ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগে ক্রিকেট লীগ খেলা শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে দ্বিতীয় বিভাগে তার দল মুকুল ফৌজ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে উন্নীত হয়। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত প্রথম বিভাগে এই দলের হয়ে খেলেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত খেলেন ঢাকা ওয়ান্ডারার্সে। তিনি ছিলেন পেস বোলার। রায়েরবাজারের হয়ে তৃতীয় বিভাগ লীগেও খেলতেন ফুটবল।
তবে বুলবুলের পরিচয় বাস্কেটবলের ঘরের মানুষ হিসেবেই। জীবনের সেরা সময়টা তিনি দিয়েছেন বাস্কেটবলকে। এখনও বাস্কেটবলের মায়া তিনি কাটাতে পারেননি। যেখান থেকে বাস্কেটবলের ডাক পান, অমনি সেখানেই ছুটে যান। কিন্তু বাস্কেটবলকে নিয়ে তিনি দারুণভাবে হতাশ। বিষণ্ণ কণ্ঠে তিনি বলেন,‘বাস্কেটবলের কোনো সম্ভাবনা নেই। উন্নতি করার কোনো পরিকল্পনাই নেই। পরিকল্পনা না থাকলে উন্নতি হবে কীভাবে?’ মুখে এমনটি বললেও বুকের মধ্যে বাস্কেটবলকে নিয়ে বুলবুলের অনেক প্রত্যাশা। তার হাতে গড়ে উঠছে নতুন প্রজন্মের যেসব বাস্কেটবলের খেলোয়াড়, তাদের নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন। একদিন এই তরুণ-তরুণীরা দেশের বাস্কেটবলকে ভরিয়ে দেবেন ফুলে-ফলে। তিনি সেদিনের অপেক্ষায় আছেন। #
১-১০-২০০৮

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

আছি ক্রিকেটে আছি ফুটবলেও

‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’ / দুলাল মাহমুদ

বহুদর্শী ক্রীড়াবিদ মনিরুল হক/ দুলাল মাহমুদ

কোথায় সেই ফুটবল?

বিশ্বের পরাশক্তি বিশ্ব ফুটবলের খর্ব শক্তি / দুলাল মাহমুদ

এ কেমন নিষ্ঠুরতা? দুলাল মাহমুদ

ফুটবলে প্রথম বাঙালি স্টপার মোবাশ্বার/ দুলাল মাহমুদ

অ্যাথলেটিকসের উজ্জ্বল মুখ মীর শরীফ হাসান/ দুলাল মাহমুদ