আমাদের ‘অলিম্পিক গেমস’ / দুলাল মাহমুদ


দেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া উৎসব ‘বাংলাদেশ গেমস’ হারিয়ে যেতে যেতে আবার ফিরে এসেছে। ১১ বছর পর আয়োজিত হচ্ছে এই গেমস। এই ফিরে আসাটা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য অবশ্যই একটি বড় সুসংবাদ। বাংলাদেশ গেমসই একমাত্র ক্রীড়ানুষ্ঠান, যেখানে প্রতিটি উল্লেখযোগ্য খেলার অংশ গ্রহণ থাকে। সব খেলার খেলোয়াড় ও সংগঠকরা পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পান। একইসঙ্গে বিভিন্ন খেলা আয়োজিত হওয়ায় এটি পরিণত হয় একটি উৎসবে। আর এই উৎসবের রঙে রঙীন হয়ে ওঠে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। এবারের গেমসে ৩১টি ক্রীড়ায় ৩৫৬টি ইভেন্টে ৭০৫টি স্বর্ণ পদকের জন্য ‘হৃদয়ে খেলার স্পন্দন’ নিয়ে লড়ছেন ৬৮০০ অ্যাথলেট। এত এত অ্যাথলেটের একসঙ্গে হওয়াটা চাট্টিখানি কথা নয়। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ২১টি ভেন্যুতে খেলা হচ্ছে। বাংলাদেশের আর কোনো ক্রীড়া উৎসব এত ব্যাপকভাবে, এত বিস্তারিতভাবে, এত বিপুলভাবে আয়োজিত হয় না। এরফলে উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে। সবার বুকে স্পন্দিত হবে, ‘এক বিশ্বাসে আজ জেগেছে দুর্জয় প্রাণ। প্রতিযোগিতার মঞ্চে আমরা সবাই সমান’।
চার বছর অন্তর ‘বাংলাদেশ গেমস’ আয়োজিত হওয়ার কথা থাকলেও সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। অথচ পুরো দেশে খেলার আমেজ ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি খেলোয়াড় ও সংগঠকদের উজ্জীবিত করার জন্য এই গেমসের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশে চাইলেই আন্তর্জাতিক ক্রীড়া উৎসব আয়োজন করা সম্ভব হয় না। কালেভদ্রে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসর বসে। সেটাও বেশির ভাগ সময় নির্দিষ্ট কোনো খেলাকে কেন্দ্র করে।  বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া কর্মকা- হচ্ছে এস এ গেমস। দক্ষিণ এশিয়ার এই গেমস তিনবার আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। এর বাইরে বড় কোনো আসর আয়োজন করার স্বপ্ন দেখাও যায় না। প্রথমত, আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। চাইলেই কোনো খেলায় স্বাগতিক হওয়ার দাবি উত্থাপন করা যায় না।  দ্বিতীয়ত, ভৌগলিক দিক দিয়েও বাংলাদেশ খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। তদুপরি জনসংখ্যার ভারে খেলার মাঠ, স্টেডিয়াম গড়ে তোলার মতো পর্যাপ্ত স্থান নেই। বাংলাদেশকে সুযোগ দেওয়া হলেও এশিয়ান গেমস, অলিম্পিক গেমস কিংবা এই মাপের কোনো ক্রীড়া উৎসব আয়োজন করতে পারবে না। বাস্তবিক কারণেই এটা সম্ভব না। এ কারণেই ‘বাংলাদেশ গেমস’ই আমাদের কাছে ‘অলিম্পিক গেমস’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই গেমসই বড় কোনো আসরের আমেজ এনে দেয়।
দেশের খেলোয়াড় ও সংগঠকরা বাংলাদেশ গেমসের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। নিজেদের মেলে ধরার জন্য এটাই তাদের কাছে বড় একটি প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে ফোকাসটা নিজেদের দিকে টেনে আনা যায় এবং যারা কখনো আন্তর্জাতিক গেমসে অংশ নেওয়ার জন্য সুযোগ পান না, তাদের কাছে এটি হয়ে ওঠে ‘আন্তর্জাতিক গেমস’। আর ক্রীড়া সংগঠকদের কাছে ‘বাংলাদেশ গেমস’ সাংগঠনিক দীক্ষা নেওয়ার উত্তম ক্ষেত্র। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের ক্ষেত্রে যে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সাহসের প্রয়োজন হয়, সেটি পাওয়া যায় ‘বাংলাদেশ গেমস’ আয়োজনের মাধ্যমে। ১৯৭৮ সাল থেকে ‘বাংলাদেশ গেমস’ আয়োজনের সুবাদে যে অভিজ্ঞতা হয়, তাকে কাজে লাগিয়েই পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক গেমস বা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করা সহজ হয়ে ওঠে। সবচেয়ে বড় কথা, ‘বাংলাদেশ গেমস’কে কেন্দ্র করে ক্রীড়াঙ্গন যেভাবে জমজমাট হয়ে ওঠে, তার কোনো তুলনা হয় না। দেশের খেলাধুলার প্রসার ও মানোন্নয়নে ‘বাংলাদেশ গেমস’-এর অবদান অনস্বীকার্য।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ফুটবল মাঠের অন্য এক লড়াই

হুট করে এভাবে চলে গেলেন রণজিত দা!

ধবল জোছনার দিনগুলো / দুলাল মাহমুদ Dulal Mahmud

আমাদের ফুটবলাররা

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

মাটির বিশ্বকাপ মানুষের বিশ্বকাপ

যেন রূপকথার এক নায়ক / দুলাল মাহমুদ

আমাদের ফুটবলাররা-২

বাঙালির ফুটবল আবেগ / দুলাল মাহমুদ Dulal Mahmud

স্বাগতিক ব্রাজিল, ফেলপস আর বোল্টের কথা / দুলাল মাহমুদ