পোস্টগুলি

জুলাই ১০, ২০১১ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

তার নাগাল পাওয়া হলো না/ দুলাল মাহমুদ

ইন্টারভিউ নেয়া তো দূরে থাক, শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গে দেখাটুকু পর্যন্ত হলো না। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে তিনি চলে গেলেন এমন এক জগতে, যেখানে তার দেখা পাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। এমনিতেই তিনি ছিলেন সবার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। যখন ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে দুরন্ত হরিণের মতো ছুটতেন, তখন তাকে অতিক্রম করা সম্ভব ছিল না। আবার যখন এলোমেলো হয়ে যায় তার মনোজগত, তখনও তিনি ছিলেন সবার নাগালের বাইরে। সত্যি সত্যি তাকে ধরার জন্য অনেক দিন ধরে সুযোগ খুঁজছিলাম। আমি যেহেতু তাকে চিনতাম না, লোকমুখে জানতাম তার কীর্তির টুকটাক কথা, এ কারণে তার কাছে পৌঁছানোর জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম। তাকে চিনতেন এবং তার সঙ্গে একই সময়ে অ্যাথলেটিকস করতেন অ্যাথলেট কাজী আলমগীর। দু’জনের বসবাস ছিল অনেকটা কাছাকাছি। ঢাকার মগবাজার এলাকায়। ষাট দশকের খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ কাজী আলমগীরকে অনুরোধ করেছিলাম, কোনোভাবে তাকে ম্যানেজ করতে পারলে আমাকে যে কোনো সময় যেন খবর দেয়া হয়। একমাত্র তিনিই তার কিছুটা খোঁজ-খবর রাখতেন। আলমগীর ভাই নিজেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। মুক্তিযুদ্ধের সময় হারিয়েছেন এক হাত। জীবন থেকে বিয়োগ হয়েছে প্রিয়তমা স্ত্রী। এক পুত্রকে নিয়ে কষ্টকর জীবন। র...

ভলিবলের প্রাণপুরুষ গোলাম কুদ্দুস চৌধুরী/ দুলাল মাহমুদ

বাংলাদেশের ভলিবল বললে অল্প যে ক’জনের প্রতিকৃতি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তাদের অন্যতম হলেন গোলাম কুদ্দুস চৌধুরী। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বাবু নামে পরিচিত। উচ্চতা, দৈহিক গড়ন, সুদর্শন চেহারা, স্মার্টনেস, সর্বোপরি ঝলমলে ব্যক্তিত্ব দিয়ে তিনি আলাদাভাবে সবার নজর কেড়ে নেন। ক্রীড়া অনুরাগী হিসেবে তার রয়েছে আলাদা পরিচিতি। তিনি যে ভলিবলের একজন কুশলী খেলোয়াড় ছিলেন, সেটাও তার অবয়ব দেখে অনায়াসে অনুধাবন করা যায়। বর্তমানে তার খেলোয়াড় পরিচিতিটা কিছুটা ধূসর হয়ে গেলেও উজ্জ্বল হয়ে আছে ভলিবলের প্রতি তার আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও ভালোবাসা। কিশোর বেলায় সেই যে ভলিবলের মায়াবী টানে আকৃষ্ট হয়েছিলেন, সেই মোহ আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি। কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বশীল পদে কর্মরত থাকলেও ভলিবলের প্রতি তার ভালোবাসা একবিন্দুও টাল খায়নি। তার বুকের মধ্যে জমে আছে ভলিবলকে নিয়ে অনেক অনেক স্বপ্ন, অনেক পরিকল্পনা। ট্রান্সকম বেভারেজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ও সিইও হিসেবে অসম্ভব কর্মব্যস্ত জীবন গোলাম কুদ্দুস চৌধুরীর। এক মুহূর্তও পলক ফেলার সময় নেই। এর মাঝেও সেদিন গুলশানে তার অফিক কক্ষে দীর্ঘক্ষণ আলাপচারিতায় একটু একটু করে তিনি মেলে ধরেন ফেলে আসা র...

অনন্য এক স্টিকশিল্পী কায়েস/ দুলাল মাহমুদ

বাংলাদেশের হকি আন্তর্জাতিকভাবে বড় সাফল্য না পেলেও বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের মান ছিল আন্তর্জাতিক মাপের। তাদের ক্রীড়াশৈলী প্রশংসিত হয়েছে দেশের সীমানা ছাড়িয়েও। এদেশের হকি তাদের নিয়ে অনায়াসে গর্ব করতে পারে। গর্বিত ও দেশবরেণ্য এই খেলোয়াড়দের অন্যতম একজন হলেন মোহাম্মদ আশিক উল্লাহ। এই নামটি খুব বেশি পরিচিত না হলেও কায়েস নামটি উচ্চারিত হলে হকি অনুরাগীদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে দুরন্ত এক খেলোয়াড়ের প্রতিকৃতি। একটা সময় তার সহজাত প্রতিভা ধাঁধিয়ে দিয়েছে দেশের হকি অঙ্গনকে। মুগ্ধ করেছে হকিপ্রেমীদের। বাংলাদেশের হকির ইতিহাসে সেরা লেফট আউট হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন কায়েস। ঘাষের মাঠে তিনি ছিলেন নিপুণ এক শিল্পী। তার স্টিকের তুলিতে আঁকা হয়েছে মনকাড়া সব দৃশ্যপট। তিনি ছিলেন রীতিমত ঐন্দ্রজালিক। স্টিকের জাদু দিয়ে বলটাকে নিয়ে তিনি যেভাবে ছুটতেন, ড্রিবলিং করতেন এবং ডজ দিয়ে প্রতিপরে রণভাগ ছিন্নভিন্ন করে দিতেন, তেমনটি খুব একটা দেখা যায় না। বল কন্ট্রোলেও তিনি ছিলেন অতুলনীয়। এই স্টিক শিল্পী তার পজিশনে ছিলেন অনন্য ও অসাধারণ। সেদিন মহাখালীতে তার কর্মস্থলে একত্রিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের হকির আক্রমণভাগের তিন তারকা ও আপন তিন সহোদ...

শারীরিক দক্ষতার খেলায় অনন্য ফারুকউদ্দিন আহমদ/ দুলাল মাহমুদ

অল্প বয়সেই কুস্তিটা ফারুকউদ্দিন আহমদের নেশায় পরিণত হয়। একের পর এক প্রতিটি বাধা অতিক্রম করে তিনি এগিয়েছেন সামনের দিকে। সদিচ্ছা, চেষ্টা ও আন্তরিকতা থাকায় তিনি প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আয়োজিত হয় পাকিস্তান সিভিলিয়ান রেসলিং কোচিং ক্যাম্প। ৬ সপ্তাহের এই ট্রেনিংয়ে দুই পাকিস্তানের প্রতিভাবান কুস্তিগীররা অংশ নেন। সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট বোর্ড পূর্ব পাকিস্তান থেকে যে চারজনকে নির্বাচিত করে, তিনি তাদের অন্যতম। অন্য তিনজন হলেন আলী ইমাম, ফজলুর রহমান ও নূর মোহাম্মদ। সরকারিভাবে পরিচালিত এই ট্রেনিং কোর্স পরিচালনা করেন চৌধুরী মোহাম্মদ আশরাফ। এই ট্রেনিং নেয়ার পর প্রতিযোগিতামূলক কুস্তি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে থাকেন তিনি। ১৯৬২ ও ১৯৬৩ সালে জাতীয় কুস্তি প্রতিযোগিতায় তিনি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় হয়েছেন। ১৯৬৪ সালে ইস্ট পাকিস্তান প্রভিনশিয়াল রেসলিং চ্যাম্পিয়নশীপে লাইট ওয়েট বিভাগে তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। জাপানে কি একটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে ছয় মাসের দীর্ঘমেয়াদী একটি জাতীয় কুস্তি কোচিং ক্যাম্প করা হয়। এই ক্যাম্পের জন্য তদানীন্তন পূর...

হকির দুর্ভেদ্য গোলরক্ষক ছিলেন আবদুল মাজেদ/ দুলাল মাহমুদ

‘ফুটবল ছিল আমার প্রিয় খেলা। অল্প বয়স থেকেই ফুটবল নিয়ে মেতে থাকতাম। পাড়া-মহল্লায় ফুটবলার হিসেবে খাতির যত্মও পেতে থাকি। আমি তখন খেলতাম গোলকিপার পজিশনে। সেটা ষাট দশকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। একদিন আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হকি খেলা দেখছিলাম। প্রথম বিভাগ লীগের খেলা। তখন অবশ্য হকির একটাই লীগ ছিল। সেদিন আজাদের গোলকিপার কি কারণে যেন অনুপস্থিত। সে সময় আজাদের হকি টিম দেখাশোনা করতেন বিখ্যাত ক্রীড়াব্যক্তিত্ব রণজিত দাস। ফুটবল ও হকির গোলকিপার ছিলেন। দু’ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি তখন হকি খেলতেন সোনালী ব্যাংকে। তিনি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন। আমাকে দেখতে পেয়ে আজাদের গোলকিপার হিসেবে খেলতে বলেন। আমার তো আকাশ থেকে পড়ার মত অবস্থা! জীবনে কখনো হকি খেলিনি, হকি খেলার কথা ঘুণাক্ষরে চিন্তাও করিনি। আমি কীভাবে হকি খেলবো? কিন্তু রণজিত দা’র পীড়াপীড়িতে আমি বাধ্য হয়ে খেলতে নামি। তার মত ব্যক্তিত্বের অনুরোধ অগ্রাহ্য করা কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। কার সঙ্গে খেলা ছিল, এখন আর সেটা স্মরণে নেই। তবে ভালো যে খেলেছিলাম, তার প্রমাণ পেতে বেশি সময় লাগেনি। সেদিন থেকে হকির গোলকিপার হিসেবে নতুন করে আমার যাত্রা শুরু হয়। আমি হয়ে...

শেখ মুহাম্মদ রুস্তম আলী : নিষ্ঠাবান ক্রীড়াবিদ/ দুলাল মাহমুদ

ক্রীড়াঙ্গনের সব ক্ষেত্রেই ছিল তার অবাধ বিচরণ। ক্রীড়াবিদ হিসেবে কত রকম খেলা যে খেলেছেন, কত যে পদক পেয়েছেন, তা নিজেও জানেন না। প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি যে কতজনকে দীক্ষা দিয়েছেন, তার কোনো সঠিক সংখ্যা নেই। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে তার পরিচয়ের ব্যাপ্তি অনেক দূর বিস্তৃত। এদেশের ক্রীড়াঙ্গনের মৌলিক ভিত যাদের হাতে রচিত হয়েছে, তিনি তাদের একজন। আপাদমস্তক এই ক্রীড়াবিদ হলেন অবসরপ্রাপ্ত ফাইট লেফটেন্যান্ট শেখ মুহাম্মদ রুস্তম আলী। সময়ের পলেস্তরায় এখন তিনি অনেকটা আড়াল পড়ে গেছেন। নতুন প্রজন্ম তাকে খুব একটা চেনেন না। ক্রীড়াঙ্গনেও তার উপস্থিতি এখন চোখে পড়ে না। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে তার রয়ে গেছে আত্মীক ও মানসিক সম্পর্ক। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তিনি যখন কথার মালা গাঁথেন, আদ্যোপান্ত তাতে থাকে ক্রীড়াঙ্গন। ক্রীড়াঙ্গনের নিটোল ছবি তার বুকের মধ্যে সযতনে সাজানো। একটুখানি টোকা পড়লেই বিরর থেকে বেরিয়ে আসে ক্রীড়াঙ্গনের নানা ইতিহাস। শেখ মুহাম্মদ রুস্তম আলীকে ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি আকৃষ্ট করেছে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। বাড়ি থেকে পা বাড়ালেই পেতেন খেলাধুলার উষ্ণ সান্নিধ্য। স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হলেই মাঠ আর মা...