কোথায় সেই ফুটবল?



আমাদের শৈশবটা ছিল ফুটবলময়। সেই সত্তর দশকে ফুটবলই ছিল বিনোদনের অন্যতম অবলম্বন। যদিও সাদা-কালো টেলিভিশন ছিল। সেটা একদমই সুলভ ছিল না। তা দেখার জন্য কারও না কারও দ্বারস্থ হতে হতো। আর ছিল আদি ও অকৃত্রিম বাংলাদেশ বেতার। বেতার ছাড়া ফুটবল খেলাটাই ছিল সবচেয়ে সহজলভ্য। দুটিরই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বিনোদন। একটি ঘরের। আরেকটি বাইরের। তবে বেতার ও ফুটবল ছিল একে অপরের পরিপূরক। ফুটবল সম্প্রচারে বেতারের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেতারের মাধ্যমে ঢাকা স্টেডিয়ামের ফুটবল হয়ে ওঠতো সমগ্র দেশের ফুটবল। ফুটবলের স্পন্দন ছড়িয়ে পড়তো হাওয়ায় হাওয়ায়। সে এক সময় গেছে, যখন চারপাশেই ফুটবল আর ফুটবল। তখন তো মাঠ ছিল অবারিত। জীবনও জটিল ছিল না। মনটা ছিল আকাশের মতো প্রসারিত। এর কারণ, আসমান ছিল খোলামেলা। কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই চাইলেই আকাশ দেখা যেত। নিঃশ্বাস নেওয়া যেত বিশুদ্ধ হাওয়ায়। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ফুটবল নিয়ে মেতে থাকতেন সব বয়সী মানুষ। বিকেল হলেই হাফ প্যান্ট কিংবা লুঙ্গি মালকাছা মেরে নেমে পড়তেন। কখনও কখনও সকালেও খেলা হতো। যত জন খেলতেন, তারচেয়ে বেশি মানুষ উপভোগ করতেন। ফুটবল ম্যাচ হতো এক পাড়ার সঙ্গে আরেক পাড়ার, এক মহল্লার সঙ্গে অপর মহল্লার। আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ টুর্নামেন্ট আয়োজিত হতো। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতা বা টুর্নামেন্ট লেগেই থাকতো। তবে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে অবধারিত ছিল গ-গোলও। তাতে কম শক্তিক্ষয় হতো না। এমনকি রক্তও ঝরতো। তারপরও উপভোগ্যময় ছিল ফুটবল খেলা। কোলাহল, শোরগোল, গোলমাল ছিল ফুটবলেরই অংশ। ফুটবল তো প্রাণেই খেলা। তাতে উত্তাপ থাকবে। উত্তেজনা থাকবে। উদ্বেগ থাকবে। এটাই তো স্বাভাবিক। ফুটবলের ধর্মই তো এমন। ফুটবল খেলা হবে আর উল্লাস থাকবে না, উচ্ছৃঙ্খলতা থাকবে না, অস্থিরতা থাকবে না, অহিষ্ণুতা থাকবে না, রক্ত টগবগিয়ে ফুটবে না, তা তো হতে পারে না। এটা আছে বলেই তো ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। 
আমার মনে পড়ে, সেই সত্তর দশকের গোড়াতে, এখন যেখানে পরিকল্পনা কমিশন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, সেটি ছিল বিশাল মাঠ। সেই মাঠে অনেকটা ইউরোপীয় লিগের ক্লাবগুলোর মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতো। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, স্প্যানিশ লা লিগা, জার্মান বুন্দেশলিগায় যেমন শহরকেন্দ্রিক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, তেমনিভাবে শের-এ-বাংলা নগরের সরকারি কলোনির বিভিন্ন টাইপ ছাড়াও একই এলাকায় অবস্থানরত পিডব্লুউডি ক্লাব, কৃষি কলেজের মধ্যে আয়োজিত হতো ফুটবল টুর্নামেন্ট। তাতে অংশ নিতেন ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগের তারকা ফুটবলাররাও। এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় তো বটেই, আশেপাশের এলাকায় দারুণভাবে সাড়া পড়ে যেত। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসতেন ফুটবল অনুরাগীরা। রক্তারক্তিও কম হতো না। তারপরও উৎসাহের একটু কমতি ছিল না। এই চিত্র শুধু একটি এলাকার নয়। মোটামুটি অধিকাংশ পাড়া-মহল্লায় এমনটি দেখা যেত। হায়! এখন সেই মাঠ নেই। সেই টুর্নামেন্ট নেই। সেই উত্তেজনাও নেই। যে এলাকাটি একসময় ছিল ফুটবলের অন্যতম আকর্ষণ, এখন তার কোনো লক্ষণ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এভাবেই অনেক এলাকা থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ফুটবল খেলা।

ঢাকার ফুটবল লিগকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতো পুরো বাংলাদেশ। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তো তার উত্তাপ, তার উচ্ছ্বাস, তার উত্তেজনা। সেই সময়ে ঢাকার ফুটবলের প্রধান শক্তি ছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, আবাহনী ক্রীড়া চক্র, বিজেএমসি, ব্রাদার্স ইউনিয়ন। লিগ, ফেডারেশন কাপ সহ ঘরোয়া যে কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা এই ক্লাবগুলোর মধ্যে প্রধানত সীমাবদ্ধ থাকতো। তবে ওয়ান্ডারার্স, পিডব্লুউডি, দিলকুশা স্পোর্টিং, রহমতগঞ্জ, ইস্ট এন্ড, ওয়াপদা, আজাদ স্পোর্টিং, ওয়ারী, ভিক্টোরিয়া, সাধারণ বীমা, পুলিশ, বিআরটিসি, ধানমন্ডি, ফরাশগঞ্জ, ফকিরেরপুল, আরামবাগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আদমজী, অগ্রণী ব্যাংক প্রভৃতি ক্লাবগুলো আমাদের অপরিচিত ছিল না। এই ক্লাবগুলোও অনেক সময় খেলা জমিয়ে দিত। হারিয়ে দিত বড় ক্লাবগুলোকে। ওয়ারী ক্লাব আবাহনীকে পর পর হারিয়ে দেওয়ার পর এ দুই দলের ম্যাচের সময় ব্যঙ্গ করে আবাহনীর সমর্থকদের বলা হতো ‘ওয়ারী আইলো’। কত কত ফুটবলার যে উপহার দিয়েছে এই ক্লাবগুলো। তবে স্বাধীনতার পর ফুটবলের দুই পরাশক্তি হয়ে ওঠে আবাহনী এবং মোহামেডান। আকাশী-নীল আবাহনী ছিল তারুণ্য ও যৌবনের প্রতীক। আর সাদা-কালো মোহামেডান ছিল ঐতিহ্যের ধারক। এই দুই দলের খেলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হতো তুমুল উত্তেজনা। সমগ্র দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়তো। এমনকি সামাজিক, পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হতো, কে কোন ক্লাবের সমর্থক। একই দলে অনুসারী না হলে সম্পর্ক গড়া হতো না। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে মনোমালিন্য, তিক্ততা, বিরোধও।
উভয় ক্লাবের পতাকায় পতাকায় শোভিত হতো টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। দেয়াল লিখনও দেখা যেত। ঢাকা স্টেডিয়ামে এই দুই দলের ম্যাচ দেখার জন্য দর্শকরা কত কি যে করতেন। ম্যাচের টিকিটের জন্য আগের দিন থেকে লাইনে দাঁড়াতেন। সেই লাইন ছাড়িয়ে যেত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত। লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে কম ঝকমারি হতো না। কালো বাজারে টিকিটের দাম থাকতো লাগামছাড়া। তারপরও উদ্দীপনার খামতি ছিল না। টিকিট না পেয়ে খেলা দেখার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে দড়ি বেয়ে গ্যালারিতে ওঠতেন। পড়ে গিয়ে কিংবা পুলিশের লাঠিচার্জে অনেকেই আহত হতেন। মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচটি নির্ঝঞ্ঝাটে শেষ হয়েছে, এমন দিন খুব কম গিয়েছে। প্রায়শই গোলযোগ লেগে থাকতো। রেফারি প্রহৃত হয়েছেন। খেলোয়াড়রা পরস্পরের সঙ্গে মারামারি করেছেন। দর্শকরা মাঠে ঢুকে খেলা প- করেছেন। গ্যালারিতে গ্যালারিতে সংঘর্ষ ছিল অনিবার্য। কাঁদানে গ্যাসে কাঁদেন নি, এমন দর্শক ছিল খুবই বিরল। রক্ত ঝরাও তো ছিল মামুলি। কত যে জীবন ঝরেছে! এই গোলমাল শুধু পল্টন চত্বরেই সীমাবদ্ধ থাকতো না, তার রেশ ছড়িয়ে পড়তো প্রত্যন্ত এলাকায়ও। তারপরও দর্শকরা জীবনের মূল্যে ফুটবলকে ভালোবাসতেন। ক্লাবের জন্য প্রাণ দিতে মোটেও কুণ্ঠা বোধ করতেন না। এই দুই ক্লাবের খেলায় গোলমালকে কেন্দ্র করে জেল পর্যন্ত খেটেছেন আবাহনীর চার তারকা ফুটবলার সালাউদ্দিন, চুন্নু, আনোয়ার ও হেলাল। সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে দর্শকবিহীন এরশাদ আর্মি স্টেডিয়ামে। খেলায় জয়-পরাজয়ের পর স্বাভাবিক নিয়মেই দেখা যেত দুই রকম অনুভূতি। এক পক্ষ আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠতো। অন্য পক্ষ আক্রান্ত হতো বিষাদে। এর প্রকাশ ঘটতো ঘরে ঘরে। মোহামেডান জিতলে পুরানো ঢাকার ঠাটারি বাজারের মাংসের দোকানদাররা খুশিতে মাংসের দাম কমিয়ে দিতেন। সে সময় ফুটবল ছিল প্রকৃতঅর্থেই জীবনের অংশ।

মাঠের ফুটবলের পাশাপাশি গ্যালারির উচ্ছ্বাস-উত্তেজনা ছিল চোখে পড়ার মতো। গ্যালারি থাকতো কানায় কানায় পরিপূর্ণ। উত্তর-পশ্চিম গ্যালারি মোহামেডান আর পূর্ব-পশ্চিম গ্যালারি আবাহনীর সমর্থকদের দখলে থাকতো। ভুল করে কোনো সমর্থক অন্য গ্যালারিতে ঢুকে নিজ দলকে সমর্থন করলে তার কপালে খারাপি ছিল। গ্যালারিতে বিশাল বিশাল পতাকা দুলতো। কান ফাটানো বাজি-পটকা ফুটতো। তবে গ্যালারির অন্যতম আকর্ষণ ছিল রকমারি খাবার। মজাদার ও সুস্বাদু কত রকম খাদ্য যে পাওয়া যেত। বৈকালীন নাস্তা হিসেবে এর কদর ছিল আলাদা। একটি খাবারের নাম ছিল ‘তলপেট ভাসাগি’।
ফুটবলের দলবদল নিয়ে যা হতো, তাও কম রোমাঞ্চকর ছিল না। পছন্দের ফুটবলারকে দলভুক্ত করার জন্য কত কৌশল, কত চালাকি, কত কূটবুদ্ধি প্রয়োগ করা হতো, যা গোয়েন্দা কাহিনীকে হার মানিয়েছে। এমনকি খেলোয়াড় ছিনতাই পর্যন্ত হয়েছে। আর দলবদলের সময় সাজ সাজ রব পড়ে যেত। কেউ ঘোড়ার গাড়িতে, কেউ সুসজ্জিত বাহন নিয়ে আসতেন। সঙ্গে শত শত সমর্থকদের আনন্দ আর উল্লাসধ্বনি।     
সেই সত্তর দশকে আমাদের সামনে মডেল ছিলেন কেবল ফুটবলাররাই। তাঁরাই ছিলেন আমাদের স্বপ্নের নায়ক। বেতার তরঙ্গে তাঁদের নাম আমাদের কানে যেন মধুবর্ষণ করতো। কালেভদ্রে তাঁদের দেখা পেতাম টেলিভিশনে। নিউজপ্রিন্টে মাঝে-মধ্যে ছাপা হতো ধূসর ছবি। তাতে পুরো অবয়ব স্পষ্ট হতো না। সেটুকুই ছিল আমাদের কাছে অনেক পাওয়া। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আইরিশ কিংবদন্তি ফুটবলার জর্জ বেস্টের মতো ঝাঁকড়া বড় চুলের সালাউদ্দিন, সোহরাব, নান্নু, মঞ্জু, টুটুলরা সহজেই নজর কেড়ে নিতেন। এঁরা ছিলেন গ্ল্যামারাস ফুটবলের প্রতিনিধি। সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে তাঁরা ছিলেন বেশ অগ্রগামী। এছাড়াও চুম্বকের মতো আকর্ষণ করতেন সত্তর ও আশির দশকের ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ, হাফিজউদ্দীন, অমলেশ, সান্টু, কায়কোবাদ, আশরাফ, এনায়েত, বাটু, নওশের, নীলু, বড় বাদল, মোতালেব, সেলিম, চুন্নু, আবু ইউসুফ, রকিব, খোরশেদ বাবুল, রামা লুসাই, মহসিন, হালিম, কাজী আনোয়ার, আশীষ, বাবলু, আসলাম, সালাম মুর্শেদী, বাদল রায়, আবুল, স্বপন, ওয়াসীম, মহসিন (গোলকিপার), জনি, জোসী, আরিফ, এমিলি, কায়সার হামিদ, মনু, মোনেম মুন্না, এফ আই কামাল, সাব্বির, রুমী, জুয়েল রানারা ছিলেন আমাদের স্বপ্ন। আমাদের কল্পনা। আমাদের ভালোবাসা। এঁদের ক্রীড়ানৈপুণ্য ছিল অন্য সবার থেকে আলাদা। ফুটবলার হিসেবে তাঁরা যেমন আমাদের আকৃষ্ট করেছেন, তেমনভিাবে তাঁদের ক্যারিশমা ছিল আকর্ষণ করার মতো। প্রত্যেক ফুটবলারের আলাদা আলাদা খেলার বৈশিষ্ট্য ও ইমেজ ছিল। এই তারকা ফুটবলারদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কত কত জনের কত কত স্মৃতি। সেই স্মৃতিও আস্তে আস্তে ধূসর হয়ে যাচ্ছে।
সেই সময় বিদেশি দলগুলো ছিল অন্যতম আকর্ষণ। কলকাতার মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মোহামেডান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দল এককভাবে খেলতে আসে। ১৯৭৮ সালে ১৮ দেশের ২০তম এশিয়ান যুব ফুটবল প্রতিযোগিতা তো দারুণভাবে মাতিয়ে দেয়। এত বড় ফুটবল আসর আর আয়োজন করা যায় নি। আগা খান গোল্ড কাপ, প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপ, সাফ গেমস, বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ড ফুটবলকে কেন্দ্র করে কত দেশ, কত ক্লাব, কত কত ফুটবলারের সমাবেশ ঘটতো। আগা খান গোল্ড কাপে অংশ নেওয়া মালয়েশিয়ার পেনাং এফএ, থাইল্যান্ডের রাজবীথি, ইরানের সফেদরুদ এফসি, ইন্দোনেশিয়ার নিয়াক মিত্রা, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংক ক্লাব, প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপে অংশ নেওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার সিটি হল ক্লাব, চীনের পিকিং ক্লাব, ইরাকের পুলিশ দল, সুইজারল্যান্ডের ভেভে স্পোর্টস ক্লাব, সিরিয়ার জাতীয় যুব দলের ক্রীড়াশৈলী স্মৃতিপটে উজ্জ্বল হয়ে আছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন আলী বাকের, খলিল হাশিম, জাভেদ জাহাঙ্গীরি, সমসেদ পাজিরা, ইশা খাওয়াজী, হারিস মোহাম্মদ, আন গিল ডং, দায়িশ মোহাম্মদ, ইয়াসিন সাফদারি, আবদুল্লাহ রহিম, খালিদ সালমান, সিন হাক গিয়াং, পার্ক ইয়ং গি, গুং ডাকুয়ান, হাশিম উদ্দিন, ইয়ং কুক, তারিক সালমান, শিশির ঘোষ, পিটার গ্যাভিলেট, গ্যাবর পাভোনি, হেইকি সুহানেন, ওয়ালিদ আবু আল সেল প্রমুখ।
ঢাকার ক্লাবগুলোর হয়ে আলো ছড়িয়েছেন শ্রীলঙ্কার লায়নেল পিরিচ, মহেন্দ্র পালা, ভুটানের বাহাদুর বাসনাত, লঙ্কান পাকির আলী, অশোকা রবীন্দ্র, চন্দ্রসিড়ি, নেপালের গনেশ থাপা, ইরাকের সামির মোহাম্মদ সাকিররা। এক একটি নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কত না গল্প। কত না কাহিনী। কত না ইতিহাস। 
ফুটবলারদের নিয়ে যে মাতামাতি ছিল, তার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। সেটা ছিল অন্য রকম ব্যাপার। ফুটবলাররাই ছিলেন সুপারস্টার। এর বাইরে অন্য জগতের আর কেউ এতটা আলোচিত বা আলোকিত ছিলেন না। সেই আলোচনা, সেই আলো এখন আর নেই। কোথায় সেই ফুটবল? কোথায় সেই ফুটবলার? কোথায় সেই উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা-উত্তেজনা?  সবটাই মনে হয় মায়া। মরীচিকা। এ যেন কল্পরাজ্যের কোনো ঘটনা। যা কল্পনায় আছে, বাস্তবে নেই। মিলিয়ে গেছে হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো। শীতের কুয়াশার মতো। সঙ্গত কারণেই বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি মনে হবে অলৌকিক কোনো কাহিনী। ফুটবলের বর্তমানে যে অবস্থা, তা দেখে সোনালি দিনের সেই সময়কে মোটেও অনুভব করা যাবে না। সেই সময়কে যাঁরা অবলোকন করেছেন, কেবলই তাঁরাই জানেন রঙদার সেই ফুটবলকে। তাঁদের কাছে এটি হয়ে আছে দীর্ঘশ্বাস। এই দীর্ঘশ্বাস কি চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

স্টাইলিশ অ্যাথলেট ছিলেন আরজান খান/ দুলাল মাহমুদ

ফুটবলে দেখি পৃথিবীর মুখ / দুলাল মাহমুদ

হকি অন্তঃপ্রাণ আলমগীর মোহাম্মদ আদেল/ দুলাল মাহমুদ

‘মৃত্যুগুহা’ থেকেই উজ্জীবনের গান / দুলাল মাহমুদ

অন্তরঙ্গ আলাপনে উনিশ ব্যক্তিত্ব

কাছের মানুষ এখন অনেক দূরে

আপন ভুবনের রাজা কাজী কামাল/ দুলাল মাহমুদ

ফুটবলের দেশে বিশ্বকাপ / দুলাল মাহমুদ