পোস্টগুলি

জুলাই ৬, ২০১৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

বিশ্বকাপের টুকরো টুকরো স্মৃতি / দুলাল মাহমুদ

ছবি
যদিও অর্ধ-শতাব্দী বছর পেরিয়ে যাবার পর বিশ্বকাপ ফুটবলের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছিল আমাদের। তারপরও আমরা অনেকটা সৌভাগ্যবান যে, আমাদের তারুণ্যে আমরা পেয়েছিলাম এই মহোৎসবকে। বাংলাদেশের টেলিভিশনের কল্যাণে মূলত ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপই ব্যাপকভাবে সম্পৃত্ত করেছিল এ দেশের ফুটবল অনুরাগীদের। তালিবাবাদ ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে সুদূর স্পেন থেকে সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল বিশ্বকাপের খেলা। লেখালেখি জীবনের শুরুতে এমন একটি বর্ণাঢ্য ও বর্ণিল উৎসবের সংস্পর্শে এসে বর্তে গিয়েছিলাম। এই বিশ্বকাপ খুলে দিয়েছিল আমাদের দিব্যদৃষ্টি। ঢাকা ষ্টেডিয়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ আমাদের দেখার জগতটা অনেক বিস্তৃত হয়ে গিয়েছিল। আমরা নাগরিক থেকে হয়ে উঠেছিলাম বিশ্ব নাগরিক। সেই যে গোপন প্রেমিকার মতো বুকে ঠাঁই করে নিয়েছিল বিশ্বকাপ ফুটবল, তার আকর্ষণ, তার আচ্ছন্নতা, তার মোহ কখনো ফিকে হয়ে যায়নি। বরং যতই দিন গিয়েছে গভীরতর হয়েছে প্রেম। জীবনের কত কত দিন, কত কত রাত বিসর্জন দিয়ে বিশ্বকাপের আরাধনায় নিমগ্ন থেকেছি। পান করেছি অনাবিল সৌন্দর্য সুধা। বিশ্বকাপ ফুটবলকে নিয়ে কত স্মৃতি, কত আনন্দ, কত বেদনা। সবটাই স্মৃতিবন্দি হয়ে আছে, তা অবশ্য নয়। অনেক কিছুই হারিয়

এ কেমন নিষ্ঠুরতা? দুলাল মাহমুদ

ছবি
রাজ্য নেই। রাজত্বও নেই। আছে কেবলই তীব্র পরিহাস। আর এমন পরিহাসের সামনে মুখোমুখি হওয়া এক ধরনের নিষ্ঠুরতাই মনে হয়। হিংস্র ষাঁড়ের সামনে অসহায় কাউকে ছেড়ে দেওয়ার মতো অনেকটা। এতে হয়তো কেউ কেউ জান্তব উল্লাস পেতে পারেন। কিন্তু তাতে কোনো বীরত্ব নেই। কিন্তু ফিফার মতো একটি প্রতিষ্ঠান কেন এখনো এ ধরনের রেওয়াজ চালু রেখেছে,  সেটা আমার অন্তত বোধগম্য নয়। বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো একটি আসরে এমন তামাসা অন্তত মানায় না। বলছিলাম, তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের কথা। শিরোপার লড়াইয়ে থাকা দু’টি দল সব কিছু হারিয়ে যখন বিধ্বস্ত, বিষণ্ন, বিপন্ন, তখন তাদেরকে গুরুত্বহীন একটি ম্যাচে খেলতে বাধ্য করার মধ্যে কী আনন্দ থাকতে পারে? যদিও বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু থেকে এই ধারা চলে আসছে। তখনকার প্রেক্ষাপটে এবং চিন্তা-ভাবনায় এটিকে হয়তো যথাযথ মনে হয়েছে। কারণ, তখন তো মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণার রেশ কাটানো যায়নি। সে সময়ে এটিকে শ্রেয়তরই মনে হয়েছে। কালের পরিক্রমায় অনেক কিছুই   তো বদলে গেছে। কত পরিবর্তন-পরিবর্ধন-পরিমার্জন হয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবল যখন শুরু হয়েছিল, তখনকার কথা চিন্তা করুন, আর এখনকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন, কত না পার্থক্য। বদলে গেছে  খেলার ষ্

এখন সময় মেসির, এখন সময় আর্জেন্টিনার / দুলাল মাহমুদ

ছবি
আমাদের শৈশবটা ছিল ফুটবলময়। যে কারণে ফুটবল নিয়েই আমাদের বেড়ে উঠা। আমাদের স্বপ্ন দেখা। তখন ঢাকার ফুটবলের যে রমরমা ছিল, তা এখন কল্পনাই করা যায় না। শুধু এটুকু বলা যায়, বিশ্বকাপ ফুটবল এলে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনাকে নিয়ে যে মাতামাতি, তারচেয়েও বেশি ছিল মোহামেডান এবং আবাহনীকে নিয়ে উন্মাদনা। সঙ্গত কারণে ফুটবল থেকে আমাদের দূরে থাকার সুযোগ ছিল না। ফুটবলেই সঁপে দিয়েছিলাম মন-প্রাণ। ঢাকার ফুটবলের বাইরে বিশ্ব ফুটবলের যেটুকু টুকরো টুকরো স্পন্দন আমরা টের পেতাম, তার বেশিরভাগই কালো মানিক পেলে আর ব্রাজিলকে কেন্দ্র করে। কী কারণে পেলে ও ব্রাজিল বুকের মরমে পৌঁছে যায়, সেটা গভীরভাবে তলিয়ে দেখিনি। তা বোধকরি অনুভবের ব্যাপার। আমাদের বয়সে ব্রাজিল ছাড়া আর কোনো দল মনোযোগ কাড়তে পারেনি। পরবর্তীতে ব্যক্তিগত ও দলীয় ক্রীড়াশৈলী দিয়ে অনেক ফুটবলার ও দেশ আলোচনায় উঠে এসেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে ব্রাজিলের পর সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। লাতিন ঘরানার এই দুই দেশই হয়ে উঠেছে সবার প্রিয়। আসলে ভালো লাগা আর ভালোবাসার ব্যাপার কারো কোনো হাত থাকে না। কীভাবে কীভাবে যেন হয়ে যায়। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটা অদ্ভুত

বেবি, ডোন্ট ইউ ক্রাই / দুলাল মাহমুদ

ছবি
কাঁদছে ব্রাজিল। কাঁদছে দুনিয়াব্যাপী সাম্বার অনুরাগীরা। সুন্দরীতমা, তুমিও কাঁদছো। সবাইকে ছাপিয়ে কেন জানি তোমার কান্নাটাই আমার বুকে সমুদ্রের ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ছে। আমি একটুও সইতে পারছি না। কেন পারছি না। জানি না। তোমাকে আমি চিনি না। তোমার নামও জানি না। এ কারণে সুন্দরীতমা বলেই তোমাকে সম্বোধন করলাম। রাগ করো না কিন্তু। আমি তো যা হোক তোমাকে এক পলক হলেও দেখতে পেয়েছি। দেখেছি তোমার মুখ। তোমার অভিব্যক্তিও। কি সুন্দর করে তুমি সেজে এসেছো। তোমার বাহারি ক্যাপ, তোমার কানের দুল, তোমার গলার চেইন, তোমার সোনালি চুল, তোমার কাজলটানা ভ্রু, তোমার লিপষ্টিক রাঙানো ওষ্ঠজোড়া তোমাকে করে তুলেছে আকর্ষক। তুমি যেন হলুদ, সবুজ আর নীল রঙের একটুকরো রঙধনু। তুমি যেন ব্রাজিলের জাতীয় পতাকা। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, আমি যেন ভালোবাসার ব্রাজিলকে দেখতে পাচ্ছি। তোমার গণ্ডদেশ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুতে অনুধাবন করতে পারছি ব্রাজিলের মর্মযাতনাও। তোমার ঠোঁটে, তোমার চিবুকে, তোমার মুখাবয়বে যে কষ্ট, যে যন্ত্রণা, যে বেদনার প্রতিচ্ছবি, তাতে স্পষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্বপ্ন ভঙের মর্মস্পর্শী যাতনা। আমি তোমার মর্মবেদনা বুঝতে পারলেও তুমি তো আমাকে একদমই জানতে

নেইমারকে নিয়ে কেন এই হাহাকার? দুলাল মাহমুদ

ছবি
বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধনী দিনে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ দেখেই মনে হয়েছিল, এই ব্রাজিল সেই ব্রাজিল নয়। ইতোমধ্যে সেমি-ফাইনালে উঠলেও যে ব্রাজিলকে বুকের মধ্যে ঠাঁই দিয়েছি, তাকে এখনও খুঁজে পাইনি। কেন পাইনি, এটা তো সহজেই অনুধাবন করা যায়। ব্রাজিলের খেলায় ছিল না সুর-ছন্দ-সুষমা। কেমন যেন একটা কাঠ-খোট্টা দল মনে হয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ফাউল করা দলটির নাম ব্রাজিল! কলম্বিয়ার বিপক্ষে খেলায় তো তাদের ফাউলের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এ কোন ব্রাজিল? এমন ব্রাজিলের কথা তো কখনো ভাবিনি। পেলে-ডিডি-গ্যারিঞ্চার খেলা দেখিনি। না দেখলেও ইতিহাসের পাতায় এই শিল্পীদের যে বয়ান পাওয়া যায়, তাতেই মনের মধ্যে একটা ছাপ পড়ে যায়। তাতে কিছুটা অতিশয়োক্তি থাকলেও অনুভবটুকু তো মিথ্যে ছিল না। তাছাড়া তাঁরা যে সুন্দর ফুটবলের পথপ্রদর্শক ছিলেন, তার নমুনা তো আমরা পরবর্তীকালে দেখতে পেয়েছি। আশির দশকের শুরু থেকে যে ব্রাজিলকে দেখেছি, তার সঙ্গে কল্পনার ব্রাজিলের খুব একটা অমিল ছিল না। ছন্দময় ড্রিবলিং, হৃদয়ছোঁয়া পাস, চোখজুড়ানো স্পটকিকের কোনো খামতি ছিল না। খেলার প্রতি মুহুর্তই আবিষ্ট করে রাখতো। খেল

হামেস রদ্রিগেজ কি সোনার বুট পাবেন? দুলাল মাহমুদ

ছবি
বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর আগে ‘পোষ্টার বয়’ হিসেবে আলোচনায় উঠে আসেন আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং ব্রাজিলের নেইমার। ক্লাব ফুটবলের পারফরম্যান্স আর ব্যক্তিগত ক্যারিশমার কারণে সবার মনোযোগ কেড়ে নেন এই তিন ফুটবলার। তিনজনই বিশ্বের অন্যতম সেরা লিগ ‘লা লিগা’য় খেলেন। বার্সেলোনায় মেসি ও নেইমার এবং রিয়াল মাদ্রিদে রোনাল্ডো। ২০০৯ সালে ‘ব্যালন ডি’অর’ ও ‘ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’, ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালে ‘ফিফা ব্যালন ডি’অর’ এবং ২০১০-১১ সালে ‘ইউফা বেষ্ট প্লেয়ার ইন ইউরোপ অ্যাওয়ার্ড’ জয় করে সবাইকে ছাড়িয়ে যান ২৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি। ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতায় বার্সেলোনার অল-টাইম টপ স্কোরার তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা চারবার সর্বাধিক গোলদাতা এবং টানা চার বছর হ্যাটট্টিক করার একমাত্র রেকর্ড তাঁর। লা লিগা, ইউফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তিনি সর্বাধিক গোলদাতা। ২০০৫ সালে ফিফা অনূর্ধ-২০ বিশ্বকাপ এবং ২০০৮ সালে অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী আর্জেন্টিনা দলের অন্যতম খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। আর্জেন্টিনার হয়ে ৪২টি গোল করেছেন এই ফরোয়ার্ড। এছাড়া তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে

বাংলা ক্রিকেট সাহিত্য এবং শঙ্করীপ্রসাদ বসু / দুলাল মাহমুদ

ছবি
 (পরলোকগত বাংলা ক্রিকেট সাহিত্যের জনক শঙ্করীপ্রসাদ বসুকে নিয়ে ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাক্ষিক ‘ক্রীড়াজগত’ পত্রিকায় প্রকাশিত লেখা।) ক্রিকেট কি শুধু পরিসংখ্যানের খেলা? পরিসংখ্যানে কতটুকু সত্য থাকে? কোনো মহাকাব্যিক ইনিংস কি অনুভব করা যাবে পরিসংখ্যান দেখে? ১৯৬০ সালে ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টাই টেস্টের পরতে পরতে যে উত্তেজনা ও অবিশ্বাস্য নাটকীয়ত স্নায়ুকে বিকল করে দিয়েছিল, তা কি ফুটে ওঠে পরিসংখ্যানের কঙ্কালে? ক্রিকেটের বর্ণাঢ্য চরিত্র ‘বুড়ো শয়তান’ খ্যাত ডব্লিউ জি গ্রেস কিংবা সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে সম্মানিত ডন ব্রাডম্যানকে পরিসংখ্যানে কতটুকু চেনা যায়? চেনা যায় না বলেই যুগে যুগে ক্রিকেট লিখিয়েরা তাদের মিষ্টি-মধুর কলমে পরিবেশন করেছেন ক্রিকেটের রূপ-রস-সৌন্দর্য। তাদের কলমের আঁচড়ে স্মরণীয় হয়ে আছে মহান ক্রিকেটারদের অমর কীর্তি আর মহাকাব্যিক ইনিংসের লাবণ্য ও সুষমা। সাহিত্যের অধ্যাপক হীরেন চট্টোপাধ্যায় যেমনটি বলেছেন : ‘আসলে ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে লেখা মানে যে তার তথ্য ও পরিসংখ্যান পেশ করা নয়, তাকে যে প্রাণবন্ত করে তোলা যায়, একটি সুন্দর ইনিংস যে মোৎজার্টের একটি সিম্ফ

ফুটবলে দেখি পৃথিবীর মুখ / দুলাল মাহমুদ

ছবি
বিশ্বকাপ ফুটবল কেবলই একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, এরসঙ্গে জড়িয়ে আছে এই পৃথিবীর মানুষের জাগতিক নানান কর্মকা-। কত ভাবেই, কত রূপেই, কত অভিব্যক্তিতে বিশ্বকাপ ফুটবল আমাদের কাছে উদ্ভাসিত হয়। আমরা নানান রঙে, নানান বিভঙ্গে, নানান দৃষ্টিতে তা অবলোকন করি। বিশ্বকাপ ফুটবলের এক একটি আসর বদলে দেয় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আমাদের চিন্তাÑভাবনা, আমাদের মনোজগত। আমরা বিস্মিত হই, বিমুগ্ধ হই। কখন-সখনও বিচলিত হই। এই মহোৎসবে আমরা শুধু ফুটবল খেলাই দেখি না, সেইসঙ্গে দেখি আবেগ-উচ্ছ্বাস, আনন্দ-উৎসব, হাসি-কান্না, ব্যথা-বেদনা। দেখি নানান রকম অনুভব-অনুভূতি, বেশ-ভূষা, সাজ-সজ্জা, সুন্দর-সৌন্দর্য, আচারÑআচরণ, ভালোলাগা-ভালোবাসা। দেখি কত রকম দেশ, কত মানুষ, কত তার সংস্কৃতি। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, এই দুনিয়াটা কত বিশাল, কত বর্ণিল, কত মাধুর্যময়। কত তার রূপ, কত তার রস, কত তার গন্ধ। আছে বৈচিত্রময় মানুষ, বৈচিত্রময় রঙ, বৈচিত্রময় বর্ণ। ভাষার বৈচিত্র্য, ভাবের বৈচিত্র্য, জীবনের বৈচিত্র্য। আমরা দেখতে পাই ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর-মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবীয়, আফ্রিকা, এশিয়ার বহুমুখি জীবনের ভিন্নতা ও স্পন্দন। আমার মতো যাঁদের নির্দিষ্ট পর