পোস্টগুলি

জুন ১৯, ২০১১ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মাহুতটুলির নুরুল ইসলাম নান্না/ দুলাল মাহমুদ

ঢাকার নবাবদের মাধ্যমে হকির প্রচলন ঘটলেও হকির সূতিকাগার বলা যায় আরমানিটোলা গভর্নমেন্ট হাইস্কুলকে। এই স্কুলকে কেন্দ্র করে প্রসার ও বিকশিত হয়েছে হকি খেলা। সঙ্গত কারণে তার ছোঁয়া লাগে স্কুল সংলগ্ন আশপাশের এলাকায়। সেই ব্রিটিশ আমলে ঢাকা শহরের পরিসর ছিল খুবই সীমিত। মাহুতটুলি ছিল ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই এলাকায় বসবাসরত বালক ও কিশোরদের বড় একটি অংশ পড়তো আরমানিটোলা স্কুলে। স্কুল ও বাসার মধ্যে একদমই দূরত্ব না থাকায় আরমানিটোলা মাঠে তাদের সার্বক্ষণিক বিনোদনের অংশ হয়ে ওঠে হকি খেলা। অন্যদের মতো মাহুতটুলির একটি পরিবারের ছেলেরাও পড়তো আরমানিটোলা স্কুলে। আরমানিটোলা স্কুলে হকি খেলায় দীক্ষা পেয়ে তারা নিজেরাই গড়ে তোলে মাহুতটুলি ক্লাব। সেই ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠে এ ক্লাবটি। হকিকে জনপ্রিয় করতে এ ক্লাবের ভূমিকাও কোনো অংশে কম নয়। আর এই মাহুতটুলি ক্লাবটি গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন মাহুতটুলির যে পরিবার, তাদের ছয় ভাই-ই খেলতেন এই ক্লাবে। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান পর্ব পেরিয়ে এই বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত এ পরিবারটি জাতীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ খেলেছেন ইস্ট পাকিস্তান দল

দুরন্ত গতির কামরুল ইসলাম/ দুলাল মাহমুদ

বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়ের সঙ্গে অল্প যে ক’জন ক্রীড়াবিদের নাম জড়িয়ে আছে, তাদের অন্যতম হলেন কামরুল ইসলাম। পঞ্চাশ ও ষাট দশকে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে অ্যাথলেট হিসেবে তার সাফল্য ছিল আলোচিত ঘটনা। তিনি শুধু কৃতিত্ব দিয়ে লাইম লাইটে উঠে আসেননি, তিনি পথ দেখিয়েছেন অনেক তরুণ অ্যাথলেটকেও। তাকে অনুসরণ কিংবা অনুকরণ করে উঠে এসেছেন অনেক ক্রীড়াবিদ। তিনি ছিলেন অনেক অ্যাথলেটের রোল-মডেল। কামরুল ইসলাম এমন একটা পরিবেশ থেকে অ্যাথলেট হিসেবে উঠে এসেছেন, যেখানে খেলাধুলার চর্চা ছিল; তবে জাতীয় পর্যায়ে ছিল না কোনো প্রতিনিধিত্ব। খেলাধুলায় আগ্রহ থাকলেও ছিল না পারিবারিক উজ্জ্বলতা। খেলাধুলার ঐতিহ্যবিহীন একটি পরিবেশ থেকে এসে জাতীয় পর্যায়ে অ্যাথলেট হিসেবে খ্যাতির চূড়ায় ওঠা সহজাত প্রতিভা ছাড়া সম্ভব ছিল না। জন্মগত প্রতিভা নিয়ে আসা এই অ্যাথলেট তার নৈপুণ্যের ঝিলিক দিয়ে ধাঁধিয়ে দিয়েছেন অ্যাথলেটিকস অঙ্গনকে। কামরুল ইসলাম শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই খ্যাতি অর্জন করেননি, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। সফল ক্রীড়াবিদ, সফল সংগঠক, সফল অভিভাবকও তিনি। সেদিন গুলশানে তার সাজানো-গোছানো বাসভবনে আলা

স্টাইলিশ অ্যাথলেট ছিলেন আরজান খান/ দুলাল মাহমুদ

‘সেই কিশোর বয়সেই খেলাধুলার প্রতি একটা সহজাত আকর্ষণ ছিল। তার টানে ছুটে যেতাম খেলার মাঠে। বাড়তি আকর্ষণ ছিল মামাতো ভাই সেন্টু। তিনি তখন মুন্সীগঞ্জ স্কুলের অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়ন। তার ক্যারিশমাই আলাদা। তাকে সবাই সমীহ করেন। তার দিকে তাকায় আলাদা দৃষ্টিতে। এতে আমারও খুব আনন্দ ও গর্ব হতো। নিজের ভাই বলে কথা। সঙ্গত কারণে তাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করার ব্যাপারে আমি ছিলাম এক ডিগ্রি ওপরে। জান-প্রাণ দিয়ে তাকে সহযোগিতা করতাম। তার ফাই-ফরমাশ খাটতে বিন্দুমাত্র আপত্তি করতাম না। আমার খায়-খাতিরে তিনি যারপরনাই সšত্তষ্ট ও মুগ্ধ। প্রতিদানে তিনি আমাকে স্কুলের রিলে দলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ তো আমার জন্য মেঘ না চাইতেই জল পাওয়ার মতো ঘটনা। আমি তো আর অ্যাথলেট নই। কখনো প্রতিযোগিতামূলক আসরে অংশ নেয়ার প্রশ্নই আসে না। এমন একটা অপ্রত্যাশিত প্রতিশ্রুতি পেয়ে আমি খুশিতে ডগমগ। সে সময় মুন্সীগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অনেক দর্শক সমাগম হতো। দল বেঁধে লোকজন উপস্থিত হতেন। আমার মা-খালারাও থাকতেন। প্রতিযোগিতার দিন বুক ভরা প্রত্যাশা নিয়ে হাজির হই। আমি সে সময় হাফপ্যান্ট পরতাম না। পাজামা পরতাম। সেদি

গোল করাই ছিল সেন্টার ফরোয়ার্ড শওকতের নেশা/ দুলাল মাহমুদ

একটা সময় তিনি ছিলেন অনেকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তার খেলা দেখার জন্য দর্শকরা ছুটে আসতেন স্টেডিয়ামে। তাকে দেখলে আলোড়িত হতেন সমর্থকরা। তার পায়ে যখন বল যেত, সবাই রুদ্ধশ্বাস নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন গোলের। তার কাছে বল যাওয়ার অর্থ একটাই- গোল। আর ফুটবল তো গোলেরই খেলা। গোল দেয়াটা তার কাছে ছিল সবচেয়ে সহজ কাজের একটি। ফুটবল ক্যারিয়ারে কত গোল যে করেছেন, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তাকে আবার মাঠের অনেকেই অপছন্দ করতেন। এই অপছন্দের তালিকায় আছেন প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় ও গোলরক্ষকরা। তাকে রুখে দেয়া তাদের জন্য ছিল দুরূহ কাজ। এ কারণে তাকে দেখলে হার্টবিট বেড়ে যেত প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের। তুখোড় সেন্টার ফরোয়ার্ড ছিলেন তিনি। দাপটের সঙ্গে কাঁপিয়েছেন ফুটবল মাঠ। অথচ ফুটবলের শহর হিসেবে পরিচিত ঝলমলে এই ঢাকা নগরী তাকে মনে রাখেনি। সময়ের পলেস্তরায় আড়াল পড়ে গেছেন তিনি। অবশ্য তার সমসাময়িক খেলোয়াড় তো দূরে থাক, তার খেলা দেখেছেন- এমন দর্শকও বিরল। যে কারণে আজ অস্তমিত তার গৌরবরশ্মি। কিন্তু তার কীর্তি তো হারিয়ে যাবার নয়। সময়ের ধুলো ঝেড়ে খুঁজে বের করা সম্ভব হয় তাকে। দেশের এক প্রান্তে তিনি যাপন করছেন নিভৃত জীবন। বঙ্গোপসাগর সংলগ

এক সময়ের দুর্ধর্ষ সেন্টার হাফ মোহামেডানের কামরু/ দুলাল মাহমুদ

এখন তার বয়স ৭৬। যদিও এ বয়সে অধিকাংশ ব্যক্তিই অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়েন। বয়সের ভারে হয়ে যান ন্যুব্জ। কিন্তু তিনি এখনো সচল, সজীব। বয়সের কাছে তিনি হার মানেননি। তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন জীবনকে। চারপাশের রঙ-রূপ-রস ধরা দেয় তার প্রবীণ চোখে। জীবনকে নিয়ে তার অনেক প্রত্যাশা। যদিও তার দেহে ছাপ ফেলেছে সময়ের বলিরেখা। বিরল হয়ে যাওয়া শুভ্র কেশরাজি, ‌যত্ম করে ছাঁট দেয়া চাপদাড়ি দেখে অনুধাবন করার উপায় নেই যে, এক সময় তিনি ছিলেন ফুটবল মাঠের রীতিমত ত্রাস। সন্ত্রস্ত করে রাখতেন মাঠ ও পরিপার্শ্ব। রাফ অ্যান্ড টাফ ফুটবলারের প্রতিমূর্তি ছিলেন তিনি। তাকে সামনে দেখলে কেঁপে উঠতো প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডদের বুক। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই রক্ষণভাগের অতন্দ্র প্রহরী। তাকে ফাঁকি দিয়ে বল নিয়ে যাওয়া বিনা পাসপোর্র্টে সীমান্ত অতিক্রম করার মতই ছিল দুরূহ। ফিজিক্যাল ফিটনেস ছিল তার প্রধান সম্পদ। ছিলেন সুঠাম, সুদেহী ও সবল। পরিশ্রমী ছিলেন। আর ছিল অসম্ভব জেদ ও সাহস। যে কাউকে যে কোনো অবস্থায় চ্যালেঞ্জ জানাতে একটুও দ্বিধা করতেন না। সবচেয়ে বড় কথা, কাউকে প্রতিপক্ষই মনে করতেন না তিনি। মনোভাবটা ছিল এমন- রাজত্ব আমার, আমি আবার কাকে পরোয়া করতে

ফুটবলে প্রথম বাঙালি স্টপার মোবাশ্বার/ দুলাল মাহমুদ

১৯৫৮ সাল ছিল এ অঞ্চলের ফুটবলের জন্য একটি মাইলফলক। সনাতন ধারায় চলে আসা পূর্ব বাংলার ফুটবলে লাগে আধুনিকতার ছোঁয়া। আর এ পরিবর্তন আনেন স্কটিশ ফুটবল কোচ জন ম্যাকব্রাইড। তিনি ছিলেন পাকিস্তানে আসা প্রথম কোনো বিদেশী ফুটবল কোচ। তারই কারণে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে ৬ জন বাঙালি ফুটবলার সুযোগ পান পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলে। ১৯৫৮ সালে টোকিও এশিয়ান গেমসে নবী চৌধুরীর নেতৃত্বে অংশ নেয়া ফুটবলাররা হলেন মারী, আশরাফ, কবীর, মঞ্জুর হাসান মিন্টু ও গজনবী। এ ঘটনা আলোড়িত করে বাঙালি ফুটবলারদের। পূর্ব পাকিস্তানের ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য ম্যাকব্রাইডকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নিয়ে আসে ইস্ট পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশন। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাছাই করা ১৫ থেকে ২০ জন ফুটবলার তার অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। পাকিস্তান জাতীয় দলে খেলতে না পারলেও এই প্রশিক্ষণে যারা অংশ নিয়েছিলেন, তারা ছিলেন বেশ দক্ষ ফুটবলার। ফুটবলার হিসেবে তারা আলাদা স্থান করে নেন। তাদের অন্যতম হলেন কাজী মোবাশ্বার হোসেন। জন ম্যাকব্রাইড শুধু বাঙালি ফুটবলারদের নতুন পথের সন্ধান দেননি, একই সঙ্গে খেলার ধারায় এনেছেন পরিবর্তন। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এ অঞ্চলে খেলা হতো দুই

হকির অন্যতম সেরা রাইট হাফ মোহাম্মদ মহসিন/ দুলাল মাহমুদ

পঞ্চাশ ও ষাট দশক ছিল হকিতে পাকিস্তানের স্বর্ণযুগের একটি অধ্যায়। সে সময় পাকিস্তানের জাতীয় দল তো বটেই, যে কোনো পর্যায়ের দলের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের পেরে ওঠা সম্ভব ছিল না। তারপরও পাকিস্তানের কোনো দলের সঙ্গে খেলার সময় পূর্ব পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের বুকে থাকতো অন্য রকম অনুভূতি। এর কারণ ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক। একই দেশ হওয়া সত্ত্বেও শোষণ-বঞ্চনা-লাঞ্চনা ও ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যবধানটা ক্রমশ বাড়তে থাকে। তার প্রতিফলন দেখা যায় খেলার মাঠে। পাকিস্তান হকি দলের সঙ্গে খেলার সময় পূর্ব পাকিস্তানের মনোভাব থাকতো তাদের যে কোনোভাবেই হোক রুখে দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের স্ট্রাটেজি ছিল ডিফেন্সিভ খেলা। গোল করার চেয়ে গোল করতে না দেয়াটাই ছিল এ নীতির মূল উদ্দেশ্য। আর এক্ষেত্রে সাফল্য দেখান আবদুস সাদেক, ইব্রাহীম সাবের ও মোহাম্মদ মহসীনের সমন্বয়ে গড়া দুর্ধর্ষ রক্ষণভাগ। সেন্টার হাফে সাদেক, লেফট হাফে সাবের ও রাইট হাফে খেলতেন মহসিন। ‘ত্রিরত্ম’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া রক্ষণভাগের এই তিন খেলোয়াড় গড়ে তুলতেন দুর্ভেদ্য দেয়াল। পাকিস্তানের মত দলও তাদের ফাঁকি দিয়ে সহজে গোল