পোস্টগুলি

জুন ২২, ২০১৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ইউরোপ না লাতিন? দুলাল মাহমুদ

ছবি
প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের একদম শুরু থেকেই দুই ভাগে বিভক্ত ফুটবল খেলা। একদিকে লাতিন আমেরিকা। অন্যদিকে ইউরোপ। দুই ঘরানার ফুটবলের দর্শনটা একদমই বিপরীতমুখী। লাতিনরা তো ঐতিহ্যগতভাবে মুক্তছন্দের কবিতার মতো। ফুটবলাররা খেলার মাঠে যেন পাখি হয়ে উড়তে চায়। বল পায়ে পড়লেই ছড়িয়ে দিতে থাকে নান্দনিক সৌন্দর্যের সৌরভ। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ঝলক দিয়ে জয় করে নেয় ফুটবল অনুরাগীদের হৃদয়। আক্রমণ গড়ে তোলে অনায়াস দক্ষতায়। নিজের খেলাটাই খেলে মনের আনন্দে। প্রতিপক্ষের কৌশল ও চাতুর্যতা নিয়ে খুব একটা মাথায় ঘামায় না। যে কারণে কাউন্টার অ্যাটাকে বিপদেও পড়ে যায়। এটাকে তারা আমল দিতে রাজী নয়। লাতিনদের জাতিগত বৈশিষ্ট্যই এমন। যা কিছু করে হৃদয় দিয়ে করে। আবেগটাকে সংবরণ করতে পারে না। সহজাতভাবেই ফুটবল মাঠে তার প্রতিফলন দেখা যায়। পক্ষান্তরে, ইউরোপের ফুটবলটা হচ্ছে হিসেবি খেলা। এখানে মনের কোনো কারবার নেই। শৃঙ্খলা মেনে মেপে মেপে খেলতে হয়। খেলার পরিমাপ করা হয় জয়-পরাজয় দিয়ে। জয়ের জন্য সব রকম কৌশলই প্রয়োগ করতে দ্বিধা করে না। প্রতিপক্ষকে অবাধে ছুটে চলার কোনো রকম সুযোগই দিতে চায় না। দলগত ক্রীড়াশৈলী দিয়ে খেলায় আধিপত্য বিস্তার করে। এত বেশি স

রোনাল্ডো ইউসেবিও হতে পারলেন না / দুলাল মাহমুদ

ছবি
ব্রাজিলকে হারিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুর্বল হয়ে পড়ে এক সময়ের ঔপনিবেশিক শক্তি পর্তুগাল। এরপর আর তারা ফিরে পায়নি সেই আধিপত্য, সেই দাপট, সেই আগ্রাসী মনোভাব। সেও তো কম দিন হলো না। অন্য সব কিছু বাদ দিলেও ভূ-পর্যটক ভাস্কো দা গামার এই দেশটির নিশ্চয়ই এখন সবচেয়ে বড় দুঃখ হয়, বিশ্বকাপ ফুটবলে নিজেদের ব্যর্থতায়। হওয়ারই কথা। তাদের সাবেক উপনিবেশ ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফুটবলকে অনেকটাই বানিয়ে ফেলেছে নিজেদের বাড়ি-ঘর। আর ‘প্রভু’ হয়েও তাদের কিনা গাইতে হয় বঞ্চনার গান। এরচেয়ে কষ্ট, এরচেয়ে দুর্ভাগ্য, এরচেয়ে যন্ত্রণা আর কী হতে পারে? তাছাড়া তাদের জন্য এটা তো কম অপমানজনক নয় যে, বিশ্বকাপ ফুটবলের শুরু থেকেই খেলছে ব্রাজিল। অথচ তাদের অভিষেক হয় ১৯৬৬ সালে। অভিষেক হওয়ার পর ব্যর্থতার সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে থাকে পর্তুগিজরা। ১৯৭০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারেনি। এরপর ১৯৮৬ সালে করলেও ১৯৯০ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কোয়ালিফাই করতে পারেনি। এরপর অবশ্য নিয়মিত খেলছে। কিন্তু তাতেও খুব একটা ধার নেই। আজ অব্দি বড় কোনো শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি। পর্তুগাল বিশ্ব ফুটবলে তেমন সাড়া জাগাতে না পারলে

কখনো আনন্দ কখনো বিষাদ / দুলাল মাহমুদ

ছবি
এক একটি বিশ্বকাপ মনের আকাশে কতভাবেই না রঙ ছড়ায়। কোনো রঙ আনন্দের। কোনো রঙ বিষাদের। বিশ্বকাপ ফুটবলে কলম্বিয়া নামক দেশটির কথা মনে হলে একই সঙ্গে ভেসে উঠে দু’টি মুখ। একজন কার্লোস ভালদেরামা। অপরজন আন্দ্রেস এসকোবার। ভালদেরামা নজর কেড়েছিলেন তাঁর আফ্রিকান চুলের কারণে। ঝাঁকড়া কোকড়ানো চুলগুলো কত রঙেই না রাঙানো হতো। তবে সোনালি রঙটাই বোধহয় বেশি পছন্দ করতেন তিনি। বাহারি এই লম্বা চুল যখন বাতাসে উড়তো, তখন তাতে ঢেউ খেলে যেতো অপরূপ শোভা। বৈচিত্র্যময় চুলের কারণে সবার দৃষ্টি কাড়লেও ফুটবলার হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। মধ্যমাঠের কুশলী এই খেলোয়াড় নিখুঁত পাস, বল যোগান দেওয়া আর খুব বেশি না দৌঁড়িয়ে কৌশল ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিতেন। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলার গৌরব তাঁর। কলম্বিয়ার ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে তাঁকে বিবেচনা করা হয়।  বিশ্বকাপ ফুটবলে কলম্বিয়ার বড় কোনো সাফল্য নেই। নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে লাতিন ঘরানার দলটি ১৯৬২ সালে প্রথম চূড়ান্ত পর্বে খেলে। এরপর দীর্ঘ দিন কোয়ালিফাই করতে পারেনি। ১৯৯০ সালের পুনরায় খেলার সুযোগ পায়। ভালদেরামার নেতৃত্বে দলটিতে ছিলে

সুন্দরের দেশে অসুন্দর ফুটবল! দুলাল মাহমুদ

ছবি
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ‘মোনালিসা’-র হাসির রহস্য আজও উদঘাটন করা যায়নি। কিন্তু আমাদের হৃদয়জুড়ে আছেন ভিঞ্চি এবং তাঁর আঁকা অমলিন এই সৃষ্টি। মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর গড়া চোখজুড়ানো সব ভাস্বর্যের কোনো তুলনা হয় না। অমর ও অবিনশ্বর কীর্তি। যুগে যুগে তা মিটিয়ে আসছে সৌন্দর্যপিপাসুদের তৃষ্ণা। সুন্দরের সংজ্ঞা কি আমরা হয়তো ঠিকমতো জানি না। কিন্তু সুন্দর বললেই আমরা বুঝতে পারি ভিঞ্চির চিত্রকলা, অ্যাঞ্জেলোর ভাস্বর্য। ইতালির বুকের মধ্যে ছড়িয়ে আছে সুন্দরের অনুপম সব নিদর্শন। পুরো দেশটি দেখে মনে হয়, কোনো শিল্পী যেন মনের মাধুরী মিশিয়ে সুরে, ছন্দে ও সৌন্দর্যে গড়ে তুলেছেন। ফ্লোরেন্স, মিলান, ভেনিস যেন সুন্দরের এক একটি উপত্যকা। ফ্যাশন প্যারেডে দেখা যায় কত সুন্দর, কত স্মার্ট, কত ঝলমলে সব তরুণ-তরুণী। যেন স্বর্গের অপ্সরা-অপ্সরী। সেই কবে থেকে সিম্ফনি, কনসার্তো, সোনাতা’র সুর করে দেয় উন্মনা। চিত্রকলা, সংগীত, সাহিত্যের মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে যে দেশটি, সৌন্দর্যের প্রতি যাদের পরিপূর্ণ নিবেদন, সেই দেশটির ফুটবল খেলার ইতিহাস দেখলে একদমই বোঝার উপায় নেই তারা সুন্দরের উপাসক। বরং স্বৈরচারী বেনিতো মুসোলিনি আর ফুটবল যেন একাকার হয়ে যায়।

সুন্দরের কি মৃত্যু হয়? দুলাল মাহমুদ

ছবি
পৃথিবীটা বড় অদ্ভুত। আজ যাকে গভীরভাবে ভালোবেসে কাছে ডেকে নিতে একটুও দ্বিধা হয় না, কালই তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে সরিয়ে দেয় দূরে। যেন তাকে চেনেই না! কী অবাক করা ব্যাপার? জীবন কি কোনো অঙ্ক? একটু এদিক-সেদিক হলেই সব কিছুই এলোমেলো হয়ে যাবে? বদলে যাবে আচার-আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, ভালো লাগা-মন্দ লাগা, চাওয়া-পাওয়ার মাপকাঠি। এবারের বিশ্বকাপে ফুটবলে এমন বৈরী পরিস্থিতির শিকার স্পেন। কী নির্মমভাবেই না তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের কাছে বিধ্বস্ত এবং চিলির কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে তাদের বিদায় হয়ে যাবার পর সমস্বরে বলে দেওয়া হচ্ছে, মৃত্যু হয়েছে স্প্যনিশ ঘরানার ফুটবলশৈলী ‘তিকি-তাকা’র। ঔপনিবেশিক শক্তি স্পেনকে নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো ভালো লাগা নেই। কিন্তু যাদের যেটুকু পাওনা, সেটুকু দিতে কার্পণ্য বোধ করা উচিত না। স্প্যানিশ গিটারের সুরে যেমন মুগ্ধ হই, তেমনিভাবে বিশ্ব ফুটবলের স্পেনের অবদানের কথা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। ফুটবলকে সুরভিত করার ক্ষেত্রে স্প্যানিশদের ভূমিকা মোটেও হেলাফেলার নয়। এ কথা তো নিঃসন্দেহে বলা যায়, বিশ্ব সেরা ফুটবল লিগ ‘লা লিগা’। ১৯২৯ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে জনপ্রিয় এই প্রিমিয়ার

আফ্রিকান গর্জন আছে, কিন্তু ......দুলাল মাহমুদ

ছবি
কেন জানি না, আফ্রিকানদের প্রতি আলাদা একটা দুর্বলতা অনুভব করি। কালো কালো মানুষদের ইতিহাস কষ্টের ইতিহাস, যন্ত্রণার ইতিহাস, বঞ্চনার ইতিহাস। সেই ইতিহাসে লেগে আছে কত অশ্রু, কত বেদনা, কত রক্ত। অথচ আফ্রিকাকে মনে করা হয় মানবজাতির আতুরঘর হিসেবে। আধুনিক মানুষের উৎপত্তি, রূপান্তর ও বিকাশ তো বৈচিত্র্যময় এই মহাদেশকে কেন্দ্র করে। শুধু কি তাই? সভ্য পৃথিবী গড়ে তোলার পেছনে আফ্রিকানদের ত্যাগ-তিতিক্ষাই সবচেয়ে বেশি। আফ্রিকানদের কাছে মানবজাতির অনেক ঋণ। আর এই আফ্রিকানরাই সবচেয়ে অবহেলিত, সবচেয়ে অনাদৃত, সবচেয়ে উপেক্ষিত। এই অনাদর, এই অবহেলা, এই উপেক্ষা বুকের মধ্যে কষ্ট হয়ে বাজে। সে কারণে আফ্রিকানরা কোথাও সফল হলে দূর থেকে খুশি হই। মনে মনে বাহবা দেই। বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই শুনতে পাই আফ্রিকান সিংহের গর্জন। মনে হয়, এবার বোধহয় কিছু একটা হয়ে যাবে। মনে-প্রাণে কামনা করি, জয় হোক কালো মানুষের। জয় হোক আফ্রিকার। জয় হোক মানবতার। কিন্তু প্রতিবারই ভুলি আশার ছলনে। এত তর্জন, গর্জন কোথায় যেন হারিয়ে যায়। বিশ্বকাপ ফুটবলে আফ্রিকার যোগাযোগটা সভ্যতার অন্যতম পাদপীঠ মিশরের মাধ্যমে। ১৯৩৪ সালে ইতালি বিশ্বকাপে অংশ নেয় মিশর। এরপর ১৯৬৬ সাল

এশিয়ানরা কি কেবলই শোভাবর্ধন করবে? দুলাল মাহমুদ

ছবি
এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলে কে সফল হবে কিংবা কে ব্যর্থ হবে, সেটা এখনই বলে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একের পর এক ঘটছে চমকজাগানিয়া ঘটনা। আরো চমকের অপেক্ষায় ফুটবল অনুরাগীরা। এমন একটি অবস্থায় এশিয়ান দলগুলোকে নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। বিশেষ করে, আর্জেন্টিনার সঙ্গে ইরান এবং রাশিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া যে চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছে, তাতে আশার আলো এখনও নিভিয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু অতীতের ইতিহাস আমাদের খুব একটা আশাবাদী করে না। বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা তো দূরে থাকুক, শীর্ষ চার দেশের মধ্যে পৌঁছতে পেরেছে মাত্র একবারই। সেক্ষেত্রে এশিয়ান দেশগুলোকে নিয়ে কতটা আশাবাদী হওয়া যায়? আমরা যদি পেছন ফিরে দেখি, তাহলে আমাদের বুঝতে কিছুটা সুবিধা হবে। এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নেয় ইন্দোনেশিয়া। ১৯৩৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে দলটি অংশ নেয় ‘ডাচ ইষ্ট ইন্ডিজ’ নামে। তখন দেশটি ছিল নেদারল্যান্ডসের অধীন। এশিয়ার প্রথম স্বাধীন দেশ হিসেবে ১৯৫০ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় ভারত। কিন্তু সে সুযোগ তারা হেলায় হাতছাড়া করে। অর্থনৈতিক কারণে তাতে তারা অংশ নেয়নি। ইতিহাস গড়ার অসাধারণ

‘মৃত্যুগুহা’ থেকেই উজ্জীবনের গান / দুলাল মাহমুদ

ছবি
জগতের আনন্দযঞ্জ বিশ্বকাপ ফুটবলের ব্যাপ্তি, বিস্তার ও বিশালত্ব এত বেশি যে, তা কোনো কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ব্যথা-বেদনা সহ মানবীয় আবেগ-অনুভূতি তো আছেই, কখনো-সখনো মনে হয় জাগতিকতার সীমা ছাড়িয়ে যায় এই মহোৎসব। হয়ে উঠে অতিমানবীয়। যা হার মানায় আমাদের কল্পনাকেও। বাস্তব ক্ষেত্রে আমরা বরাবরই দেখে আসছি শক্তিমানদের জয়জয়কার। তাদের আধিপত্য, তাদের দাপট, তাদের চোখ রাঙানিতে ম্রিয়মাণ থাকতে হয় শক্তিহীনদের। ছলে-বলে-কৌশলে দুনিয়াব্যাপী রাজত্ব করে আসছে এই ভাগ্যবিধাতারা। কোনোভাবেই তাদের চ্যালেঞ্জ জানানোর কথা ভাবাও যায় না। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবল এমন একটি পরিসর, যেখানে জগতের শক্তিমানদের কথিত এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো যায়। এখানে ছোট-বড়, দুর্বল-সবল, শক্তিমান-শক্তিহীন বলে কিছু নেই। এখানে সবাই সমান সমান। নিয়ম-নীতিও সবার জন্য এক ও অভিন্ন। ‘ফেয়ার প্লে’র কারণে প্রকৃতঅর্থে কার কী শক্তি আছে, কী সামর্থ্য আছে, কী সৌন্দর্য আছে, সেটা স্বাভাবিক নিয়মেই অবলোকন করা যায়। ভাবা যায় কোষ্টারিকার কথা? মধ্য আমেরিকার পুচকে একটি দেশ। আয়তনে আমাদের দেশের চেয়েও ছোট। জনসংখ্যা আমাদের তিন ভাগের এক ভাগের মতো হবে। বিশ