পোস্টগুলি

জুন ১২, ২০১১ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ষাট দশকের দুরন্ত গোলকিপার রানা/ দুলাল মাহমুদ

‘আমার মন-প্রাণ জুড়ে ছিল শুধুই ক্রিকেট। কিন্তু ঘটনাচক্রে হয়েছি ফুটবলার। ক্রিকেটার হবো বলে সেই লক্ষ্যে নিজেকে গড়ে তুলতে থাকি। সে সময় থাকতাম মণিপুরপাড়ায়। লেখাপড়ার হাতেখড়ি তেজগাঁও প্রাইমারি স্কুলে। ফার্মগেটের সঙ্গে কলেজ গেটের একটি ক্লাবের মধ্যে নিয়মিত আয়োজিত হতো ক্রিকেট ম্যাচ। খেলা হতো। পাশাপাশি ঝগড়াও। আমি খেলতাম ফার্মগেটের সেভেন বয়েজ ক্লাবে। অল-রাউন্ডার ছিলাম। ক্রিকেটার হিসেবে আলাদা একটা সমীহ পেতাম। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই তেজগাঁও পলিটেকনিক হাইস্কুলে। আমার ক্লাসমেট ছিলেন মঞ্জু। ফুটবল খেলতেন। গোলকিপার ছিলেন। একটু খাটো ছিলেন। এ কারণে একটু দুর্বলতা ছিল। তার সঙ্গে ঘুরতাম। আমার উচ্চতার কারণে চোখে পড়ে যাই গেম টিচার ননী বসাক স্যারের সন্ধানী চোখে। ননী বসাক স্যার ছিলেন দেশসেরা ক্রীড়া সংগঠক, রেফারী ও স্কাউট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। তিনি পকিস্তান স্পোর্টস কন্ট্রোল বোর্ডের বিভিন্ন কোচিং ক্যাম্প পরিচালনা করতেন। স্কুল ও কলেজের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের নিয়ে পরিচালিত হতো এই ক্যাম্প। আমাদের স্কুল দলে গোলকিপিং পজিশনে দুর্বলতা থাকায় তিনি আমাকে ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। কিন্তু আমি মোটেও ফুটবল

ফুটবলের সহজাত শিল্পী রাজশাহীর সামসু/ দুলাল মাহমুদ

ফুটবল খেলাটা যে পারিবারিক ঐতিহ্য ও আকর্ষণের অংশ হতে পারে, তার চমৎকার দৃষ্টান্ত রাজশাহীর মোল্লা পরিবার। একই পরিবারের সাত ভাই ছিলেন ফুটবলার। এমন ঘটনা বিরলই বলা যায়। একটু আগে-পরে প্রত্যেকেই খেলেছেন প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে। কেউ ঢাকায়, কেউ রাজশাহীতে। সবাই মোটামুটি ফুটবলার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তবে ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন সামসুল ইসলাম মোল্লা। সামসু হিসেবেই তার খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা। তিনি ছিলেন ষাট ও সত্তর দশকের অন্যতম সেরা ফুটবলার। এখনও তার ক্রীড়াশৈলী নস্টালজিক করে তোলে ফুটবলানুরাগীদের। তিনি ছিলেন স্কিলফুল ফুটবলার। খেলতেন সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে। ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড়। ছোট জায়গার মধ্যে ডজ দিয়ে বের হয়ে যেতে পারতেন। কোনদিক দিয়ে বের হবেন, প্রতিপক্ষকে ঘুনাক্ষরে বুঝতে দিতেন না। পজিশনাল সেন্স ছিল অসাধারণ। অ্যাকুরিসিও ছিল নিখুঁত। পরিস্থিতি অনুযায়ী ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। অল্প ডিসট্যান্সের মধ্যে তার শট নেয়ার মুন্সিয়ানা ছিল। যে কোনো অবস্থায় খেলার গতিকে পাল্টে দিতেন। একবার রিসিভ করলে তার কাছ থেকে বল নেয়া ছিল কঠিন এক কাজ। বল নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা ছিল চমকপ্রদ। বেশি ছোটাছুটি করতেন না। তারপরও তার

দুরন্ত ফুটবলার আরমানিটোলার গাউস/ দুলাল মাহমুদ

আরমানিটোলা নামটি উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রীড়ানুরাগীদের চোখে ভেসে ওঠে অনেক তারকা খেলোয়াড়ের নাম। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে কত যে খেলোয়াড় উঠে এসেছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে না। আরমানিটোলাকে খেলাধুলার সূতিকাগার বললে অত্যুক্তি হবে না। এমন একটি এলাকায় জন্ম ও বেড়ে উঠবেন, আর খেলাধুলার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র গড়ে ওঠবে না- তা কি হয়! কাছের মানুষরা খেলায় মশগুল থাকলে যে কাউকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে খেলার মাঠ। সঙ্গত কারণে গাউসও পারেননি খেলার মাঠের আকর্ষণ থেকে দূরে থাকতে। আরমানিটোলা মাঠ ফুটবল ও আরমানিটোলা স্কুল হকির জন্য খ্যাতি অর্জন করলেও নানা দিক দিয়ে আরমানিটোলা এদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে ভরিয়ে দিয়েছে ফলে-ফুলে। বিভিন্ন খেলায় অসংখ্য খেলোয়াড় উঠে এসেছেন আরমানিটোলা মাঠ কিংবা সংলগ্ন এলাকা থেকে। তাদের সুখ্যাতি ছড়িয়েছে জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। খ্যাতিমান সেসব ক্রীড়াবিদের অন্যতম হলেন গাউস। তিনিও সহজাতভাবে খেলোয়াড় হওয়ার দীক্ষা পান আরমানিটোলার আলো-হাওয়া-জল থেকে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অনুকূল তো ছিলই, স্কুলের পরিবেশও খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। হাম্মাদিয়া হাইস্কুল, কিশোরীলাল জুবিল

এস এ জামান মুক্তা : স্বর্ণেরত্মেশোভনলোভন/ দুলাল মাহমুদ

কথা ছিল তার বাসায় যাওয়ার। টেলিফোনে কথা বলে তার খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়া বাসার ঠিকানা জেনে নেই। তখন তিনি অসুস্থ থাকলেও সার্বক্ষণিক চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন না। বাসায় থাকতেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তাকে ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। তার সঙ্গে আর কথা বলা সম্ভব হয়নি। যখন তার সঙ্গে দেখা হয়, তখন তিনি শুধু হাসপাতালেই থিতু নন, দুলছেন জীবন-মৃত্যুর দোলায়। অনেকগুলো দিন পেরিয়ে গেলেও কথা বলতে পারছেন না। কিডনি ডায়ালিসিসের মত কঠিন এক চিকিৎসা নিয়ে কোনো রকমে আঁকড়ে আছেন জীবন। খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি ছিলেন সুঠাম ও সুদেহী। তার মাংসপেশী ও শারীরিক গড়ন ছিল চমৎকার। সুপুরুষ বলতে যা বোঝায়, তিনি ছিলেন তাই। তার সৌন্দর্য ছিল আলোচনার বিষয়। অথচ আজ তাকে দেখলে চেনাই যায় না। খেলোয়াড় হিসেবে এক সময় মাঠ কাঁপিয়েছেন। কোচ হিসেবে ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। ডাকসাইটে সংগঠক ছিলেন। প্রকৃত অর্থেই অলরাউন্ডার ক্রীড়াবিদ হিসেবে খ্যাতিমান এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হলেন এস এ জামান (শামসুজ্জামান আমিনুজ্জামান)। সবার কাছে তিনি পরিচিত মুক্তা নামে। ঢাকার গ্রীন রোডের রেনাল হাসপাতালের ছোট্ট একটি কক্ষে অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন ক্রীড়াঙ্গনের এক সময়ের এই মহীরূহ। বলে

কাবাডির প্রথম তারকা খেলোয়াড় জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী/ দুলাল মাহমুদ

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে পেশাদার অবকাঠামো এখনও গড়ে উঠেনি। তবে একটু একটু করে বোধ করি সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেটাররা মাসিক বেতন ও বোনাস পাচ্ছেন। নামকাওয়াস্তে হলেও চালু হয়েছে পেশাদার ফুটবল লীগ। অথচ ষাট ও সত্তর দশকে পেশাদারিত্বের বিষয়টি ছিল অসম্ভব এক চাওয়া। সে সময় খেলাধুলায় পেশাদার মনোভাব পোষণ করার প্রশ্নই আসে না। সবাই খেলতেন মনের আনন্দে। পাশাপাশি কিছুটা পরিচিতি কিংবা খ্যাতি পেলে তাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন। নিজেকে খেলার মাঠে উৎসর্গ করে দেয়ার মানসিকতা খুব কমই দেখা যেত। খেলাধুলাটা যেহেতু রুটি-রোজগারের অবলম্বন ছিল না, তাই তাতে জীবনপাত করার কথা কেউ ভাবতেন না। এঁদের মাঝে ব্যতিক্রম ছিলেন কেউ কেউ। তাদের অন্যতম মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। খেলাধুলাকে নিয়েছিলেন পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গিতে। ক্রীড়াঙ্গন থেকে যে পর্যাপ্ত অর্থ পেতেন, তা মোটেও নয়। কিন্তু মাঠে নামলে জীবনবাজি রেখে খেলতেন। খেলতেন নিজেকে উজাড় করে দিয়ে। মনোভাবটা ছিল এমন : ‘মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পতন’। কোনো কিছুর পরোয়া করতেন না। যখন যে দলের হয়ে খেলেছেন, সেই দলের জয়-পরাজয়টাকে মনে করতেন নিজের। দলের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা ও উৎসর্গীকৃত মনোভাবের কারণে খুব

ভলিবল খেলোয়াড় গড়ার কারিগর মোস্তাফা কামাল/ দুলাল মাহমুদ

ক্রীড়াঙ্গনের অতি পরিচিত মুখ মোস্তাফা কামাল। গত প্রায় অর্ধ-শতাব্দীকাল তিনি ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃত্ত। নানা তার পরিচয়। কখনো খেলোয়াড়, কখনো প্রশিক্ষক, কখনো সংগঠক। এর বাইরেও নানাবিধ কর্মকান্ডের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে। তবে ভলিবলের ‘কামাল ভাই’ হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে যাদের একটুখানি আনাগোনা আছে, তাদের সবার কাছের মানুষ তিনি। ছোট-বড় সবাই তাকে শ্রদ্ধা ও সমীহ করেন। যারা তাকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন, তাকে খুব একটা বদলাতে দেখেননি। চিরতরুণ, চিরসবুজ। ঠোঁটে সদা লেগে আছে এক টুকরো মোহময় হাসি। অথচ বয়স ৬৫-এর কাছাকাছি। দেখলে সেটা অনুধাবন করা যাবে না। শরীরে একচুল মেদও নেই। ঝকঝকে। স্মার্ট। অলওয়েজ ফিটফাট। পরিপাটি। ড্রেসআপে একটুও টাল খায় না। এ বয়সেও উদ্যমশীল ও কর্মশক্তিসম্পন্ন। এখনও ছুটতে পারেন তরুণের মত। শাদা-পাকা চুল আড়াল করা গেলে তাকে যুবক হিসেবে বিভ্রম হতেই পারে! অসম্ভব ধৈর্য ও শান্ত মেজাজ। স্বভাবটাও গোছানো। কথাবার্তায় পরিমিত। বাচনভঙ্গিও সুন্দর। নোয়াখালীর সন্তান হলেও কথা বলার সময় আঞ্চলিকতার দোষে দুষ্ট নন। সব দিক দিয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তিত্ব হয়েও খেলাধুলার বাইরে তিনি

খন্দকার আবুল হাসান : একের ভেতর তিন/ দুলাল মাহমুদ

গ্রীক পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, রাজা মিডাস যা কিছু স্পর্শ করতেন তাই সোনা হয়ে যেত। এই কাহিনীর অন্তর্নিহিত সারমর্ম যতটুকু অনুধাবন করা যায়, তার তাৎপর্য দাঁড়ায়, এই ‘মিডাস টাচ’ যারা পান, তারা হন সৌভাগ্যের বরপুত্র। আমাদের দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও কিছু কিছু ব্যক্তিত্ব আছেন তারা যে খেলায় হাত দিয়েছেন, তাতেই দু’হাত ভরে সাফল্য পেয়েছেন। আসলে সহজাত প্রতিভা নিয়েই যেন তারা জন্মগ্রহণ করেন। তাদের ভেতরে প্রতিভার যে আগুন ছিল, সুযোগের ক্ষেত্র প্রস্তুত হতেই তা দপ করে জ্বলে উঠেছে। সঙ্গত কারণেই নিজেকে মেলে ধরার পাশাপাশি প্রতিভার দীপ্তি দিয়ে তারা উজ্জ্বল করেন ক্রীড়াঙ্গনকে। আর এমন একজন বিরল প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ হলেন খন্দকার আবুল হাসান। পঞ্চাশ ও ষাট দশকের ক্রীড়াঙ্গনকে যারা আলোকিত করেছেন, তিনি তাদের অন্যতম। ভলিবল, অ্যাথলেটিক্স ও ফুটবলে তার কৃতিত্ব রীতিমত কিংবদন্তি হয়ে আছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ তিনটি খেলায় একই সঙ্গে সমান পারদর্শিতা দেখানো চাট্টিখানি কথা নয়। অথচ এটি তার কাছে ছিল অনায়াস দক্ষতারই অংশ। এই দক্ষতা দেখিয়ে তিনি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের আলোচিত ব্যক্তিত্ব হয়ে আছেন। এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, তার মতো সফল ক্রীড়াবিদের