স্বপ্নের পথ আর কত দূর? দুলাল মাহমুদ




কত অপেক্ষা নিয়ে আসে এক একটি বিশ্বকাপ। চার বছরের অপেক্ষা। ৪৮ মাসের অপেক্ষা। ১৪৬০ দিনের অপেক্ষা। অঞ্জন দত্তের গানের মতো, ‘এত দিন ধরে এত অপেক্ষা’। এই অপেক্ষার রঙও আলাদা আলাদা। কারো অপেক্ষা বিশ্বকাপ ফুটবলে চূড়ান্ত পর্বে খেলা। কারো অপেক্ষা চূড়ান্ত পর্বে চমক সৃষ্টি করা। কারো অপেক্ষা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আর এজন্য দিনের পর দিন কত প্রস্তুতি। কত অনুশীলন। কত ঘাম ঝরানো। শুধু কি তাই? নতুন নতুন কৌশল। নতুন নতুন উদ্ভাবনা। নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা। একটি দলকে গড়ে তুলতে চলে কত রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আর এ সব কিছুর প্রতিফলন ঘটে বিশ্বকাপ ফুটবলে। এ ক্ষেত্রে কারো স্বপ্ন পূরণ হয়। কারো স্বপ্ন রয়ে যায় অপূর্ণ। আর কেউ কেউ স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্নের মাঝে দোল খেতে থাকে।
ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফুটবল এখন কোয়ার্টার-ফাইনাল রাউন্ড শুরুর অপেক্ষায়। অনেক স্বপ্ন নিয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলতে এসেছিল ৩২টি দেশ। প্রথম রাউন্ড থেকেই ঝরে যায় ১৬টি দেশ। যদিও খেলার নিয়মই তো এমন, কেউ জিতবে। কেউ হারবে। তারপরও এই হার-জিতের মধ্যেই থাকে কত আশা-নিরাশার প্রতিচ্ছবি। এবার প্রথম খেলতে আসা বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনার স্বপ্ন ছিল একরকম। পুরনো দেশগুলোর স্বপ্ন ছিল অন্যরকম। তবে প্রাথমিকভাবে এই দেশগুলো চেয়েছিল ‘রাউন্ড অব সিক্সটিন’-এ খেলতে। কিন্তু তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ব্যর্থতার চোরাবালিতে হারিয়ে গিয়ে অনেকেই কেঁদেছে। অন্য সব দেশের কথা বাদ দিলেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেন, চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি, একবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিদায় ছিল অবাক করার মতো। এই দেশগুলো চেয়েছিল চ্যাম্পিয়ন হতে। সে পথ তো অনেক দূরের কথা, শুরুতেই এমনভাবে স্বপ্ন ভেঙে যাবে, সেটা কে ভেবেছিল? অন্য দেশগুলোরও বড় স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন ভঙের বেদনা নিয়ে তারাও ফিরে গেছে। আবার অপেক্ষা চার বছরের।
‘রাউন্ড অব সিক্সটিন’-এ ১৬টি দেশের স্বপ্ন ছিল কোয়ার্টার-ফাইনাল খেলা। ইতোমধ্যে এই স্বপ্ন ভেঙে গেছে চিলি, উরুগুয়ে, মেক্সিকো, গ্রীস, নাইজেরিয়া, আলজেরিয়া, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের। ভাগ্যের পরীক্ষায়ও হেরে গেছে কেউ কেউ। তবে স্বপ্ন পূরণের জন্য এই দেশগুলো লড়াই করেছে শেষ পর্যন্ত। প্রতিটি ম্যাচই ছিল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। উত্তেজনার বারুদে ঠাসা। খেলোয়াড়রা তো বটেই, দর্শকদের যুদ্ধ করতে হয়েছে স্নায়ুর সঙ্গে। আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, ব্রাজিলের নেইমারের মতো তারকা ফুটবলাররা পর্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তাদেরও মনে হয়েছিল, স্বপ্নটা এত কাছে তবুও কত দূর। এটা তো ঠিক, বিশ্বকাপ ফুটবল তো সহজ-সরল কোনো পথ নয় যে এলাম, দেখলাম কিংবা জয় করলাম। প্রতিটি ম্যাচই জিততে হয় অনেক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে। আর এবারে তো ছোট-বড় দলের খুব একটা পার্থক্য ছিল না বললেই চলে। যদিও ফেবারিট দলগুলোই এখনও টিকে আছে। কিন্তু প্রায় প্রত্যেককেই অবতীর্ণ হতে হয় ভাগ্যের পরীক্ষায়। আর ভাগ্যটা এখনও শিরোপার দাবিদারদের পক্ষেই আছে। নতুবা ভাগ্যের আনকুল্য পেলে চিলি, মেক্সিকো, গ্রীস, আলজেরিয়া, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্্েরর মতো দেশগুলোও খেলতে পারতো কোয়ার্টার-ফাইনালে। এমন নয় যে, এই দেশগুলো বিশ্বকাপের ফেবারিট ছিল। তবে দলগুলো যেভাবে শেষ পর্যন্ত খেলেছে, যেভাবে হেরেছে, তাতে তারাও পরের ধাপে যেতে পারতো।    
এখন কোয়ার্টার-ফাইনালের চরম পরীক্ষা। স্বপ্নের পথ এগিয়ে যাওয়ার পথে সামনে আরেক ধাপ। এই ধাপে আছে ব্রাজিল, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, কলম্বিয়া ও কোষ্টারিকা। এরমধ্যে বিদায় নিতে হবে যে কোনো চারটি দেশকে। ভাগ্য যদি আগের মতো ফেবারিটদেরই ফেবার করে, তাহলে এই চারটি দেশের নাম হওয়ার কথা ব্রাজিল, জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডস। কিন্তু বাকী দেশগুলোও চমকপ্রদ ক্রীড়াশৈলীর পাশাপাশি ভাগ্যের আনুকুল্য নিয়ে এ পর্যায়ে এসেছে। তাদেরকে তো হিসেবের বাইরে রাখার সুযোগ নেই। তাছাড়া ফেবারিট দলগুলো যদি ফেবারিটের মতো খেলতে না পারে, তাহলে অন্যরা তো সুযোগ নেবেই। ভাগ্য যে সব সময় সহায়তা করবে, এমনটি ভাবাও ঠিক নয়।

dulalmahmud@yahoo.com    

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা ক্রিকেট সাহিত্য এবং শঙ্করীপ্রসাদ বসু / দুলাল মাহমুদ

ক্রীড়া সাংবাদিকতার মূল্যায়নের দিন/ দুলাল মাহমুদ

সোনালি অতীতের দিনগুলো-২ / বশীর আহমেদ

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

‘ফ্লাইং বার্ড’ বলাই দে/ দুলাল মাহমুদ

‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’ / দুলাল মাহমুদ

ফুটবলের দেশে বিশ্বকাপ / দুলাল মাহমুদ

এই ব্রাজিল সেই ব্রাজিল নয় / দুলাল মাহমুদ

মুহাম্মদ কামরুজ্জামান : ক্রীড়া সাংবাদিকতায় মহীরুহ/ দুলাল মাহমুদ