এশিয়া প্রথম আফ্রিকা দ্বিতীয় / দুলাল মাহমুদ



ফুটবল খেলায় আগাম কোনো কিছু বলা যায় না। কে জিতবে, কে হারবে কিংবা খেলা অমীমাংসিত থাকবে কিনা এটা নির্ভর করে সেদিনের খেলার উপর। কিন্তু এখন বোধকরি এটা বলেই দেওয়া যাবে, বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম রাউন্ড থেকে এশিয়া এবং দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে আফ্রিকা বিদায় নেবে। এই দুই মহাদেশ বিদায় নেওয়ার পরই এমনটি বলা হচ্ছে, সেটা কিন্তু নয়। এবারের বিশ্বকাপে এমন আভাস আগেই পাওয়া গেছে। এশিয়ানরা শোভাবর্ধনকারী হিসেবে এবং আফ্রিকানা গর্জন করেই থেমে যাবে, এমনটি শুরুতেই আঁচ করা গিয়েছিল। তাছাড়া এটাই এখন দস্তুরমতো রীতি হয়ে উঠেছে। ব্যতিক্রম যে হয় না, সেটা বলা যাবে না। কেননা, অতীতে এশিয়ানরা যেমন দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছে, তেমনিভাবে আফ্রিকানরাও প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে। সত্যিকার অর্থে দুই মহাদেশের মধ্যে খুব একটা তফাত নেই। তবে তুলনামূলকভাবে আফ্রিকানরা এশিয়ানদের তুলনায় এগিয়ে আছে। আর এবারের বিশ্বকাপ তো সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করা হয় কে চ্যাম্পিয়ন, কে রানার্স-আপ এবং পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে। কিন্তু উল্টো দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত এশিয়া এবং রানার্স-আপ আফ্রিকা। এই অবস্থান নিয়ে এ দুই মহাদেশের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। এর বাইরে যাওয়ার লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না।  
বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্যর্থতার মতো জনসংখ্যার দিক দিয়েও এশিয়া আর আফ্রিকার একটা মিল আছে। জনসংখ্যায় এশিয়া প্রথম এবং আফ্রিকা দ্বিতীয়। পৃথিবীর জনসংখ্যা সাত শতাধিক কোটি। এরমধ্যে এশিয়ার স্বাধীন ৪৯টি দেশের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার শ’ কোটি। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশই এশিয়ার। আফ্রিকার ৫৪টি স্বাধীন দেশের জনসংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ আফ্রিকান। সম্মিলিতভাবে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশের বসবাস এশিয়া আর আফ্রিকায়। অথচ বিশ্বকাপ ফুটবলে এই জনসংখ্যার কোনো প্রতিফলন নেই। কেন নেই, এর রহস্য কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন। পৃথিবীর বৃহত্তম জনসংখ্যার অধিবাসীরা দীর্ঘ দিন যেমনি শোষিত ও শাসিত হয়ে এসেছে, তেমনিভাবে বিশ্বকাপ ফুটবলেও পেয়েছে কেবলই ব্যর্থতার হাহাকার। অথচ ইউরোপের ৫০টি দেশের জনসংখ্যা ৭৫ কোটিরও বেশ নিচে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ ইউরোপীয়রা। ইউরোপীয়রা বিশ্বকাপ জিতেছে ১০বার। আর লাতিন আমেরিকার ২১টি স্বাধীন দেশের জনসংখ্য ৬০ কোটি। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশ লাতিনরা। লাতিনদের ঘরে বিশ্বকাপ উঠেছে ৯ বার।
এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, জনসংখ্যা সাফল্যের মাপকাঠি নয়। বিশ্বকাপ ফুটবলে সাফল্য পাওয়ার জন্য যে রেসিপি ইউরোপীয় এবং লাতিনরা জানেন, এশীয় ও আফ্রিকানরা সেটা জানেন না। আর এটা যতদিন না জানা যাবে, ততদিন বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্যর্থতাই হবে এশিয়া এবং আফ্রিকার বিধিলিপি। এখন দেখা যাক, বিধির এ লিখন কে খণ্ডায়?


dulalmahmud@yahoo.com    

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা ক্রিকেট সাহিত্য এবং শঙ্করীপ্রসাদ বসু / দুলাল মাহমুদ

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

ক্রীড়া সাংবাদিকতার মূল্যায়নের দিন/ দুলাল মাহমুদ

সোনালি অতীতের দিনগুলো-২ / বশীর আহমেদ

‘ফ্লাইং বার্ড’ বলাই দে/ দুলাল মাহমুদ

‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’ / দুলাল মাহমুদ

ফুটবলের দেশে বিশ্বকাপ / দুলাল মাহমুদ

এই ব্রাজিল সেই ব্রাজিল নয় / দুলাল মাহমুদ

মুহাম্মদ কামরুজ্জামান : ক্রীড়া সাংবাদিকতায় মহীরুহ/ দুলাল মাহমুদ