উরুগুয়ের সেই পরাক্রম কোথায়? দুলাল মাহমুদ




কখনো কখনো সাফল্য প্রাপ্তির উল্টোপথেই রহস্যজনকভাবে নির্ধারিত হয়ে যায় ব্যর্থতার দীর্ঘ সরণি। ১৯৫০ সালের ১৬ জুলাই ব্রাজিলের মারকানা ষ্টেডিয়ামকে স্তব্ধ করে দিয়ে যে বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছিল উরুগুয়ে, এরপর দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী পেরিয়ে গেলেও আর কখনো সেই ঠিকানায় পৌঁছতে পারেনি ‘লা সেলেস্তে’রা। কেন পারেনি বা পারছে না, এর কোনো যথাযথ ব্যাখ্যা নেই। তাহলে কি সেদিন বিশ্বকাপ ফুটবলে উরুগুয়ের শিরোপা আর জিততে না পারার ‘এপিটাফ’ লেখা হয়ে গিয়েছিল? এর কোনো সদুত্তরও জানা নেই। এ কেবল বলতে পারে অনাগত সময়।
অথচ উরুগুয়ের ফুটবলের ইতিহাস তো গৌরব করার মতো। লাতিন আমেরিকার এই দেশটির মাটিতে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল। প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবলের চ্যাম্পিয়নও উরুগুয়ে। প্রথম আয়োজক ও প্রথম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অমর হয়ে আছে ফুটবল ইতিহাসের পাতায়। অন্য কোনো বিষয় বাদ দিলেও বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রসঙ্গ এলেই এ কারণে আলোচনায় উঠে আসে ফুটবলের এ দেশটি। অবশ্য আরো একটি গৌরব এই দেশটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাদের মতো কম জনসংখ্যা নিয়ে পৃথিবীর আর কোনো দেশ বিশ্বজয় করতে পারেনি। ১৯৩০ সালে উরুগুয়ে যখন বিশ্বকাপ জয় করে, তখন তাদের জনসংখ্যা মাত্র সাড়ে ১৭ লাখ। এও তো এক পরম বিস্ময়। পরের দুই বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি উরুগুয়ে। এরপর ব্রাজিলীয়দের স্বপ্ন ভেঙেচুরে দিয়ে ১৯৫০ সালে দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়। সে সময় ফু¡টবলের পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশটি। দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলে তাদের দাপট কিন্তু অব্যাহত আছে। কোপা আমেরিকায় সর্বাধিক ১৫ বার চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েনরা। বর্তমানেও তারা চ্যাম্পিয়ন।
কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলে গত ৬৪ বছর শিরোপা জয় উরুগুয়ের কাছে হয়ে আছে অধরা। ১৯৫৪, ১৯৭০ ও এই সেদিন ২০১০ সালে চতুর্থ হলেও এটি দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের জন্য বড় কোনো সাফল্য হতে পারে না। তাছাড়া বেশ কয়েকবার চূড়ান্ত পর্বে খেলার ছাড়পত্রও অর্জন করতে পারেনি উরুগুয়ে। বিশ্ব ফুটবলের একসময়ের পরাশক্তির সেই পরাক্রম এখন আর নেই। মাঝে মাঝে ঝলক দেখালেও ঝলসে উঠতে পারছে না। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে কোষ্টারিকার কাছে ৩-১ গোলে হেরে তারা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। কিন্তু ইনজুরি থেকে অভাবিতভাবে ফিরে আসা লুইস সুয়ারেজের চমকপ্রদ কৃতিত্বে সাবেক চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয়। চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ১-০ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করলেও ফুটবল বিশ্বকে অবাক করে দেন সুয়ারেজ। ইতালির ডিফেন্ডার জর্জো কিয়েলিনিকে কামড় দিয়ে নায়ক থেকে রাতারাতি ভিলেনে পরিণত হন এবারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের টপ স্কোরার। ৯ ম্যাচের জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করে ফিফা। সুয়ারেজ কামড় শুধু কিয়েলিনিকে দেননি, দিয়েছেন উরুগুয়ের বিশ্বকাপের স্বপ্নেও। যে সুয়ারেজের উপস্থিতিতে চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল উরুগুয়ে, তার অনুপস্থিতিতে হারিয়ে ফেলে মনোবল। যে কারণে ‘রাউন্ড অব সিক্সটিন’-এ কলম্বিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় উরুগুয়েকে। এভাবে বিদায় নেওয়াটাই কি উরুগুয়ের নিয়তি?


dulalmahmud@yahoo.com         

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

পেলে-ম্যারাডোনাকে দেখিনি, দেখবো মেসিকে/ দুলাল মাহমুদ

ক্রীড়া সাংবাদিকতার মূল্যায়নের দিন/ দুলাল মাহমুদ

বাংলা ক্রিকেট সাহিত্য এবং শঙ্করীপ্রসাদ বসু / দুলাল মাহমুদ

স্টেডিয়ামের সেই আড্ডাটা ‍আজ আর নেই-২

সোনালি অতীতের দিনগুলো-৩ / বশীর আহমেদ

আমাদের ফুটবলাররা-২

আমাদের ফুটবলাররা

সোনালি অতীতের দিনগুলো-২ / বশীর আহমেদ

মোহাম্মদ আলী আর ফ্ল্যাশবিহীন ছবি / দুলাল মাহমুদ