লাল মরিচের ঝাল / দুলাল মাহমুদ




‘চিলি’ বললেই তো কেমন একটা ঝাল ঝাল লাগে। যদিও বাংলাভাষী হওয়ার কারণে লঙ্কা বা মরিচ বললে যতটা ঝাঁজালো লাগে, ইংরেজিতে ততটা তেজ অবশ্য পাওয়া যায় না। একটু যেন তীব্রতা কমই লাগে। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে লিখতে গিয়ে হঠাৎ লঙ্কা বা মরিচের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হওয়ায় যে কেউই বিভ্রান্ত হতে পারেন। হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। আসলে বিশ্বকাপ ফুটবলে চিলির চমকপ্রদ নৈপুণ্যের কারণেই এ বিষয়টি উঠে এলো।  
‘চিলি’ নামে যে একটি দেশ আছে, সেটা তো আর আমাদের অজানা নয়। লাতিন আমেরিকার এই দেশটি সাহিত্য ও রাজনৈতিক কারণেই অনেক বেশি পরিচিত। ১৯৭৩ সালে সামরিক জান্তা পিনোচেট বামপন্থী প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দেকে উৎখাত করায় ও তাঁর রহস্যজনক মৃত্যুর হওয়ার কথা রাজনৈতিক ইতিহাসে কতভাবেই না আলোচিত হয়। আর কবি পাবলো নেরুদাকে তো মনে হয় আমাদের সাহিত্য পরিমণ্ডলেরই কেউ। এই দেশটি যে ফুটবল খেলে, সেটাকে হালকা করে দেখাটা ভুল হবে। ফুটবল ইতিহাসের অনেক পুরনো মুখ চিলি। শুরু থেকেই খেলে আসছে বিশ্বকাপ ফুটবলে। বিশ্বকাপ ফুটবলে দেশটির অস্তিত্ব সরব হয়ে না উঠলেও উপস্থিতি কিছুটা হলেও টের পাওয়া যায়। তবে বড় কোনো সাফল্য না থাকার কারণে দলটি আলাদাভাবে মনোযোগ কাড়তে পারেনি। ১৯৬২ সালে নিজের মাঠে একবার তৃতীয় হয়েছিল, সেও তো অনেক কাল আগের কথা। সাম্প্রতিক সময়ে তেমন কোনো চমকও দেখাতে পারেনি। এ কারণে দলটিকে নিয়ে আলাদা কোনো কৌতূহল তৈরি হয়নি।
এবার কিন্তু চিলি কিছুটা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ব্রাজিল বিশ্বকাপে অংশ নেয়। বড় কিছু একটা করার স্বপ্নও দেখাতে থাকে। এজন্য কেউ কেউ দলটিকে ‘অন্ধকারের ঘোড়া’ হিসেবে অভিহিত করে। র‌্যাংকিং-এ দলটির অবস্থানও বেশ ভালো। কিন্তু তাতেও দলটিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনি। ১৯৬২ সালের ১৩ জুন যুগ্লোশ্লাভিয়াকে হারানোর পর দলটি বিশ্বকাপে আর কখনো জয়ের মুখ দেখেনি, চূড়ান্ত পর্বেও নিয়মিত খেলতে পারেনি, এমন একটি দল নিয়ে কতটাইবা আর আশাবাদী হওয়া যায়? এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে এশিয়ান শক্তি অস্ট্রেলিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দিয়ে দীর্ঘ ৫২ বছর পর জয়ের মুখ দেখায়, তাতে কিছুটা নড়চড়ে বসতে হয়।  কিন্তু ‘লা রোজা’রা যে সব হিসেব উল্টে-পাল্টে দিয়ে বড় ধরনের ধাক্কা দেবে, সেটা তো একদম ভাবতেই পারিনি। চিলি যে এত তীব্র, এত ঝাঁজালো হবে, তার ঝালে ও ঝাঁজে যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের মুখ পুড়ে যাবে, সেটাও বুঝতে পারিনি। ‘লা ফুরিয়া’কে নিয়ে যেভাবে ছেলেখেলা করলো, তা ছিল অবিশ্বাস্য। এক সময়ের ঔপনিবেশিক এই দেশটির বিপক্ষে যেন আগ্নেয়গিরি হয়ে উঠে আগ্নেয়গিরির দেশ চিলি। ২-০ গোলে হারিয়ে দিয়ে নিজেরা দ্বিতীয় পর্বে উঠাই শুধু নিশ্চিত করেনি, ফুটবল ইতিহাসে নতুন একটি ঘটনা ঘটিয়েছে। গ্রুপের শেষ ম্যাচের আগেই বিদায় করে দিয়েছে স্পেনকে। এরআগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি, ব্রাজিল ও ফ্রান্স প্রথম পর্বে বিদায় নিলেও কেউই গ্রুপ পর্বের এক ম্যাচ বাকি থাকতে বিদায় নেয়নি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এই রেকর্ডটা এখন একমাত্র স্পেনের জিম্মায় থাকলো। স্পেন এবং চিলি, দু’দলের জার্সির রঙই লাল এবং উভয় দল ‘লা রোজা’ (দ্য রেড ওয়ান) নামে পরিচিত। তবে এদিন চিলিকে খেলতে হয় সাদা জার্সিতে। তাই জার্সি দিয়ে চেনা না গেলেও চিলি নাম দিয়ে বোঝা গেল লাল মরিচের কত ঝাল।


dulalmahmud@yahoo.com  

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

আছি ক্রিকেটে আছি ফুটবলেও

হকি অন্তঃপ্রাণ আলমগীর মোহাম্মদ আদেল/ দুলাল মাহমুদ

‘মৃত্যুগুহা’ থেকেই উজ্জীবনের গান / দুলাল মাহমুদ

অন্তরঙ্গ আলাপনে উনিশ ব্যক্তিত্ব

কাছের মানুষ এখন অনেক দূরে

‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’ / দুলাল মাহমুদ

বাংলা ক্রিকেট সাহিত্য এবং শঙ্করীপ্রসাদ বসু / দুলাল মাহমুদ

বহুদর্শী ক্রীড়াবিদ মনিরুল হক/ দুলাল মাহমুদ

নূর আহমেদ : ছিলেন ব্যাডমিন্টনে, ছিলেন ফুটবলেও/ দুলাল মাহমুদ