‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না!’/ দুলাল মাহমুদ



বিপরীত মেরুর দুই দেশ। কোনোভাবেই এই দুই দেশের তুলনা হয় না। দূরত্বে তো বটেই। উভয় দেশের মধ্যে বয়ে গেছে কত সাগর আর মহাসাগর। আর ক্রিকেটে তো আকাশ-পাতাল পার্থক্য। একটি দেশ সবে পাঠ নিচ্ছে ক্রিকেটে। অপর দেশটি ক্রিকেটের পরাক্রম পরাশক্তি। পর্যায়ক্রমে এমন বিপরীতমুখী দুই দেশ মধ্য এশিয়ার আফগানিস্তান এবং মহাদেশ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে ভৌগলিকভাবে এই দুই দেশের মধ্যিখানে অবস্থান করা বাংলাদেশের। এজন্য মানসিক প্রস্তুতির ধকলও কম নয়। তবে বাংলাদেশের বিপরীতে আফগানরা যেমন নির্ভার হয়ে খেলেছে, তেমনিভাবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশেরও নির্ভার থাকার কথা। এটা তো আর লেখার অপেক্ষা রাখে না, অজিদের টাইগাররা হারাতে পারলে বীরোচিত সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আর না পারলেও আফসোস করার কিছু থাকবে না। তবুও মন স্বপ্ন দেখে অসম্ভবকে সম্ভব করার। এটা অনেকটা অসাধ্য হলেও চেষ্টা তো করাই যেতে পারে। দুশ্চিন্তার দীর্ঘ রজনী পেরিয়ে আফগানদের হেসে-খেলে হারানো গেলেও এখন এমন এক প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়তে হবে, ক্রিকেটে যাদের শৌর্য-বীর্য আর প্রতিপত্তির একটুও কমতি নেই। নিজের মাঠে পঞ্চমবার শিরোপা জয়ের অপেক্ষায় টগবগিয়ে ফুটছে অস্ট্রেলিয়া। তাদের চলার পথে বাংলাদেশের মতো দল বাধা হয়ে দাঁড়াবে, এটা তারা একদম ভাবতেই পারে না। এই দুই দেশের ম্যাচটিকে অনেকটা বাইবেলে বর্ণিত ডেভিড আর গোলিয়াথের মধ্যে লড়াই হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ‘ডেভিড’ বাংলাদেশ কি পারবে ‘গোলিয়াথ’ অস্ট্্েরলিয়াকে রুখে দিতে?
অবশ্য এমন দৃষ্টান্ত তো আছেই। দুই দেশের অসম লড়াইয়ে একবার সত্যিকার অর্থেই ‘গোলিয়াথ’ অস্ট্রেলিয়াকে বধ করেছিল ‘ডেভিড’ বাংলাদেশ। অবশ্য সেই জয়টাকে এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের মূল্যবান ‘অ্যান্টিক’ হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। সেওতো এক দশক হতে চললো। অনেকেই হয়ত ভুলে যেতে পারেন। কিন্তু আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসে গৌরব করার মতো এমন একটি দিন এসেছিল, যে দিনটিকে ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। দিনটি ছিল ২০০৫ সালের ১৮ জুন। ইংল্যান্ডের কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে রচিত হয়েছিল ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম রোমাঞ্চকর ঘটনা। ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে রিকি পন্টিং-এর অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারায় হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। এই ম্যাচের নায়ক ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ১০১ বলে তাঁর ১০০ রানের ইনিংসটি ক্রিকেটের পরম সম্পদ হয়ে আছে। তাঁকে যোগ্য সাহচার্য দিয়েছিলেন হাবিবুল বাশার। আশরাফুল-হাবিবুল জুটি চতুর্থ উইকেটে ১৩০ রান যোগ করলে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগেনি। সেই দলের একমাত্র সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা এখন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। ম্যাচের দ্বিতীয় বলে শূন্য রানে দুর্ধর্ষ ও মারকুটে ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে ফিরিয়ে দিয়ে তিনি জয়ের স্বপ্নটা বুনে দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ওয়ান ডেতে অস্ট্রেলিয়ার ১৮ জয়ের বিপরীতে ওই একটিবারই ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। যদিও ইতিহাস তো আর কথায় কথায় গড়া যায় না। তবে স্বপ্নের মতো তেমন আরেকটি দিনের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। এখন কথা হলো, কে হবেন নতুন ইতিহাসের নায়ক?     
পেস বোলিংয়ের অন্যতম স্বর্গ ব্রিসবেনে পেস আক্রমণ দিয়ে ঝড় তোলার অপেক্ষায় আছেন অস্ট্রেলিয়ার গতি দানবরা। কিন্তু সেদিন সত্যি সত্যি ধেয়ে আসতে পারে ভয়ঙ্কর ঝড় ‘মার্সিয়া’। ইতোমধ্যেই ফুঁসে উঠেছে কুইন্সল্যান্স উপসাগর। তবে যে কোনো একটি ঝড় অবশ্যই মোকাবিলা করতেই হবে টাইগারদের। একটি ঝড়ের দুরন্ত ঘূর্ণিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পরাভূত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনা করে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে বাজির ঘোড়া অস্ট্রেলিয়াই। সেক্ষেত্রে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ‘মার্সিয়া’র আঘাতে খেলা পরিত্যক্ত হলে লাভবান হবে টাইগাররা। অপ্রত্যাশিতভাবে একটি পয়েন্ট পেলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযাত্রা আরো গতি পাবে। কিন্তু ভাগ্যের খেলায় জিততে চায় না টাইগাররা। হার কিংবা জিত, যেটাই হোক না কেন, ফয়সালা করতে চায় খেলার মাঠে। তাই দৃঢ়প্রত্যয় আর আত্মত্যাগের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলা যেতে পারে, “শির দেগা, নেহি দেগা আমামা। ...ফিরে এলো আজ সেই মোর্হ রম মাহিনা,----ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না!”



dulalmahmud@yahoo.com          

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা ক্রিকেট সাহিত্য এবং শঙ্করীপ্রসাদ বসু / দুলাল মাহমুদ

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

সোনালি অতীতের দিনগুলো-২ / বশীর আহমেদ

‘ফ্লাইং বার্ড’ বলাই দে/ দুলাল মাহমুদ

‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’ / দুলাল মাহমুদ

মুহাম্মদ কামরুজ্জামান : ক্রীড়া সাংবাদিকতায় মহীরুহ/ দুলাল মাহমুদ

প্রতিরোধের সেই দুই ম্যাচ / দুলাল মাহমুদ

ফুটবলের সৌন্দর্য, সৌন্দর্যের ফুটবল / দুলাল মাহমুদ

এশিয়ানরা কি কেবলই শোভাবর্ধন করবে? দুলাল মাহমুদ