তবুও দুর্ভাবনা ছাড়ছে না/ দুলাল মাহমুদ





এরচেয়ে ভালো শুরু আর হতে পারে না। এরচেয়ে স্বস্তিদায়ক আর কিছু ছিল না। এ যেন বুক থেকে পাষাণভার নেমে যাওয়ার যুগপৎ স্বস্তি ও আনন্দ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অভিযাত্রায় এমন স্বস্তি ও আনন্দ ছিল প্রত্যাশিত। প্রত্যাশার সেই রঙে রাঙিয়ে দিয়েছেন আমাদের ক্রিকেটাররা। এমনিতে আইসিসির সহযোগী সদস্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ে আহ্লাদে আটখানা হওয়ার কিছু নেই। তবে বিশ্বকাপের শুরু থেকে গলায় কাঁটা বেধার অস্বস্তি নিয়ে ছিল আফগানিস্তান দলটি। বছরখানেক আগে ওয়ান ডে ক্রিকেটে একবার মুখোমুখি হয়ে তাতে আফগানদের কাছে হেরে যাওয়ার গ্লানির মর্মযাতনা ভুলে যাওয়ার নয়। এ কারণে একটা অঘটন ঘটার শঙ্কায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিল দেশের ক্রিকেটানুরাগীদের। বর্ষাকালে যদি বৃষ্টি না হয়, তখন যেমন অস্বস্তি ও আশঙ্কা দেখা দেয়, তেমনই ছিল আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিনগুলো। এখন স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজছে পুরো বাংলাদেশ। এই ম্যাচ শুধু স্বস্তি এনে দেয়নি, দিয়েছে আত্মবিশ্বাস অর্জনের পুঁজিও। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কতটা কী করতে পারবে, সেটা পরের ব্যাপার। কিন্তু শুরুতেই যদি আফগানদের লম্ফ-ঝম্পের কাছে হার মানতে হতো, তাহলে সমালোচনার তীব্র ঝড়ে আক্রান্ত হতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তলানিতে ঠেকতে পারতো আত্মবিশ্বাস। ভঙ্গুর এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে বেশি দূর যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক ছিল না। বড় একটা ঝড় সামাল দিয়ে এখন ধীর-স্থির মেজাজে বাংলাদেশ পাড়ি দিতে পারবে উত্তাল সাগর।
স্বস্তি ও আত্মবিশ্বাস ছাড়াও এই জয় কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে একটা সোপান হিসেবেও কাজ করতে পারে। যদিও সামনে দুর্গম দুস্তর পথ, এখনই পরিসংখ্যানের যোগ-বিয়োগ নিয়ে লেখা অনেকটা গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল দেওয়ার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা না ভাবিয়ে পারে না। গত বিশ্বকাপে রান রেটের খাড়ায় কাটা পড়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে যেতে না পারাটা অনন্ত আক্ষেপের কারণ হয়ে আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং বাংলাদেশ উভয় দলই জয়ী হয় তিনটি করে ম্যাচে। কিন্তু রান রেটে বাজিমাত করে ক্যারিবীয়রা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয়ী হওয়ায় রান-রেটটাও বাংলাদেশের জন্য বড় সঞ্চয় হয়ে থাকবে। গতবারের মতো এবার তেমন পরিস্থিতি হলে এটা অনেকটা এগিয়ে দিতে পারে। সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশনে আর্শীবাদের মতো। 
তারপরও কিন্তু দুর্ভাবনাটা দূর করা যাচ্ছে না। টেস্ট ঘরানার একটি দেশ হয়ে বাংলাদেশকে যদি আফগানিস্তানের মতো একটি দলকে নিয়ে এত টেনশনে থাকতে হয়, এত মাথা ঘামাতে হয়, এত হিসেব-নিকেশ করতে হয়, তা অবশ্যই বিব্রতকর। আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আইসিসির সহযোগী দেশগুলো যদি এখনও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা মোটেও শুভলক্ষণ নয়। খেলার ধারাবাহিকতায়, অভিজ্ঞতায়, দর্শক সমর্থনে কোনো দিক দিয়েই তো এই দেশগুলো বাংলাদেশের কাছাকাছি নেই। এলিট ঘরানার দেশ হয়েও এখনও যদি নিচের ধাপের এই দেশগুলোকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হয়, সামনের দিনগুলোর জন্য তা স্বস্তিকর হবে না। আগামী বিশ্বকাপ থেকে তো এই দেশগুলোর সঙ্গেই তো লড়াই করে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ছাড়পত্র অর্জন করতে হবে। পথ অনেক দূরের হলেও বিষয়টি ভাবিয়ে না তুলে পারে না।


dulalmahmud@yahoo.com           

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা ক্রিকেট সাহিত্য এবং শঙ্করীপ্রসাদ বসু / দুলাল মাহমুদ

আছি ক্রিকেটে আছি ফুটবলেও

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

ক্রীড়া সাংবাদিকতার মূল্যায়নের দিন/ দুলাল মাহমুদ

সোনালি অতীতের দিনগুলো-২ / বশীর আহমেদ

‘ফ্লাইং বার্ড’ বলাই দে/ দুলাল মাহমুদ

‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’ / দুলাল মাহমুদ

মুহাম্মদ কামরুজ্জামান : ক্রীড়া সাংবাদিকতায় মহীরুহ/ দুলাল মাহমুদ

ফুটবলের সৌন্দর্য, সৌন্দর্যের ফুটবল / দুলাল মাহমুদ

এশিয়ানরা কি কেবলই শোভাবর্ধন করবে? দুলাল মাহমুদ