স্টাইলিশ অ্যাথলেট ছিলেন আরজান খান/ দুলাল মাহমুদ

‘সেই কিশোর বয়সেই খেলাধুলার প্রতি একটা সহজাত আকর্ষণ ছিল। তার টানে ছুটে যেতাম খেলার মাঠে। বাড়তি আকর্ষণ ছিল মামাতো ভাই সেন্টু। তিনি তখন মুন্সীগঞ্জ স্কুলের অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়ন। তার ক্যারিশমাই আলাদা। তাকে সবাই সমীহ করেন। তার দিকে তাকায় আলাদা দৃষ্টিতে। এতে আমারও খুব আনন্দ ও গর্ব হতো। নিজের ভাই বলে কথা। সঙ্গত কারণে তাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করার ব্যাপারে আমি ছিলাম এক ডিগ্রি ওপরে। জান-প্রাণ দিয়ে তাকে সহযোগিতা করতাম। তার ফাই-ফরমাশ খাটতে বিন্দুমাত্র আপত্তি করতাম না। আমার খায়-খাতিরে তিনি যারপরনাই সšত্তষ্ট ও মুগ্ধ। প্রতিদানে তিনি আমাকে স্কুলের রিলে দলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ তো আমার জন্য মেঘ না চাইতেই জল পাওয়ার মতো ঘটনা। আমি তো আর অ্যাথলেট নই। কখনো প্রতিযোগিতামূলক আসরে অংশ নেয়ার প্রশ্নই আসে না। এমন একটা অপ্রত্যাশিত প্রতিশ্রুতি পেয়ে আমি খুশিতে ডগমগ। সে সময় মুন্সীগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অনেক দর্শক সমাগম হতো। দল বেঁধে লোকজন উপস্থিত হতেন। আমার মা-খালারাও থাকতেন। প্রতিযোগিতার দিন বুক ভরা প্রত্যাশা নিয়ে হাজির হই। আমি সে সময় হাফপ্যান্ট পরতাম না। পাজামা পরতাম। সেদিনও তাই পরেছি। আমাকে দেখে সেন্টু ভাই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। সবার সামনে তিনি আমাকে বলেন, পাজামা পরে দৌড়াতে এসেছিস! যা তুই বাদ। এ কথা শুনে সেদিন দারুণভাবে অপমানিত হই। খুবই কেঁদেছিলাম। তবে এই অপমান, এই কান্না আমাকে জুগিয়েছিল শক্তি, সাহস ও প্রেরণা। বুকের মধ্যে অটল এক প্রতীজ্ঞা ও জেদ নিয়ে ওইদিন থেকেই শুরু করি দৌড়। কোনো কিছুই জানতাম না, বুঝতাম না। নিজের মতো করে দৌড়াতে শুরু করি। প্রতিদিন ভোরে ২/৩ মাইল দৌড়াতে থাকি। এটুকু উপলব্ধি অন্তত হয়, আমাকে কিছু করতে হলে দৌড় থামানো চলবে না।’ এর পরের ঘটনা তো ইতিহাস। আরজান খান ১৯৬০ সালে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাতটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে ছয়টিতে প্রথম হন। ১০০, ২০০, ৪০০ মিটার স্প্রিন্ট, হপ-স্টেপ জাম্প, লং জাম্প ও ডিসকাস থ্রোতে প্রথম ও হাইজাম্পে তৃতীয় হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ তো অনেকটা এলাম, দেখলাম ও জয় করলামের মতো ব্যাপার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবার আগে মামাতো ভাই সেন্টু এসে আমাকে অভিনন্দন জানান। তিনি আমাকে বলেন, আমার জন্যই তোর এই সাফল্য। আমি যদি সেদিন তোকে বাদ না দিতাম, তাহলে তুই এই সাফল্য দেখাতে পারতি না। তার ওপর আমার রাগ ও অভিমান থাকলেও সেদিন তা অনেকখানি গলে যায়।’ সাফল্য এমন একটি বিষয়, একবার এর কেউ নাগাল পেলে তার বদলে যেতে সময় লাগে না। বদলে গেলেন তিনি। অ্যাথলেটিকস হয়ে গেল তার নেশা। নিজেকে গড়ে তোলার জন্য তিনি অবিরাম ছুটতে থাকেন। তার ফল পেতেও বেশি দেরি হয়নি। ওই বছর ইন্টার স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বাজিমাত করেন তিনি। সে সময় ইন্টার স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় একজনের তিনটি ইভেন্টের বেশি অংশ নেয়ার সুযোগ ছিল না। তিনি ১০০, ২০০ মিটার স্প্রিন্ট ও হপ-স্টেপ জাম্পে অংশ নিয়ে প্রথম হন। একের পর এক টপকাতে থাকেন সিঁড়ি। ঢাকায় বিভাগীয় স্কুল অ্যাথলেটিক মিটে ১০০, ২০০ মিটার স্প্রিন্টে দ্বিতীয় ও হপ-স্টেপ জাম্পে প্রথম হন। এরপর ঢাকায় জাতীয় স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হপ-স্টেপ জাম্পে দ্বিতীয় হন। সম্ভবত প্রথম হন বশীর আহমেদ। কোনো বিষয়েই কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। যা করতেন নিজের বুঝ অনুসারে। ওয়ার্ম-আপ বলতে যে একটা ব্যাপার আছে, সেটাও তার জানা ছিল না। এ কারণে ভুল পদ্ধতিতে দৌড়ানোর কারণে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সুবিধা করতে পারেননি। তবে জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেটিকসে অংশ নিয়ে তার চোখ খুলে যেতে থাকে। শুধরে নিতে থাকেন নিজের ভুল-ত্রুটিগুলো।
১৯৬১ সালে আরজান খান মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনটির বেশি অংশ নেয়ার সুযোগ না থাকায় ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে প্রথম হন। অংশ নেন ঢাকায় ইন্টার কলেজ অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে তিনি ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে প্রথম হন। ৫৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে ৪০০ মিটারে গড়েন নতুন রেকর্ড। পূর্বতন রেকর্ড ছিল ৫৪ সেকেন্ড। খুব সম্ভবত কারো কারো অনুরোধে ৮০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নিয়েও প্রথম হন। তার এমন কৃতিত্বে চারদিকে সাড়া পড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর ছিলেন ক্ষীতিশ দা। লম্বামত গড়ন। ক্রীড়াঙ্গনের সবাই তাকে চিনতেন। ক্রীড়া অন্তঃপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। প্রতিযোগিতা শেষে তিনি আমাকে বলেন, তোমাকে অ্যাবোটাবাদ পাঠাবো। আমি তার কথার মাথা-মুণ্ডু বুঝতে পারলাম না। অ্যাবোটাবাদ কোথায়? সেখানে আমাকে কেন পাঠাবে? ইন্টার কলেজে সাফল্য অর্জন করায় পত্র-পত্রিকায় আমার ছবি ও নাম ছাপা হয়। মুন্সীগঞ্জ কলেজে আমাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এটা আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। আমি একটু লজ্জায় পড়ে যাই। আমার আগে মুন্সীগঞ্জে জাতীয় পর্যায়ে এমন সাফল্য ছিল না। অনেকেই আমাকে দেখতে আসেন। তাদের মধ্যে ছিলেন পরবর্তীকালে অ্যাথলেটিকসে সাফল্য অর্জন করা আবদুল খালেক, শাহ আলম প্রমুখ।’ ১৯৬২ সালে তিনি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অংশ নিয়ে ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে প্রথম হন।
সময় ও বয়সের কাছে হার মেনেছে আরজান খানের অনেক স্মৃতি। তাছাড়া ১৯৭১ সালে হারিয়ে ফেলেছেন জীবনের নানা সঞ্চয়। যে কারণে এক ধরনের শূন্যতার সঙ্গে তার বসবাস। কোনটা আগে কোনটা পরে, তা মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান। তারপরও তার মনে পড়ে যায় জীবনের অনেক উজ্জ্বল স্মৃতি। স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৬২ সালের কথা। আন্তঃকলেজ কিংবা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার ইভেন্ট। কাজী আবদুল আলীম ছিলেন স্টার্টার। ফলস স্টার্ট কি- তখনো আমার তা রপ্ত হয়নি। ফলস স্টার্টের হুঁইসেল শুনে দৌড় শুরু করলে আলীম ভাই রেগে-মেগে আমাকে বলেন, কার সঙ্গে দৌড়াচ্ছ তুমি জান। কামরুল ইসলাম হলো ইস্ট পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন। কামরুল তোমাদের সঙ্গে দৌড়াচ্ছে। এরপর ভুল হলে তোমাকে বহিষ্কার করা হবে। আমি তার কথা শুনে তাজ্জব হয়ে যাই। কামরুল ইসলাম হলেন খ্যাতিমান অ্যাথলেট। পূর্ব পাকিস্তান অ্যাথলেটিকসে তিনি টানা অনেকবার দ্রুততম মানব হয়েছেন। তিনি ছিলেন আমার কাছে স্বপ্নের মানব। হ্যান্ডসাম চেহারা। দারুণ স্টাইলিশ অ্যাথলেট। পেপারে ছাপা হওয়া তার ছবি আমি সংরক্ষণ করি। তার সঙ্গে আমার আগে কখনো দেখা হয়নি। আলীম ভাই বলার পর আমি তাকে প্রথমবারের মতো দেখি মুগ্ধ চোখে। তিনি দাঁড়ান আমার ডানদিকে। এবার স্টার্ট দেয়ার পর আমি ইচ্ছে করেই কিছুটা দেরিতে দৌড় শুরু করি। ১০ দশমিক ৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হন কামরুল ইসলাম। আমি দ্বিতীয় হই। কিন্তু পরদিন ডেইলি অবজারভার-এ এই দৌড়ের ছবি ছাপিয়ে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে আমিই প্রথম হয়েছিলাম। তখন তো আর কিছু করার নেই। ১০০ মিটারে কামরুল ভাইয়ের সম্মান রক্ষার্থে দেরিতে দৌড় শুরু করলেও ২০০ মিটারে তাকে সেই সুযোগ দেইনি। তাতে আমি প্রথম হই।’
১৯৬২ সালে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর অ্যাবোটাবাদে দুই পাকিস্তানের সেরা অ্যাথলেটদের নিয়ে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প হয়। তাতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরজান খান, জাহাঙ্গীর ফয়েজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাবিব, খান জহুর, নিমাই চাঁদ বড়ুয়া, ঢাকা বোর্ডের সিরাজ ও মেরাজ। এই ট্রেনিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১০ দিন পর ভয়ে নিমাই দেশে ফিরে আসেন। হিন্দু বলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। চার মাসেরও বেশি এই ক্যাম্পে যোগ দেন এশিয়ান গেমসে স্বর্ণজয়ী অ্যাথলেট মুবারক শাহ, আল্লাদিতা, আবদুল খালিক, মোহাম্মদ আইয়ুব, গুলাম রাজিকের মতো খ্যাতনামারাও। কোচদের মধ্যে একজন আমেরিকানও ছিলেন। এই ক্যাম্পে আমাদের অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়। সবচেয়ে বড় যেটি, আমরা এশিয়ান পর্যায়ের সেরা সেরা অ্যাথলেটের সান্নিধ্য পাই। আমাদের প্রশিক্ষণ ছিল অনেকটা আর্মি ট্রেনিংয়ের মতো। প্রতিদিন সকালে ১২ মাইল দৌড়ে আমাদের হাজিরা দিতে হত। পাহাড়ে চড়া, দড়ি বেঁধে ওপরে ওঠার মতো কঠিন কঠিন কাজ করতে হয়। সে ছিল দুরূহ ব্যাপার। আমি পাহাড়ে উঠতে ভয় পেতাম। একদিন ট্রেনিং থেকে ফাঁকি দেয়ার জন্য পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে ক্যাম্প কমান্ডার খাজা সেলিমের কাছে গিয়ে বললাম, পায়ে আঘাত পেয়েছি, ট্রেনিংয়ে যেতে পারবো না। তিনি আমাকে ট্রেনিংয়ে না পাঠালেও আমার দেহের সমান ওজনের ওয়েট নিয়ে ওয়েটলিফটিং করতে বলেন। বললেন, যতক্ষণ না বাকিরা ফিরে আসে, ততক্ষণ আমাকে এটা করতে হবে। আমি বাধ্য হয়ে তাই করি। তখন মনে মনে বলি, এরচেয়ে পাহাড়ে ওঠা ঢের সহজ ছিল।’
অ্যাবোটাবাদ ট্রেনিং চলাকালে তড়িঘড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহিদ হোসেনকে জার্মানিতে এবং ফার ইস্টের পাঁচটি দেশে সফরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরজান খান এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথমে হাবিবকে নির্বাচিত করা হলেও পরে তার বদলে খান জহুরকে নেয়া হয়। হাবিব বাদ পড়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। আর আরজান খান যেতে অস্বীকৃতি জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই চার মাসের বেশি বাড়িছাড়া। মনটা আর পরবাসে টিকতে চাচ্ছিল না। এরপর আবার অন্য কোথাও যাবার কথা শুনে আমি রীতিমত কান্নাকাটি শুরু করে দেই। আমার অপারগতার কারণে সিরাজুল ইসলামকে নির্বাচিত করা হয়।’
আরজান খান অ্যাথলেট হিসেবে ছিলেন যেমন সুপরিচিত, তেমনি ছিলেন হ্যান্ডসাম। তার থাই ছিল সুন্দর। দেখতে-শুনতেও ছিলেন আকর্ষণীয়। এ কারণে তার ভক্তের কমতি ছিল না। তার ইভেন্ট দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতেন আজকের জনপ্রিয় শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন, অ্যাথলেট সুলতানা কামাল। সুলতানার পুরো পরিবার ছিল তার অনুরাগী। ১৯৬৩ সালে ইন্টার কলেজ অ্যাথলেটিকস মিটের কথা তার বেশ মনে পড়ে। সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সেরা সেরা অ্যাথলেটকে বাদ দিয়ে জাহিদকে জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল। এ নিয়ে অ্যাথলেটিকস অঙ্গনে বেশ কথাবার্তা হয়। জার্মানি থেকে ফিরে আসার পর জাহিদ ইন্টার কলেজ মিটে অংশ নেয় ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে। এটিই তারই ইভেন্ট। তখন তার দেহে-মনে লেগে আছে জার্মানির সৌরভ। হেভি ফিটফাট। সুলতানার বড় ভাই আলমগীর আমাকে বলেন, যেভাবেই হোক জাহিদকে হারাতে হবে। আমি মনে মনে ভাবলাম, জার্মানি থেকে ট্রেনিং আসা অ্যাথলেটকে হারানো সহজ হবে না। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমি জাহিদকে হারিয়ে দেই। ৫৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে গড়ি নতুন রেকর্ড।’
১৯৬৩ সালে প্রথমবারের মতো ইস্ট পাকিস্তান অ্যাথলেটিকস মিটে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নিতে গিয়ে মাসলপুল হলে আর কোনো তার কিছুতেই অংশ নেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মনের দুঃখে আমি মুন্সীগঞ্জ চলে যাই। আমি চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়ি। নিজের প্রতি ধিক্কার জাগে। এমনকি আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে চেয়েছিলাম। যাই হোক, মানসিক অবসাদ নিয়ে মুন্সীগঞ্জে ফুটবল খেলায় মগ্ন হয়ে উঠি। একদিন খেলার সময় কে যেন বললো, লাহোরে পাকিস্তান মিটের জন্য আমাকে পূর্ব পাকিস্তান দলে নির্বাচিত করা হয়েছে। আমি ভেবে পেলাম না, আমাকে কেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমার তো মাসলপুল। আমি সেই পত্রিকাটি এনে দেখতে পাই, ওইদিনই বিমানের ফাইট। কীভাবে কী করবো, বুঝতে পারলাম না। আমি তাড়াহুড়ো করে লঞ্চে নারায়ণগঞ্জে এবং বাসে ঢাকায় আসি। ইপিএসএফ অফিসে গিয়ে দেখি, অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। কি মনে করে নিজের ইচ্ছেয় এয়ারপোর্টে যাই। গিয়ে দেখি, ওতিত কফি আমাকে দেখে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমেরিকান দূতাবাসের এই কাউন্সিলর আমাকে, হাফিজকে (পরে মেজর ও মন্ত্রী) খুব পছন্দ করতেন। বুঝতে পারলাম, আমাকে দলভুক্ত করার ক্ষেত্রে তার একটা ভূমিকা আছে। তার কথা হলো, আমি দৌড়াতে পারি আর না পারি, গেমসে গেলে দেখার একটা অভিজ্ঞতা হবে। টিমে ছিলাম আমরা চারজন। চারজনেরই টিকিট কাটা ছিল। আমি না আসায় আমার পরিবর্তে আরেকজনকে নেয়া হয়। আমাকে দেখে তার মুখ কালো হয়ে যায়। তখন কফি বলেন, অসুবিধা নেই। পাঁচজনই যাবে। একজনের টিকিট তিনি কেটে দেবেন। আমরা পাঁচজনই যাই। মাসলপুল থাকায় আমি কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারিনি।’
মাসলপুলটা ছিল আরজান খানকে যথেষ্ট ভুগিয়েছে। তিনি বলেন, ‘১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট আমার ইভেন্ট হলেও যখনই তাতে অংশ নিয়েছি, তখনই আমার মাসলপুল করেছে। এ কারণে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে আমি হার্ডলস ও রিলেতে ঝুঁকে পড়ি।’
১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ইস্ট পাকিস্তান অ্যাথলেটিকস মিটে ৪ গুণন ১০০ ও ৪ গুণন ৪০০ মিটার রিলেতে তিনি সাফল্য দেখান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিকসে ১০০, ২০০, ৪০০ মিটার স্প্রিন্ট ও হার্ডলসে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। অবশ্য শেষদিকে ১০০ মিটারে অংশ নিতেন না। ১৯৬৫ সালে তিনি যোগ দেন ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং কাবে। ইস্ট পাকিস্তান অ্যাথলেটিকস মিটে তিনি ৪০০ মিটার হাডর্লসে অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক জয় করেন। ৪ গুণন ১০০ এবং ৪ গুণন ৪০০ মিটার ইভেন্টে মোহামেডান সাফল্য দেখায়। সেই দলে তিনিও ছিলেন। ৪ গুণন ১০০ মিটারে তার সঙ্গে ছিলেন সিরাজুল ইসলাম, বশীর আহমেদ ও হাফিজউদ্দীন আহমদ। আর ৪গুণন ৪০০ মিটারে তার সঙ্গে ছিলেন কাজী আলমগীর। ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে তিনি অংশ নেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই আমার মাসলপুল হয়, তার ওপর সেবার সিরাজুল ইসলাম ছিলেন দারুণ ফর্মে। যে কারণে সুবিধা হবে না মনে করে আমি তাতে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকি।’ ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর তিনি ৪০০ মিটার হার্ডলসে এবং ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত মোহামেডানের হয়ে রিলেতে জয় করেন স্বর্ণপদক। ১৯৬৭ সালে তিনি হার্ডলসে রেকর্ড গড়েন। ১৯৬৬-৬৭ সালে ইরানের রাজার সিংহাসন আরোহণ উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজন করা হয় করোনেশন ডে অ্যাথলেটিকস মিট। তাতে তিনি দ্রুততম মানব হন। দ্বিতীয় হন সান্টু। এছাড়া চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় ১০০ ও ২০০ মিটার ইভেন্টে অংশ নিয়ে সাফল্য দেখান।
অ্যাথলেটিসকে স্মরণীয় ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৯৬৫-৬৬ সালে টিঅ্যান্ডটি মিটে আমি অংশ নেই ১০০ মিটার স্প্রিন্টে। তাতে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আবদুল খালেক। আমার বেশ জুনিয়র। তাছাড়া আগের বছরের দ্রুততম মানব। তাতে দু’জনে যৌথভাবে প্রথম হই। ২০০ মিটারে প্রথম হন মাহবুব এবং আমি দ্বিতীয় হই। ৪০০ মিটারের হিটে মাহবুব সবার আগে গিয়েও আমার জন্য টাচ লাইনের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি স্পর্শ করার পর সে টাচ লাইন স্পর্শ করে। সে ইচ্ছে করে আমাকে প্রথম বানিয়ে দেয়। এটা আমার কাছে মনে হয়েছে বিব্রতকর। আমি রেগে গিয়ে তার কাছে বিষয়টি তুললে সে আমাকে বলে, আপনি সিনিয়র মানুষ। এজন্য আগে যেতে দিয়ে আপনাকে সম্মান করলাম। আমি বললাম, বিষয়টি তুমি ঠিক করনি। দর্শকদের সামনে তুমি আমাকে অপমানই করেছো। তুমি ভেবো না যে, ফাইনালে তুমি সহজে পার পাবে। ফাইনাল রাউন্ডে আমি তাকে সত্যি সত্যিই হারিয়ে দেই। ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক গেমসের টর্চে অংশ নেয়ার জন্য একটি আমন্ত্রণলিপি আসে। তবে শর্তারোপ করা হয়, অংশগ্রহণকারী অ্যাথলেটকে স্টাইলিশ, ভালো টাইমিং ও নিজ প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতে হবে। এসব বিবেচনায় আমি নির্বাচিত হই। কিšত্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ডিরেক্টর কর্নেল (অব.) মতিউর রহমান জানান- ফান্ড নেই। এ কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে যায়। আমি ছুটে যাই উপাচার্য ড. ওসমান গণির কাছে। তিনি তখন প্রভোস্টদের নিয়ে মিটিং করছিলেন। মিটিংয়ের মধ্যে ঢুকে আমি আমার সমস্যার কথা বললাম। সবাই আমাকে কম-বেশি চিনতেন। একজন প্রভোস্ট ৫০০ টাকা দিতে সম্মত হন। সে সময় এই টাকায় বিমানের টিকিট হয়ে যেত। যাই হোক, আমি লাহোর যাই। আমন্ত্রিত না হওয়া সত্ত্বেও আমার সহযোগিতায় নিজ খরচে আমার সঙ্গে যান খালেদ রব। টর্চ ক্যারি করাটা ছিল খুবই সম্মানজনক। পুরো পাকিস্তান থেকে ১২ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। আমাকে লাহোরের স্মথ রোডে আড়াই মাইল টর্চ নিয়ে দৌড়ানোর জন্য দেয়া হয়। বাঙালি হিসেবে পরিচয় জানার পর আমাকে নিয়ে লাহোরের কয়েকজন ছেলে উল্টাপাল্টা উত্তেজক কথাবার্তা বলেন। এতে আমি ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের আক্রমণ করতে গেলে অন্যরা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। যাই হোক, পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে অলিম্পিক টর্চ বহনের গৌরব অর্জন করি।’
ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে আঘাত পাওয়ায় ১৯৬৮ সালের তিনি অ্যাথলেটিকসে অংশ নিতে পারেননি। অবশ্য স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় অ্যাথলেটিকসে শেষবারের মতো অংশ নেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৪০০ মিটার হার্ডলসের হিটে আমি টিকলেও পারফরম্যান্স খুব বেশি ভালো ছিল না। এক হিট থেকে দু’জন সুযোগ পেতেন। আমাদের সঙ্গে তৃতীয় হয় ওবাইদুল্লাহ খান (পরবর্তীকালে কর্নেল)। তিনি আমাকে বলেন, আমি সরে দাঁড়ালে তিনি ফাইনাল রাউন্ডে অংশ নিতে পারেন। আমি তাকে বললাম, তিনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে, পদক পাবেন, তাহলে আমি নাম প্রত্যাহার করে নিতে পারি। তিনি আমাকে আশ্বাস দিলে আমি সরে দাঁড়াই। ওবাইদুল্লাহ খান অবশ্য কথা রেখেছিলেন। তিনি তৃতীয় হন।’
আরজান খান অল্প কিছুদিন ফুটবলও খেলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জে আমি ফুটবল খেলতাম। গায়ে শক্তি ছিল, তাই খেলতাম গা-জোয়ারি ফুটবল। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে আমার আবাসিক হল ছিল ঢাকা হল। আমার রুমমেট ছিলেন ওয়ারীর ফুটবলার মাহমুদ হাসান। ইন্টার হল ফুটবল খেলায় মাহমুদের জ্বর হলে আমাদের হলের মনিরুল হক আমাকে বললেন, তুমি তো দৌড়াতে পার। তাহলে ফুটবলও খেলতে পারবে। আমি রাজি হয়ে যাই। মাহমুদের পরিবর্তে স্টপার পজিশনে খেলি। ভালোই খেলেছিলাম। এরপর আমি আমাদের হলের অপরিহার্য খেলোয়াড়ে পরিণত হই। চট্টগ্রামে রোনাল্ড শিল্ডে প্রতাপ শংকর হাজরার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে খেলি। আমার খেলা দেখে রণজিত দাস, এস এ জামান মুক্তা আমাকে ঢাকা প্রথম বিভাগ লীগে আজাদ স্পোর্টিং কাবের হয়ে খেলতে বলেন। আমি ছিলাম স্টপ-গ্যাপ। যখন যে পজিশনে প্রয়োজন পড়তো, তখন সে পজিশনে খেলতাম। সে সময় শক্তিশালী দল হয়েও মোহামেডান আজাদের সঙ্গে পারতো না। মোহামেডানের সঙ্গে আমাদের খেলা। আমাদের গোলকিপার সান্টু আর মোহামেডানের রানা। আমি রাইট উইং দিয়ে ঢুকে পড়ে রানাকে এমনভাবে পেয়ে যাই, অনায়াসেই গোল করতে পারি। আমি তা না করে ২০ গজ দূরে লেফট উইংয়ে দাঁড়ানো নজরুলকে বল দেই। নজরুল তা বারপোস্টের ওপর দিয়ে মারেন। তখন তো আজাদের তেমন কোনো সমর্থক ছিল না। কিšত্ত মোহামেডানের বিপক্ষের দর্শকরা আজাদকে সমর্থন দিচ্ছিলেন। এই গোল মিস হওয়ায় তারা আমাকেই যাচ্ছেতাই বলে গালি দিতে থাকেন। এরপর আমি আর ফুটবল না খেলার সিদ্ধান্ত নেই। যে খেলার জন্য বাবা-মাকে পর্যন্ত গালি খেতে হয়, তেমন খেলা আমার দরকার নেই। তবে রণজিত দা’র অনুরোধে মাঝেমধ্যে খেলেছি। আরেকটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। ১৯৬৪ সালে মানিকগঞ্জে খেলতে যাই চেয়ারম্যান ইলেভেনের হয়ে। আমাদের দলে আমি ছাড়া উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় ছিলেন ওবাইদুল্লাহ খান। দলটি গড়ে তোলা হয় জোড়াতালি দিয়ে। ফাইনালে আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল কন্টাক্টর একাদশ। বলা যায়- সে দলে পুরো পাকিস্তান জাতীয় দল খেলে। বশির আহমদ, প্রতাপ শংকর হাজরা ছাড়া বাদবাকি সবাই ছিলেন মাকরানি ফুটবলার। দুর্ধর্ষ দল। খেলার আগে বলাবলি হতে থাকেÑ আমরা ১৫/১৬ গোল হজম করবো। এ নিয়ে উপহাস ও বিদ্রƒপাত্মক মন্তব্য করা হতে থাকে। আমরাও মানসিকভাবে তেমন প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। কিন্তু খেলার ১০ মিনিটের মধ্যে আমার ক্রস থেকে রাইট উইং ওবাইদুল্লাহ দু’গোল দিলে প্রতিপক্ষের মাথা গরম হয়ে যায়। তারা জানবাজি রেখে খেলে ২-২ গোলে সমতা আনে। তাতেই আমাদের পক্ষ খুব খুশি হয়। ওইদিন আমাদের খাসি জবাই করে খাওয়ানো হয়।
আরজান খান আজাদের হয়ে ১/২টি হকি ম্যাচও খেলেন। ক্রিকেট খেলেছেন শান্তিনগরের একটি দলের হয়ে। ক্রিকেট খেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গায়ের জোরে বল করতাম। একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেটে ঢাকা হলের হয়ে খেলার সময় প্রতিপক্ষের শামীম কবীরকে ৯৬ রানের মাথায় আউট করে দেই। আরেকবার মুন্সীগঞ্জ যায় ন্যাশনাল স্পোর্টিং কাব। সে কাবে ছিলেন কামরুজ্জামান, নূরুল ইসলাম অনুরা। ন্যাশনাল স্পোর্টিং কাব প্রথমে ব্যাট করে ১৫০ রানের মতো করে। জবাবে অল্প রানেই আমাদের ৪/৫টি উইকেট পড়ে যায়। এ অবস্থায় আমি ও কালিপদ ক্রস ব্যাটে ধুম-ধাড়াক্কা খেলে ড্র করতে সক্ষম হই।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে সুইমিং, ওয়াটারপোলো, ঢাকা হলের হয়ে ভলিবল খেলেন তিনি।
১৯৬৮ সালে ঘোড়াশাল সার কারখানায় চাকরিতে যোগ দেয়ার পর জাতীয় পর্যায়ের খেলাধুলার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে ঘোড়াশাল সার কারখানার খেলাধুলায় যুক্ত ছিলেন। তিন কন্যা ও এক পুত্রের জনক আরজান খানের দুই মেয়ে অ্যাথলেট হিসেবে পরিচিতি পান। বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা ফোরা ১৯৮৪ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ১০০, ২০০ মিটার ¯স্প্রিন্ট ও লংজাম্পে দ্বিতীয় হন। একই বছর বাংলাদেশ জুট মিলস মিটে লংজাম্প ও ১১০ মিটার হার্ডলসে প্রথম হয়ে চমক দেখান। ১৯৮৫ সালে নেপালে দ্বিতীয় সাফ গেমসে রিলেতে তৃতীয় হওয়া বাংলাদেশ দলে তিনি ছিলেন। ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে মাসলপুলের কারণে দ্বিতীয় হন। এছাড়া রিলে দলের হয়ে স্বর্ণ পান। ছোট মেয়ে ফাহমিদা সুলতানা জাতীয় স্কুল প্রতিযোগিতায় ১০০, ২০০ মিটার স্প্রিন্ট ও লংজাম্পে প্রথম হন। ১৯৮৫ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে চতুর্থ হন। মেয়েদের খেলাধুলার সুবাদে আরজান খান অ্যাথলেটিকসে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৪ সাল থেকে জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় জাজ ও চিফ জাজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নব্বই দশকে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের যুগ্ম-সম্পাদক ও সদস্য ছিলেন। ১৯৯১ সালে মালয়েশিয়ায় এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে বাংলাদেশ দলের দলনেতা হিসেবে যোগ দেন। সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১৯৪৫ সালের ২১ জুলাই নরসিংদীর শিবপুরে তার জন্ম। যদিও জন্ম সালটা আরো আগে। কাস ফাইভে পড়ার সময় চলে যান মুন্সীগঞ্জে খালার বাসায়। ২০০৩ সালে ঘোড়াশাল সার কারখানা থেকে ডিজিএম হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন। স্ত্রী নাসরিন খান।
নিজেদের সময়ের অ্যাথলেটিকস প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘আগে খাবার-দাবার ভালো ছিল। স্ট্রেন্থও ভালো ছিল। তবে কোচ ছিল না। এ কারণে নিয়ম-কানুন তেমন জানা ছিল না। প্রতিযোগিতাও হতো কম। প্রতি বছরের শীতকালে একবার। এখন তো অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কোচ আছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা আছে। নির্দিষ্ট ইভেন্টের বাইরে কেউ অন্য কোনো বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা চিন্তাও করেন না।’
নিজের দেখা সেরা অ্যাথলেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খন্দকার আবুল হাসান ব্রডজাম্প ও হাইজাম্প, বশির আহমদ ১০০ মিটার, মেজর (অব.) হাফিজ ২০০ মিটার¯স্প্রিন্ট, সিরাজ ১০০ মিটার স্প্রিন্ট, মেরাজ পোলভল্ট, কাজী আলমগীর দূরপাল্লায়, এসি চাকমা ১১০ মিটার হার্ডলসে, জাহাঙ্গীর ফয়েজ ১১০ মিটার হার্ডলস, আলতাফ হোসেন হপ-স্টেপ জাম্প, ফখরুদ্দীন আহমদ মাঝারি পাল্লার, জেমস জয় মল্লিক, আবদুল খালেক ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট, শাহ আলম ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট এবং শাহ আলম (মরহুম) ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দুর্দান্ত ছিলেন। তবে মেরাজ একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে একটু পিছিয়ে পড়ে। পোলভল্টে অসাধারণ হওয়া সত্ত্বেও কোচ মেজর হামিদের চালাকির কাছে হার মেনে ১৯৬২ সালে অ্যাবোটাবাদে হার্ডলসে প্রশিক্ষণ নেন।’
একটা সময় আরজান খান মাঠে নামলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হতো। তার দৌড় ও তাকে দেখার জন্য মাঠে ভিড় জমে যেতো। তিনি ছিলেন স্টাইলিশ অ্যাথলেট। এখনও পাঁচ ফুট আট ইঞ্চির শারীরিক কাঠামো দেখলে কিছুটা হলেও তা আঁচ করা যায়। কিন্তু সময় ও বয়স কেড়ে নিয়েছে তার গতি। অতীতের কীর্তিটা এখন তার গৌরবময় স্মৃতি হয়ে আছে। #
১৬-৩-২০০৮

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা ক্রিকেট সাহিত্য এবং শঙ্করীপ্রসাদ বসু / দুলাল মাহমুদ

আছি ক্রিকেটে আছি ফুটবলেও

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

ক্রীড়া সাংবাদিকতার মূল্যায়নের দিন/ দুলাল মাহমুদ

সোনালি অতীতের দিনগুলো-২ / বশীর আহমেদ

‘ফ্লাইং বার্ড’ বলাই দে/ দুলাল মাহমুদ

‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’ / দুলাল মাহমুদ

মুহাম্মদ কামরুজ্জামান : ক্রীড়া সাংবাদিকতায় মহীরুহ/ দুলাল মাহমুদ

ফুটবলের সৌন্দর্য, সৌন্দর্যের ফুটবল / দুলাল মাহমুদ

এশিয়ানরা কি কেবলই শোভাবর্ধন করবে? দুলাল মাহমুদ