ফিল সিমন্স কি অনুপ্রেরণা হতে পারবেন? / দুলাল মাহমুদ






ক্রিকেটার হিসেবে খুব বেশি হাঁকডাক ছিল না। মাঝারি মানের অল-রাউন্ডার ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণযুগের পড়ন্ত বেলায় খেলেছেন প্রায় এক যুগ। এ কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একদমই অপরিচিত নন। মূলত মারকুটে ব্যাটসম্যান ছিলেন। টপ-অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে কখনো-সখনো দলকে দেখিয়েছেন জয়ের মুখ। ২৬ টেস্টে সেঞ্চুরি একটি ও হাফ-সেঞ্চুরি চারটি। ১৪৩টি ওয়ান ডে ম্যাচে শতক পাঁচটি ও অর্ধ-শতক ১৮টি। মিডিয়াম পেসার হিসেবে মাঝে-মধ্যে এনে দিয়েছেন ব্রেকথ্রু। টেস্টে মাত্র চারটি পেলেও ওয়ানডেতে উইকেটের সংখ্যা ৮৩টি। সব মিলিয়ে ক্যালিপসো ক্রিকেটারদের মতো সাড়া জাগানো ছিলেন না। তিনি ফিল সিমন্স। বয়স ৫২।

অপর জনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন। কিন্তু তেমনভাবে আলোচিত নন। গড়পড়তা মানের ক্রিকেটার ছিলেন। শ্রীলঙ্কার গৌরবোজ্জ্বল দিনে খেলেছেন প্রায় এক দশকের কাছাকাছি। অল-রাউন্ডারই ছিলেন। ব্যাট হাতে টেস্ট কিংবা ওয়ান ডে ম্যাচে কোনো সেঞ্চুরি নেই। ফিফটি যথাক্রমে আট ও চারটি। মিডিয়াম পেসার হিসেবেও নামডাক নেই। উইকেটপ্রাপ্তির সংখ্যা টেস্টে ১৭ এবং ওয়ানডেতে ১৪। ক্রিকেটার হিসেবে তেমনভাবে উজ্জ্বলতা দেখাতে পারেননি। তিনি চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বয়স ৪৭।

একটু এদিক-সেদিক হলেও ফিল সিমন্স এবং চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অনেকটা সমসাময়িক ক্রিকেটার। হাথুরুসিংহের তুলনায় সিমন্সের সাফল্য কিছুটা বেশি। টেস্টে না হলেও ওয়ান ডেতে এই দুই ক্রিকেটার বেশ কয়েকবার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছেন। তাতেও সাফল্যের পাল্লায় এগিয়ে আছেন সিমন্স। দলগত এবং ব্যক্তিগতভাবে দেখিয়েছেন সেরা নৈপুণ্য। সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। হয়েছেন একাধিকবার প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ। হাথুরুসিংহের ওয়ান ডে ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং নৈপুণ্য সিমন্সের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। বল হাতে সিমন্সকেও তিনি ফিরিয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু তারপরও দু’জনের যে খতিয়ান, তাতে উজ্জ্বলতা বেশি ফিল সিমন্সেরই।

প্রশ্ন হতে পারে, সাবেক এই দুই ক্রিকেটারকে নিয়ে কেন টানাটানি? এই দুই অল-রাউন্ডার খেলোয়াড়ি জীবন শেষে বেছে নিয়েছেন কোচিং ক্যারিয়ারকে। বর্তমানে সিমন্স আয়ারল্যান্ডের কোচ। আর হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের। এটাই কি কারণ? সেটা অবশ্য পুরোপুরি নয়। এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী এই দুই দলের পরস্পরের মুখোমুখি হওয়ার খুব বেশি সম্ভাবনা নেই। অন্তত গ্রুপ পর্বে তো নয়ই। দুই দলই খেলছে বিপরীত দুই গ্রুপে। অবশ্য বিশ্বকাপের অনুশীলন ম্যাচে হাথুরুসিংহের বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয় সিমন্সের আয়ারল্যান্ড। আসলে যে কারণে এই প্রসঙ্গের অবতারণা। এবারের বিশ্বকাপে ফিল সিমন্স গড়েছেন আরেকটি আইরিশ রূপকথা। নিজের দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যেভাবে তাঁর দল জয়ী হয়, সেটা ছিল সত্যিই বিস্ময়কর ও প্রশংসনীয়। আর এটা সম্ভব হয়েছে, তাঁর কুশলী প্রশিক্ষণে। তিনি যে পথ দেখিয়ে দিলেন, সেটা হতে পারে বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের জন্য বড় অনুপ্রেরণা। তিনি কি পারবেন, সেই পথ অনুসরণ করতে? নিজের দেশের বিপক্ষে জয়টা কষ্টদায়ক হলেও পেশাদার কোচদের কাছে সেটা সাফল্যের নিদর্শন হিসেবেই বিবেচিত হয়। তাছাড়া শ্রীলঙ্কাকে হারানো তো অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়। দু’দলের ৩৭ ম্যাচে চারবার তো জয়ী হয়েছে টাইগাররা। আর এবার যদি লঙ্কানদের হারানো যায়, তাহলে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলার পথ অনেকটা সুগম হয়ে যাবে। পেশাদার কোচ উপুল চন্ডিকা হাথুরুসিংহে নিজের রেটিং বাড়ানোর জন্য নিশ্চয়ই সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবেন না।


dulalmahmud@yahoo.com             

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

আছি ক্রিকেটে আছি ফুটবলেও

ক্রীড়া সাংবাদিকতার মূল্যায়নের দিন/ দুলাল মাহমুদ

‘ফ্লাইং বার্ড’ বলাই দে/ দুলাল মাহমুদ

‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’ / দুলাল মাহমুদ

বহুদর্শী ক্রীড়াবিদ মনিরুল হক/ দুলাল মাহমুদ

ফুটবলের সৌন্দর্য, সৌন্দর্যের ফুটবল / দুলাল মাহমুদ

বিশ্বের পরাশক্তি বিশ্ব ফুটবলের খর্ব শক্তি / দুলাল মাহমুদ

এ কেমন নিষ্ঠুরতা? দুলাল মাহমুদ

ফুটবলে প্রথম বাঙালি স্টপার মোবাশ্বার/ দুলাল মাহমুদ