স্বপ্ন আছে বাস্তবায়ন নেই

আমরা বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। আর এই স্বপ্নের পরিধি বোধকরি আকাশের থেকেও বড়। যে কারণে বড় বড় বিষয় নিয়ে মেতে থাকতেই আমরা পছন্দ করি। ছোট-খাট বিষয় নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই। এমনকি নিজের দেশকে অবহেলা করতেও খুব একটা দ্বিধা হয় না। এই তো কয়েক দিন আগে অনুষ্ঠিত হলো ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফুটবল। ফুটবলের এই মহোৎসবের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব যোজন যোজন। তাতে কি? বিশ্বকাপে বাংলাদেশ না থাকুক, বিশ্বকাপ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে তো বাধা নেই। এ কারণে ‘দ্য গ্রেটেষ্ট শো অন আর্থ’ নিয়ে বাংলাদেশে উন্মাদনার কোনো কমতি ছিল না। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি দলেরই কম-বেশি সমর্থক বাংলাদেশে আছে। আর ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বাংলাদেশে তাঁদের অনুরাগীরা যা করেন, তার কোনো তুলনা চলে না। এই দুই দেশের যত পতাকা বাংলাদেশে উড়েছে, তত পতাকা ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনায়ও উড়ে না। বিশ্বকাপ নিয়ে এ দেশের মানুষের এই যে স্বপ্ন, এরসঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তবুও স্বপ্ন কিন্তু থেমে নেই। ফুটবল অনুরাগীরা তো ভালো ফুটবলের সমঝদার হিসেবেই নিজেদের দাবি করেন। এ কারণে তাঁরা বিশ্বকাপ, ইউরোপীয় লিগের মতো বড় বড় আসর নিয়েই মেতে থাকেন। দেশের ফুটবল এখন আর তাঁদের আকৃষ্ট করতে পারে না। অবশ্য এজন্য তাঁদেরকে অভিযুক্ত করারও কোনো সুযোগ নেই। দেশের ফুটবলের যে হাল-হকিকত, তাতে ফুটবল অনুরাগীদের নিরুৎসাহিতই হওয়ার কথা। তাঁদের উৎসাহিত করার মতো তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। যে কারণে একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল হারিয়ে ফেলেছে তার সৌন্দর্য ও গ্ল্যামার।      
বড় বড় স্বপ্ন শুধু ফুটবল অনুরাগীরাই দেখেন না, ফুটবলের যাঁরা বড় কর্তা, তাঁরাও এক একজন বড় বড় স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। আর এ ক্ষেত্রে সবাইকে টেক্কা মেরেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)-এর সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশের খেলার স্বপ্ন দেখছেন একসময়ের খ্যাতিমান এই ফুটবলার। অবশ্য এটাকে তিনি স্বপ্ন মনে করছেন না। মনে করছেন বাস্তবসম্মত। ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর এমন আশাবাদের কথা তিনি জানিয়েছিলেন সাংবাদিকদের। ‘ভিশন-২০২২’ মিশন সফল করার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, ‘এখন যাঁরা ফুটবল খেলছে, তাদের নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখছি না। যাদের বয়স এখন ১০ বছর, তাদের নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখছি। তারাই পারবে আমাদের বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে। আর তাদের নিয়েই আমি কাজ করবো।’ ২০১৩ সালের ১৩ জুন জাতীয় দলের কোচ নেদারল্যান্ডসের লোডভিক ডি ক্রুইফ ও তাঁর সহকারী রেনে কোষ্টারের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিপত্র তুলে দেওয়ার সময় বাফুফে সভাপতি পুনরায় প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, ‘কাতার বিশ্বকাপে আমরা খেলবোই। এরজন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, তারজন্য আমরা প্রস্তুত। আজ থেকে এই প্রতীজ্ঞা নিয়ে আমরা মাঠে নামলাম। কাতারে আমাদের পৌঁছাতেই হবে। আর সেজন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং তা করতে আমরা প্রস্তুত।’ কিন্তু ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই বছর। যাদের বয়স ১০, তারা এখন পা দিয়েছে ১২ বছরে। অথচ বাফুফের তেমন কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। বড় কোনো তৎপরতাও চোখে পড়ছে না। বরং নেদারল্যান্ডস থেকে আনা কোচদের বেতন দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে বাফুফেকে। এ নিয়ে জলও কম ঘোলা হয়নি। বাফুফের যেখানে দিন আনি, দিন খাই অবস্থা, সেখানে বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলতে চাওয়াটা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে বৈকি। অর্থ তো বড় একটা সমস্যা তো বটেই, বাস্তবতাও কিন্তু মোটেও অনুকূল নয়। বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের র‌্যাংকিং ১৬৭। এশিয়ান পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫ নম্বরে। দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল (সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ)-এ ২০০৩ সালে টাইব্রেকারে কোনো রকমে একবারই চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ১০বার আয়োজিত এই আসরে আর কখনো শিরোপা জিততে পারেনি। দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলে যেখানে বাংলাদেশ নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পারছে না, এশিয়ান ফুটবল থেকেও যেখানে অনেক দূরে অবস্থান, সেখানে বাংলাদেশ খেলবে বিশ্বকাপে! এমন স্বপ্ন দেখা আসলেই কতটা বাস্তবসম্মত? আসলে বাস্তবতা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। কথার ফুলঝুরি ছুটিয়ে চমক দেখাতে আমাদের জুড়ি নেই।
ফুটবলের মতো ক্রিকেট নিয়েও আমাদের স্বপ্নের শেষ নেই। কত কিছুই তো আমরা করতে চাই। পরিকল্পনাও অন্তহীন। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। অথচ দেখতে দেখতে মেঘে মেঘে বেলা তো কম হলো না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ৩০ বছর হতে চলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের পথচলা। আজ অব্দি শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতে পারলো না ক্রিকেট। বরং সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটের যা অবস্থা, তাতে দৈন্যদশাই চোখে পড়ছে। ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক হয় বাংলাদেশের। এ যাবৎ ম্যাচ খেলেছে ২৮৬টি। জিতেছে ৮০টি ম্যাচে। এরমধ্যে দেশের মাটিতে ৪৬টি। জয়ের বেশির ভাগে এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বড় সবগুলো দলকে হারালেও সেই সংখ্যা খুবই সীমিত। আর সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে চলতি বছর বাংলাদেশের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ দিয়ে শুরু হয় এই ব্যর্থতা। এশিয়া কাপে আগের বারের রানার্স-আপ টাইগাররা দেশের মাটিতে এবার যে পারফরম্যান্স দেখায়, তা ছিল রীতিমতো লজ্জাজনক। একটি ম্যাচও জিততে পারেনি, এমনকি ক্রিকেটের নবীন দেশ আফগানিস্তানের কাছে হেরে খুইয়েছে মান-সন্মান। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ দীর্ঘ দিন পর বাংলাদেশ সফরে আসে ভারতীয় দল। গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের বাদ দিয়ে মূলত দ্বিতীয় সারির একটি দল পাঠায় ভারত। দলটি এমন সময় পাঠানো হয়, যখন দেশে চলছে ভরা বর্ষাকাল এবং বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে মেতে উঠেছে পুরো দেশ। এ ক্ষেত্রে একটা দায়সারা মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। অনেকটা নীরব-নিভৃতে আয়োজিত হয় এই সিরিজ। এই সিরিজ নিয়ে ক্রিকেটপাগল দর্শকদের যেমন আগ্রহ ছিল না, তেমনি বৃষ্টিও প্রত্যাশামাফিক বাগড়া বাধায়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভারতীয় দলটির কাছে কেবল সিরিজই হারায়নি, বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা ছিল অত্যন্ত পীড়াদায়ক।
টেষ্ট ক্রিকেটেও বাংলাদেশের অবস্থান একদমই আশাব্যঞ্জক নয়। ২০০০ সালে ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেষ্ট অভিষেক হয়। ৮৩টি টেষ্ট খেলে বাংলাদেশের জয় মাত্র চারটিতে আর ড্র ৬টি ম্যাচে। ২০০৫ সালে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেষ্টে প্রথম জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ সফরে ভঙ্গুর ক্যারিবীয় দলের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০তে জয়ী হয় টাইগাররা। এরপর সর্বশেষ ২০১৩ সালের এপ্রিলে জিম্বাবুয়ে সফরে প্রথম টেষ্টে হারার পর দ্বিতীয় টেষ্টে জিতে সিরিজে সমতা আনে টাইগাররা। দুর্বল জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ছাড়া বাংলাদেশ আর কোনো দেশের বিপক্ষে টেষ্ট জিততে পারেনি। প্রায় ১৪ বছর বয়সী একটি টেষ্ট দলের এই পারফরম্যান্স মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। দীর্ঘমেয়াদী ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে যে অবহেলা দেখানো হয়, তাতে টেষ্ট ক্রিকেটে আমরা কীভাবে জয়ের আশা করি?
টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ৪০টি ম্যাচ খেলে জয় ১১টিতে। সংক্ষিপ্ত ভার্সনের এই ক্রিকেটেও বাংলাদেশ প্রত্যাশিত নৈপুণ্য দেখাতে পারছে না।
এছাড়া ক্রিকেটে একের পর এক এমন সব ঘটনা ঘটছে, যা দেশের ক্রিকেটের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)-এ স্পট ফিক্সিং নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আট বছরের জন্য ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের আলোচিত মুখ মোহাম্মদ আশরাফুল। এছাড়াও সাজা পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটার কৌশল লোকুয়ারাচ্চি, নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার লু ভিনসেন্ট এবং বিপিএলে অংশগ্রহণকারী দল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এরফলে বাংলাদেশ আশরাফুলের মতো একজন মেধাবী ক্রিকেটারকেই হারায়নি, হারিয়েছে দেশের সুখ্যাতিও। আশরাফুলের শূন্যতা যেমন পূরণ করা না গেলেও প্রায়শই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন শূন্যতার। নীতিমালা ভঙ্গ করায় বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। একইসঙ্গে সাকিব ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বাইরের কোনো লিগ খেলতে পারবেন না। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, সাকিব আল হাসানের বড় ধরনের আচরণগত সমস্যা রয়েছে। তাঁর আচরণ এতই খারাপ যে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ক্রিকেটার আর পাওয়া যায়নি। তাঁর এই আচরণ বাংলাদেশ দল ও দলের খেলার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। সাকিবকে দেওয়া শাস্তি নিয়ে সারা দেশে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পক্ষে-বিপক্ষে তৈরি হয়েছে দু’টি মত। তবে সমালোচনার ঝড়ই উঠেছে বেশি। অনেকেই বলছেন, শাস্তিটা বেশি হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিটা হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের পতাকাকে যাঁরা তুলে ধরেছেন, তাঁদের মধ্যে অনতম সাকিব আল হাসান। বিশ্বের সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। পরিসরটা যতই সীমিতই হোক, বিশ্বের সেরা হওয়াটা নেহাত চাট্টিখানি কথা নয়। তাঁর এই কৃতিত্¡ে গৌরবাণ্বিত হয়েছে বাংলাদেশ। এরআগে একবার তিনি শাস্তি পেয়েছেন। সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ান ডে সিরিজের দ্বিতীয় খেলার পর টেলিভিশনের সামনে অশালীন অঙ্গ-ভঙ্গি করায় তাঁকে তিন ম্যাচের জন্য তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয়। এ কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় এবং এশিয়া কাপ ক্রিকেটে ভারত এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনি খেলতে পারেননি। সাকিবের এ ধরনের আচরণ অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। সেটা মেনে না নিয়েও বলা যায়, শাস্তিটা এমন হওয়া উচিত, যাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। অর্থ-বিত্ত-খ্যাতিতে সাকিব এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছেন, তাতে হয়তো বাংলাদেশ দলে তাঁর আর না খেললেও কিছু আসবে যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখনও তাঁকে অনেক বেশি প্রয়োজন। আগষ্টে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ সফরে যাবে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বড় কথা, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অষ্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। যদিও বিশ্বকাপের অল্প কিছু সময় আগেই শেষ হবে সাকিবের সাজার মেয়াদ। কিন্তু মানসিক প্রস্তুতির একটা ব্যাপার আছে। দীর্ঘ সময় সাজা ভোগের পর হঠাৎ করে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটা সহজ নয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বপ্ন পূরণের কা-ারি যাঁরা, তাদের এ বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন। অবশ্যই নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলাটা বাধ্যতামূলক, তবে সেটা দেশের ক্রিকেটের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে নয়।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ২০২০ সাল পর্যন্ত যে এফটিপি চূড়ান্ত করেছে, তাতেও অবহেলিত বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশ দারুণভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছে। এমনিতেই বাংলাদেশ খুব বেশি টেষ্ট খেলার সুযোগ পায় না, নতুন সূচিতে খেলার সংখ্যা আরো হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও বাংলাদেশের আর সরাসরি খেলার সুযোগ নেই বললেই চলে। এই বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে র‌্যাংকিং-এর সেরা ৮টি দেশ। বাকি দু’টি দলকে পেরিয়ে আসতে হবে বাছাই-পর্ব। বাংলাদেশ সেরা ৮-এ থাকতে পারবে না, সেটা বলা ঠিক হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো শীর্ষ ৮-এ বাংলাদেশ কখনো থাকেনি। গেল মার্চ-এপ্রিলে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও বাংলাদেশকে খেলতে হয়েছে বাছাই-পর্ব। এই বাছাই পর্ব উতরাতেও লজ্জার সামনে পড়তে হয় টাইগারদের। পুচকে হংকংও হারিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। যে ক্রিকেট নিয়ে এত গর্ব, এত মাতামাতি, এত শান-শওকত, তার অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে স্বপ্ন ভঙের বেদনাই হয়ে উঠবে আমাদের বিধিলিপি।    
আমাদের স্বপ্ন আছে, তার যেমন বাস্তবায়ন নেই, তেমনিভাবে সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই। অথচ এটা আমরা মানতে চাই না। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের বাজেট খুব বড় নয়। চাইলেও সব খেলায় পৃষ্টপোষকতা সরকারি পর্যায়ে করা সম্ভব নয়। জনপ্রিয়তা আর সাফল্যের নিরিখেই খেলাধুলাকে গুরুত্ব দেওয়াটাই ক্রীড়ানীতির মূলকথা হওয়া উচিত। কে শোনে কার কথা? ইতোমধ্যে সরকার স্বীকৃত ক্রীড়া ফেডারেশনের সংখ্যা হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে চলেছে। এ কারণে আমরা স্বপ্ন দেখেই চলছি। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারছি না। বাস্তবায়নের জন্য যে পরিকল্পনা ও দূরদর্শীতার প্রয়োজন, সেটার বোধকরি ঘাটতি রয়ে গেছে। আর এই ঘাটতি যত দিন না পূরণ করা যাবে, তত দিন আমাদের কেবলই হাপিত্যেস করতে হবে।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

আছি ক্রিকেটে আছি ফুটবলেও

‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’ / দুলাল মাহমুদ

বহুদর্শী ক্রীড়াবিদ মনিরুল হক/ দুলাল মাহমুদ

কোথায় সেই ফুটবল?

বিশ্বের পরাশক্তি বিশ্ব ফুটবলের খর্ব শক্তি / দুলাল মাহমুদ

এ কেমন নিষ্ঠুরতা? দুলাল মাহমুদ

ফুটবলে প্রথম বাঙালি স্টপার মোবাশ্বার/ দুলাল মাহমুদ

অ্যাথলেটিকসের উজ্জ্বল মুখ মীর শরীফ হাসান/ দুলাল মাহমুদ

বাস্কেটবলের বুলবুল/ দুলাল মাহমুদ