মনের বাঘে যেন না খায় / দুলাল মাহমুদ




বাংলাদেশ কি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার-ফাইনাল খেলতে পারবে? এককথায় এর উত্তর হতে পারে ফিফটি ফিফটি। বিশ্বকাপ শুরুর আগে টাইগারদের যেখানে অবস্থান ছিল, এখনও সেখানেই আছে। অবশ্য সম্ভাবনা খানিকটা বেড়েছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রত্যাশিত ও স্বস্তির জয় পাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে পাওয়া গেছে একটি মূল্যবান পয়েন্ট। আর শ্রীলঙ্কাকে ঘোষণা দিয়ে হারাবে, এমন অবস্থায় এখনও পৌঁছায়নি টাইগাররা। তবে দুর্বল ফিল্ডিংয়ের প্রদর্শনী না দেখালে লঙ্কানদের সঙ্গে খেলাটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারতো। তিন ম্যাচে এখন পর্যন্ত এটাই বাংলাদেশ দলের বড় খামতি। এই খামতি দূর করার জন্য ইতোমধ্যে নজর দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। যে দুই দলের বিপক্ষে পূর্ণ চার পয়েন্ট বলতে গেলে ‘পকেটে’ নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ অভিযাত্রায় এসেছে, তারমধ্যে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে আফগানদের সঙ্গে। এখন বাকি স্কটল্যান্ড। স্কটিশদের সঙ্গে দুই পয়েন্ট পেলে প্রথম ধাপ পেরিয়ে যাবে টাইগাররা। এরপরই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ পালে লাগবে জোর হাওয়া। তখন সহজাতভাবেই কোয়ার্টার-ফাইনাল খেলার আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে উঠবে টাইগাররা।    
ক্রিকেটটা একই উৎস থেকে পেয়েছে বাংলাদেশ এবং স্কটল্যান্ড। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের অবদান। এমনিতে দুই দলের খুব একটা মিল নেই। স্কটল্যান্ড সব দিক দিয়েই সমৃদ্ধ দেশ। ইউরোপের বাণিজ্যিক, বুদ্ধিভিত্তিক ও শিল্প শক্তিকেন্দ্রগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয় স্কটিশরা। তবে স্বায়ত্তশাসন পেলেও তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন হয়ে আছে অধরা। ইংল্যান্ডের অংশ হিসেবে ক্রিকেটের সঙ্গে স্কটিশদের মিতালি সেই সুদূরে। দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশীদার হলেও দুঃখজনক হলেও সত্যি, ক্রিকেটে তাদের বড় কোনো অর্জন নেই। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন বিভিন্ন দেশের কত কত ক্রিকেটার। তাঁদের অনেকেই হয়ে আছেন স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। অথচ একই ঘরানার হয়েও ইংল্যান্ড জাতীয় দলে স্কটিশদের খুব বেশি উপস্থিতি নেই। ইয়ান পিবলস, মাইক ডেনিস, ডগি ব্রাউন, গ্যাভিন হ্যামিল্টনের মতো যাঁরা খেলেছেন, তাঁরাও তেমনভাবে আলোচিত নন। তবে ‘বডিলাইন’ তত্ত্বের উদ্ভাবক হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেন ডগলাস জার্ডিন। তিনি ছিলেন ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক। ব্রিটিশ ভারতের মুম্বাইয়ে জন্ম নিলেও তিনি জাতিতে স্কটিশ। অবশ্য স্কটল্যান্ডের সঙ্গে তাঁর তেমন যোগাযোগ ছিল না। ক্রিকেটটা ইংলিশদের আভিজাত্যের প্রতীক হলেও স্কটিশদের হৃদয়ে সেইভাবে স্থান করে নিতে পারেনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও বড় কোনো চমক দেখাতে পারেনি। আইসিসির পূর্ণ সদস্য কোনো দেশকেও হারাতে পারেনি। হারাতে পারেনি বলে যে হারাতে পারবে না, সে কথা বলার অবকাশ নেই। 
স্কটল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবজনক। জয়ের ভাণ্ডার কানায় কানায় পরিপূর্ণ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে প্রথম মুখোমুখি হয় এই দুই দেশ। বাংলাদেশ ২২ রানে জিতলেও জয়টা সহজ ছিল না। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে হাল ধরেছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। জবাবে গ্যাভিন হ্যামিল্টন যেভাবে ব্যাট করছিলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি রান আউট না হলে জয় পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়তো। সেটাই ছিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে দুই ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজ খেলার জন্য বাংলাদেশ সফরে আসে স্কটল্যান্ড। চট্টগ্রামে প্রথম ম্যাচে সাকিব আল হাসান, আফতাব আহমেদ এবং ঢাকায় মাশরাফি বিন মর্তুজা, আবদুর রাজ্জাক, আফতাব আহমেদের নৈপুণ্যে সহজেই জয় পায় স্বাগতিকরা। এরপর আট বছর পেরিয়ে গেছে। ওয়ান ডে ক্রিকেটে দুই দেশের আর দেখা হয়নি। বাংলাদেশের সেই দলের তিনজন মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান এবারের বিশ্বকাপ দলের প্রধান নির্ভরতা।
এবারের বিশ্বকাপেও স্কটল্যান্ড প্রথম তিন ম্যাচে হেরেছে নিউজিল্যান্ড, ইংলান্ড ও আফগানিস্তানের সঙ্গে। এই স্কটিশদের পরোয়া করার কিছু নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের আছে গৌরব করার মতো অহংকার। বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষ ভোটের রায়ে প্রত্যাখ্যান করেছিল পাকিস্তানকে। আত্মবিশ্বাসহীন স্কটিশরা সেটা পারেনি। গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠরা স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়নি। যুক্তরাজ্যের অধীনতাই তাদের বিধির বিধান হয়ে আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ‘টাইগার’ নামে পরিচিত হলেও অনেক সময় মনের বাঘই তাদের সন্ত্রস্ত করে রাখে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মনের বাঘে যদি না খায়, বনের বাঘ কিছু করতে পারবে না। তবে সাবধান থাকতে হবে। শত হলেও প্রতিপক্ষ ইউরোপীয় দেশ বলে কথা।


dulalmahmud@yahoo.com    

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা ক্রিকেট সাহিত্য এবং শঙ্করীপ্রসাদ বসু / দুলাল মাহমুদ

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

ক্রীড়া সাংবাদিকতার মূল্যায়নের দিন/ দুলাল মাহমুদ

সোনালি অতীতের দিনগুলো-২ / বশীর আহমেদ

আমাদের ফুটবলাররা

‘ফ্লাইং বার্ড’ বলাই দে/ দুলাল মাহমুদ

‘স্বপ্ন দিয়ে তৈরী সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা’ / দুলাল মাহমুদ

ফুটবলের দেশে বিশ্বকাপ / দুলাল মাহমুদ

এই ব্রাজিল সেই ব্রাজিল নয় / দুলাল মাহমুদ