ফুটবলে জীবনের জয়গান / দুলাল মাহমুদ Dulal Mahmud


ফুটবল রসের ভিয়েনে ডুবিয়ে দিতে ফিরে এসেছে দুনিয়া কাঁপানো বিশ্বকাপ। এই মহোৎসবের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় দীর্ঘ চার বছর। প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে এই বিশ্বক্রীড়া মাঠে যখন গড়ায়, তখন সারা দুনিয়া যেন বাঁধা পড়ে একই সুরে, একই অনুভবে। এই সুর, এই অনুভবে স্পন্দিত হন তাবৎ ফুটবল অনুরাগী। এর আবেদন, এর সম্মোহন অসাধারণ।
ফুটবল সর্বজনীন এক ক্রীড়া। দুনিয়ায় ফুটবল খেলা হয় না, এমন দেশের সংখ্যা বিরল। ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থার ফিফা বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ২০৯টি দেশ। এই দেশগুলোর মধ্যে কোয়ালিফাইং রাউন্ডের খেলা হওয়ার পর চূড়ান্ত পর্বে খেলে ৩২টি দেশ। সংগত কারণে বিশ্বকাপ ফুটবলের সঙ্গে একাত্ম অনুভব করে পুরো দুনিয়া। বিশ্বকাপ ফুটবল হয়ে ওঠে বিশ্বজনীন এক মহোৎসব। এই উৎসব পরিণত হয় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের এক মিলনমেলায়। এটিকে আন্তর্জাতিক উৎসব বললে অত্যুক্তি হবে না। আর কোনো উৎসব এতটা জমকালো, জমজমাট ও জাঁকজমকপূর্ণ হয় না। এতটা নিবিড় আত্মিক বন্ধন গড়ে ওঠে না অন্য কোনো কিছুতে। তাছাড়া বিশ্বকাপ ফুটবলে পাওয়া যায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ, জীবনধারা, সংস্কৃতি, আবেগ-অনুভূতি, পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে ধারণা। গড়ে তোলে সর্বজনীন এক বোধ। আর এর রেশ শুধু আয়োজক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি ছড়িয়ে পড়ে দেশে দেশে। বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রতিটি মুহুর্তের প্রত্যক্ষদর্শী কোটি কোটি দর্শক। টেলিভিশন, ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমে বিশ্বকাপ পৌঁছে যায় দুনিয়ার ঘরে ঘরে। যে কারণে দিন-রাতের ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের আবেগ-উচ্ছ্বাস-উন্মাদনায় উদ্বেলিত হয় নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটন থেকে আইসল্যান্ডের রাজধানী রেকজাভিক পর্যন্ত। খেলার জয়-পরাজয়ে দুই রকম অনুভূতি হলেও অভিন্ন ধারায় একাত্ম হয় ফুটবল দুনিয়া।  
আর এবার ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে ৬৪ বছর পর দ্বিতীয়বার আয়োজিত হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। ব্রাজিল তো উৎসব আর আনন্দের নিকেতন। যেখানে নিত্য সাম্বা নাচ হয়, রিও কার্নিভাল হয়, সমুদ্রসৈকতে রঙদার হয় জীবন, সর্বোপরি যেখানে ফুটবলের মাধ্যমে গাওয়া হয় জীবনের জয়গান, সেখানে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন মানেই তো মোহনীয় জগতের হাতছানি। যে জগতের রূপ-রস-ছন্দ-মাধুর্য হৃদয়কে ভরিয়ে দেয় পরিপূর্ণভাবে। কবিগুরুর ভাষায় ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ/ ধন্য হল ধন্য হল মানবজীবন’। মানবজীবনকে পুষ্প-পল্লবে ভরিয়ে দেওয়ার জন্য সব রকম উপকরণ নিয়ে সদা প্রস্তুত থাকে ব্রাজিল। যদিও অর্থনৈতিক সংকট, প্রতিবাদী জনগোষ্ঠী, আয়োজনে মন্থর গতি সহ নানান উত্তপ্ত বিষয় নিয়ে বিপর্যস্ত ব্রাজিল, তারপরও ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জগতের আনন্দযজ্ঞে যোগ করবে নতুন মাত্রা। ব্রাজিলীয়দের রক্তের মধ্যে এমনিতেই দোল খায় সাম্বা নাচ ও ফুটবল। যেখানে ব্রাজিল দল, সেখানেই এই দুইয়ের সংমিশ্রণ ঘটে। আর এবার তো ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ ফুটবল। এই বিশ্ব আসরকে রাঙিয়ে তুলতে নিশ্চয়ই কার্পণ্য করবেন না উৎসবপ্রিয় ব্রাজিলীয়রা। আর ফুটবলের এই মহোৎসবের আনন্দযজ্ঞে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশের ফুটবলপিপাসু দর্শকরা।       

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমাদের ফুটবলাররা-২

আমাদের ফুটবলাররা

সোনালি অতীতের দিনগুলো / বশীর আহমেদ

ফুটবলের সৌন্দর্য, সৌন্দর্যের ফুটবল / দুলাল মাহমুদ

‘ফ্লাইং বার্ড’ বলাই দে/ দুলাল মাহমুদ

প্রতিরোধের সেই দুই ম্যাচ / দুলাল মাহমুদ

ফুটবল মাঠের অন্য এক লড়াই

বিশ্বকাপ ফুটবল কেন বাংলাদেশের উৎসব? / দুলাল মাহমুদ

আমার সাঁতার জীবন-অরুন নন্দী