ভলিবল খেলোয়াড় গড়ার কারিগর মোস্তাফা কামাল/ দুলাল মাহমুদ
ক্রীড়াঙ্গনের অতি পরিচিত মুখ মোস্তাফা কামাল। গত প্রায় অর্ধ-শতাব্দীকাল তিনি ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃত্ত। নানা তার পরিচয়। কখনো খেলোয়াড়, কখনো প্রশিক্ষক, কখনো সংগঠক। এর বাইরেও নানাবিধ কর্মকান্ডের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে। তবে ভলিবলের ‘কামাল ভাই’ হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে যাদের একটুখানি আনাগোনা আছে, তাদের সবার কাছের মানুষ তিনি। ছোট-বড় সবাই তাকে শ্রদ্ধা ও সমীহ করেন। যারা তাকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন, তাকে খুব একটা বদলাতে দেখেননি। চিরতরুণ, চিরসবুজ। ঠোঁটে সদা লেগে আছে এক টুকরো মোহময় হাসি। অথচ বয়স ৬৫-এর কাছাকাছি। দেখলে সেটা অনুধাবন করা যাবে না। শরীরে একচুল মেদও নেই। ঝকঝকে। স্মার্ট। অলওয়েজ ফিটফাট। পরিপাটি। ড্রেসআপে একটুও টাল খায় না। এ বয়সেও উদ্যমশীল ও কর্মশক্তিসম্পন্ন। এখনও ছুটতে পারেন তরুণের মত। শাদা-পাকা চুল আড়াল করা গেলে তাকে যুবক হিসেবে বিভ্রম হতেই পারে! অসম্ভব ধৈর্য ও শান্ত মেজাজ। স্বভাবটাও গোছানো। কথাবার্তায় পরিমিত। বাচনভঙ্গিও সুন্দর। নোয়াখালীর সন্তান হলেও কথা বলার সময় আঞ্চলিকতার দোষে দুষ্ট নন। সব দিক দিয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তিত্ব হয়েও খেলাধুলার বাইরে তিনি জীবনকে সাজাননি। প্রথম দেখায় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির প্রধান কোনো নির্বাহী মনে হলেও জীবনটা তিনি কাটিয়ে দিলেন ক্রীড়া পরিমন্ডলে। ক্রীড়াঙ্গনকে ভালোবেসে। এ নিয়ে একটু-আধটু আক্ষেপ থাকলেও অতৃপ্ত নন তিনি।
ক্রীড়াঙ্গনকেই জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে নেন মোস্তাফা কামাল। খেলাধুলায় নিজেকে সঁপে দিয়ে এর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ব্যথা-বেদনার সঙ্গে নিজেকে গভীরভাবে জড়িয়ে ফেলেন। প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি নিয়ে কেটেছে জীবনের ফেলে আসা দিনগুলো। কখনো-সখনো গভীর হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছেন। প্রতিবন্ধকতা এসেছে। কিন্তু তাতে হতোদ্যম হননি। ভেঙ্গে পড়েননি। তিনি তো জীবনের শুরুতেই জেনেছেন- খেলাধুলায় জয় যেমন আছে, তেমনি আছে পরাজয়। এ দুটোকে মেনে নিয়েই তো খেলাধুলায় জড়িয়েছেন। তার উপলব্ধির জগতটাও তো ঠুনকো নয়। পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে কোনো কিছু গ্রহণ কিংবা বর্জন করার মত মন ও মানসিকতা তিনি স্বভাবগতভাবে তৈরি করে নিয়েছেন। এ কারণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের একটা আলাদা ভাবমূর্তি তিনি গড়তে পেরেছেন।
প্রশিক্ষক ও সংগঠক ক্যারিয়ারের আড়ালে অনেকটাই যেন হারিয়ে গেছেন খেলোয়াড় মোস্তাফা কামাল। চেনা-জানা গন্ডির বাইরে তার খেলোয়াড়ী জীবনটা বিস্মৃতির আড়ালে চাপা পড়ে গেছে। অথচ খেলোয়াড় হিসেবে বর্ণাঢ্য এক জীবনের অধিকারী তিনি। ফুটবল ও ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে ষাট দশকে তিনি ছড়িয়েছেন উজ্জ্বলতা। তার ক্রীড়াশৈলীর দীপ্তিতে উদ্ভাসিত হয়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। ভলিবলে তিনি গড়ে তোলেন নিজস্ব একটা অবস্থান। ভলিবল ইতিহাসের সফলতম ক্রীড়াবিদদের অন্যতম একজন হিসেবে তিনি বিবেচিত হয়ে থাকেন।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৪২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মোস্তাফা কামালের জন্ম। পিতাকে না দেখার এক হাহাকার নিয়ে ভূমিষ্ট হন তিনি। তবে পারিবারিক পরিবেশটি ছিল খেলাধুলার অনুকূলে। যে কারণে শৈশব থেকেই খেলাধুলার সঙ্গে নিবিড়তা গড়ে ওঠে। চাচা সিরাজুল হক ছিলেন নামজাদা ফুটবলার। চল্লিশের দশকে তিনি ছিলেন কলকাতা মোহনবাগান ক্লাবের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়। ফুটবলার হিসেবে বাড়ির আঙিনায় টানানো চাচার ছবিটি তার বুকে খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন-বীজ পুঁতে দেয়। বড় ভাই মোহাম্মদ ওমর চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টের হয়ে ফুটবল লীগে খেলেছেন। আর মেঝ ভাই খালেদ মোমিন ছিলেন অলরাউন্ডার। তিনি ফুটবল, ভলিবল ও অ্যাথলেটিক্সে কৃতিত্ব দেখান। তবে পঞ্চাশ ও ষাট দশকে ফুটবলে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ারী ও পুলিশের লেফট উইঙ্গার হিসেবে খ্যতি অর্জন করেন। মূলত মেঝ ভাই ছিলেন মোস্তাফা কামালের ফ্রেন্ড, ফিলোসফার ও গাইড। তার খেলোয়াড়ী জীবন তাকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে। মেঝ ভাই যে যে খেলায় দক্ষতা দেখিয়েছেন, তিনিও সেসব খেলায় আকৃষ্ট হন।
নোয়াখালীর বামনী হাইস্কুলে পড়ার সময় খেলোয়াড় হিসেবে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটতে থাকে। অ্যাথলেটিক্সের ৪০০, ৮০০ ও ১৫০০ মিটার স্প্রিন্টের পাশাপাশি ফুটবল ও ভলিবলে তিনি সাফল্য দেখান। ১৯৫৮ সালে আন্তঃজেলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন নোয়াখালী জেলা দলের। খেলাটা শরীরে এমনভাবে দোলা দিয়ে যায় যে, ম্যাট্রিক পরীক্ষা চলাকালে এলাকার ফুটবল ফাইনালে অংশ নিয়েছিলেন। ম্যাট্রিক পাস করে ১৯৫৯ সালে ভর্তি হন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। এই কলেজে ভর্তি হওয়ার পর জাতীয় পর্যায়ের খেলাধুলায় নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। কলেজের হয়ে অংশ নেন বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। ১৯৬১ সালে একদিন আউটার স্টেডিয়ামে জগন্নাথ কলেজের হয়ে ভলিবল খেলার সময় চোখে পড়ে যান সে সময়কার অলরাউন্ডার কৃতী ক্রীড়াবিদ খন্দকার আবুল হাসানের। ভলিবল খেলোয়াড়, অ্যাথলেট ও ফুটবলার হিসেবে খ্যাতিমান আবুল হাসান তাকে নিয়ে যান সে সময়কার ছাত্রদের কাছে সমাদৃত আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবে। সে সময় প্রথম বিভাগ লীগে আজাদের ভলিবল দলটি ছিল দুর্দান্ত। সে দলে সুযোগ করে নেয়াটা সহজ ছিল না। কিন্তু মোস্তাফা কামাল তার সহজাত প্রতিভা দিয়ে ১৯৬২ সাল থেকে আজাদের অংশ হয়ে যান। লিফটার হিসেবে তার কোনো জুড়ি ছিল না। তিনি আলতো করে বল এমনভাবে তুলে দিতেন, তাতে স্ম্যাশারদের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যেত। দল পয়েন্ট তুলে নিত ফটাফট। অল্প সময়ের মধ্যে নিজের অবস্থানটা এতটা সুদৃঢ় করতে সক্ষম হন যে, ১৯৬৩ ও ১৯৬৪ সালে তিনি আজাদের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় আজাদে খেলতেন নিয়াজি, এখলাক, আজগর, নাসিম, মুশতাক, আবুল, গোলাম মাবুদ প্রমুখ। ১৯৬৬ সালে ফুটবলার হিসেবে যোগ দেন ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। সে বছর মোহামেডানের ভলিবল দলকে ঢেলে সাজানো হয়। আর এক্ষেত্রে তিনি ভূমিকা রাখেন। সেবার লীগে রানার্সআপ হয় মোহামেডান। এরপর ভলিবল লীগে মোহামেডানের দাপট। ১৯৬৭, ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় মোহামেডান। আর এই হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় নেতৃত্ব দেন তিনি। এ দলের উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় হলেন- আবুল হাসান, মোহাম্মদ উল্লাহ, সুভাষ কর্মকার, ফরিদ চৌধুরী, তহুরুর রহমান, জিয়া, মাহমুদ, সিরাজ, মুনীর, নবি, ফারুক, বাবুল প্রমুখ। ১৯৭০ সালে শক্তিশালী ভলিবল দল দল গঠন করে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। এক্ষেত্রেও উদ্যোগী ভূমিকা রাখেন তিনি। সেবারও তার দল চ্যাম্পিয়ন হয়। ভলিবলে সে সময় তাকে বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান দল গঠনের কথা চিন্তা করা যেত না। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর তিনি খেলেন পূর্ব পাকিস্তান দলের হয়ে। ১৯৬৩ সালে পেশোয়ারে, ১৯৬৪ সালে ঢাকায়, ১৯৬৬ সালে লাহোরে, ১৯৬৭ সালে করাচীতে, ১৯৬৮ সালে পেশোয়ারে, ১৯৬৯ সালে লাহোরে ও ১৯৭০ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তান জাতীয় ভলিবল চ্যাম্পিয়নশীপ। এর মধ্যে ১৯৬৪, ১৯৬৬, ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালে হয় পাকিস্তান অলিম্পিক। ১৯৬৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ভলিবল দলের অধিনায়ক এবং পূর্র্ব পাকিস্তানের সেরা ভলিবল হিসেবে পুরস্কৃত হন। এছাড়া ১৯৬৬ ও ১৯৬৮ সালে সেরা নৈপুণ্য দেখিয়ে পাকিস্তান জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালে ব্যাংকক এশিয়ান ভলিবল চ্যাম্পিয়নশীপে যে ৩৪ জন খেলোয়াড়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়, পূর্ব পাকিস্তান থেকে ছিলেন আবুল, মুনির ও মোস্তাফা কামাল। ১৯৭২ সালে প্রথম স্বাধীনতা দিবস ভলিবল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ সাদা দলের অধিনায়ক ছিলেন এবং এ খেলার মাধ্যমেই খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেন।
সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের সেরা ভলিবল দল ও খেলোয়াড় প্রসঙ্গে মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘আজাদ স্পোর্টিং, ওয়ারী, মোহামেডান, ইস্টএন্ড, ভিক্টোরিয়া, পিডব্লিউডি, বাসাবো তরুণ সংঘ, শান্তিবাগ, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান প্রভৃতি ছিল প্রথম সারির ক্লাব। তবে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব ছিল ছাত্রদের নিয়ে গড়া। ক্লাবের পরিবেশও ছিল উন্নতমানের। তখন অবশ্য ভলিবলে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। খেলাটা ছিল অ্যামেচারসুলভ। খাওয়া-দাওয়া, যাতায়াত আর মাঝে-মধ্যে কোনো উপলক্ষে অল্প কিছু হাতখরচা। এর বেশি নয়। আর খেলোয়াড়দের মধ্যে এখলাক, খন্দকার আবুল হাসান, ফরিদ চৌধুরী, গোলাম কুদ্দুস চৌধুরী, আমিন, আমিনুল ইসলাম খান (পরবর্তীকালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক), আইয়ুব, সুভাষ কর্মকার, মাবুদ চৌধুরী, মোফাজ্জল, বাদশা, মোহাম্মদ উল্লাহ, কানু, মিন্টু, আজিজ প্রমুখের খেলা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে আমার গুরু ছিলেন আবাঙালি খেলোয়াড় এখলাক। তিনি পূর্ব পাকিস্তান দলে লিফটার হিসেবে খেলতেন। তার কাছ থেকেই আমি খেলা শিখি। খেলার আধুনিক কলাকৌশল শেখানোর ক্ষেত্রে তার অবদান বেশি। তিনি খেলা ছেড়ে দেয়ার পর তার জায়গাটা আমি নেই।’
পশ্চিম পাকিস্তানীদের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানীদের পার্থক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানে ভলিবল খুবই জনপ্রিয় খেলা ছিল। এশিয়ার অন্যতম সেরা দল ছিল তারা। তাদের শারীরিক যোগ্যতা ছিল ভালো। তারা খেলতো বেশি। অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিত। আর পূর্ব পাকিস্তানে ভলিবল লীগ ছিল একমাত্র মানসম্মত আসর। বছরের অধিকাংশ সময় বসে থাকতে হতো হাত গুটিয়ে। যে কারণে খেলায় উন্নতি করার সুযোগ ছিল সীমিত।’
ভলিবলের পাশাপাশি ফুটবলেও দক্ষতা দেখান মোস্তাফা কামাল। ১৯৬২ সালে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ভলিবল খেলার সময় ফুটবলে তার নৈপুণ্যের বিষয়টি চাউর হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ফুটবল ক্যারিয়ার সম্পর্কে জানতেন আজাদের তৎকালীন সময়ের সেরা গোলরক্ষক রণজিত দাস। তিনি আমাকে অনেক আগে থেকেই চিনতেন। তাছাড়া ফুটবলার হিসেবে তিনি আমাকে চাকরি দেন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে। আমার আজাদে ফুটবল খেলার বিষয়েও তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। সে বছর আজাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন নিশিত, লিও, বাটু, মোর্শেদ, মুক্তা, অমল, আবুল, মোজাম্মেল, নূরুন্নবী, সামাদ প্রমুখ।’ মোস্তাফা কামাল হয়ে উঠেন আজাদের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। খেলতেন রাইট ইন কিংবা সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে। চার বছর খেলেন আজাদে। এরপর তিনি ১৯৬৬ সালে আমন্ত্রণ পান ঢাকা মোহামেডানে। এ বিষয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আজাদের হয়ে খেলার সময় আমার খেলায় মুগ্ধ হন মোহামেডানের খ্যাতিমান ফুটবলার গজনবী। তিনি খেলোয়াড় হলেও মোহামেডানের দল গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন। তাছাড়া তার আলাদা একটা ইমেজ ছিল। তিনি আমন্ত্রণ জানাতেই মোহামেডানে যোগ দিতে দ্বিধা করিনি। মোহামেডান সে সময় দেশসেরা ফুটবলারদের আখড়া। খেলতেন আবদুল্লাহ, রসুল বক্স, জাম্বু, এ এন খান, মুসা, তোরাব আলী, জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ, জহির, শামসু, গফুর, বশির, গজনবী, আসলাম, নূরুন্নবী, হাশেম দীন, আলো, কাদের বক্স প্রমুখ। তাদের মাঝে স্থান করে নেয়াটা চাট্টিখানি কথা নয়। তথাপি মোহামেডান তখন আমার কাছে মুগ্ধতার অপর নাম। তাদের হয়ে খেলাটা আমার কাছে ছিল স্বপ্নের মত। আর এই স্বপ্নের প্রলোভন আমার পক্ষে এড়ানো সম্ভব হয়নি। দলে স্থান করে নেয়া কঠিন জেনেও আমি মোহামেডানেই পাড়ি জমাই।’ ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত মোহামেডানের হয়ে খেলার পর পায়ে আঘাত পাওয়ায় আর খেলতে পারেননি। এর মধ্যে মোহামেডান ১৯৬৬ ও ১৯৬৯ সালে লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়। ফুটবলে নিজের সেরা ম্যাচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৯৬৮ সালের ২৮ মে ঢাকা সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লীগে মোহামেডানের হয়ে মৌসুমের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামি। প্রতিপক্ষ ইস্টএন্ড ক্লাব। রসুল বক্স দলকে এগিয়ে নেন। এরপর খেলা যেন আমার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। একাই দুই গোল করি। প্রথমার্ধে মোহামেডানের লিড ৩-০ গোলে। এরপর বৃষ্টি এসে খেলাটিকে ভাসিয়ে দিয়ে যায়। আমার জীবনের সেরা খেলাটি পরিত্যক্ত হয়ে গেলে মনে বেশ কষ্ট পেয়েছিলাম। এছাড়া ১৯৬৫ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকায় শের-এ-বাংলা ফুটবল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ঢাকা মোহামেডানের বিপক্ষে ন্যাশনাল ব্যাংকের হয়ে ম্যাচটিতে বোধহয় ভালোই খেলেছিলাম। সে বছরের লীগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান দলে ছিলেন নূরুন্নবী, আসলাম, জহির, দেবিনাশ, আবিদ, গফুর, প্রতাপ, হাফিজ, শামসু, আবদুল্লাহ ও মুসা। ন্যাশনাল ব্যাংকের হয়ে খেলেছিলাম এহতেশাম, মুবাশ্বের, গাউস, আবুল, কায়কোবাদ, সামাদ, জামিল, সাহাবুদ্দিন, বশির, আলম ও আমি। খেলাটি ড্র হয় ২-২ গোলে। তবে আমার খেলা বেশ প্রশংসিত হয়। ন্যাশনাল ব্যাংকের দুটি গোলই করি আমি।’ ১৮ নভেম্বর দ্য পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় লেখা হয় : For the National Bank their right-out Kamal ran with the ball like an army watch-dog and swooped on the vital spot whenever he got a chance. He was ably supported by centreforward Shahabuddin and Bashir. Kamal tested the Mohammedan citadel in the very third minute of the kick off with a good placement that beat goal-keeper Nurunnabi (1-0). Play became absorbing as the Mohammedans exerted pressure on the rival territory for the equaliser. Right in Hafiz did it in the 18th minute (1-1). Proceedings later in the first half did not yield any result. In the second half National Bank again went into the lead. Kamal scored another goal in the 13th minute (2-1). ২০ মিনিটে মোহামেডানের মুসা গোল করে সমতা আনলে খেলাটি রি-প্লে হয়। এ ম্যাচে খেলার পর তিনি মোহামেডানের গজনবীর মন কেড়ে নিতে সক্ষম হন। এছাড়া আরেকটি ম্যাচের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘খুব সম্ভবত ১৯৬৭ সালের লীগে মোহামেডানের হয়ে পি ই রেলওয়ের বিপক্ষে ম্যাচটিও ভালই খেলি। যদিও সে ম্যাচটি ছিল মাকরানী ফুটবলার লেফট আউট মুসার। তার অসাধারণ ভেল্কিতে মোহামেডান জয়ী হয় ৬-০ গোলে। মুসা একাই করেন পাঁচ গোল। তারপরও আমি এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলাম। একটি গোলও করেছিলাম। সে ম্যাচে মোহামেডানের হয়ে খেলেছিলাম নূরুন্নবী, জলিল, তোরাব আলী, আসলাম, কাদের, গফুর, প্রতাপ, আবদুল্লাহ, বশির, মুসা ও আমি। ম্যাচের রেফারী ছিলেন খ্যাতিমান ফুটবলার চুন্না রশীদ।’
খেলোয়াড়ী জীবন শেষে খেলোয়াড় গড়ার সংকল্প নিয়ে মোস্তাফা কামাল বেছে নেন প্রশিক্ষকের জীবন। তারই অংশ হিসেবে ১৯৭২ সালে ভারতের পাতিয়ালার এনআইএস থেকে ভলিবলে ডিপ্লোমা লাভ করেন। আর এই ডিপ্লোমা অর্জনের পর ন্যাশনাল ব্যাংক, স্বাধীনতার পর নাম পরিবর্তন করে রাখা সোনালী ব্যাংকের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে ১৯৭৩ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তথা বিকেএনএস-এ। এ ব্যাপারে তাকে উৎসাহিত করেন তৎকালীন বিকেএনএস-এর অবৈতনিক সচিব কাজী আনিসুর রহমান এবং বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। বিকেএনএস-এ যোগ দেয়ার পর প্রশিক্ষণ দেয়াটা তার কাছে হয়ে ওঠে নেশার মত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে নেশা ছাড়া কোনো কিছুতেই সার্থকতা পাওয়া যায় না। নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে সমর্পণ না করতে পারলে সফলতা আসে না। নিজের হাতে গড়া খেলোয়াড়রা যখন সাফল্য অর্জন করেন, তখন বুক ভরে যায়। সেটিকে নিজের সাফল্য হিসেবেই মনে হয়। আসলে খেলোয়াড় হিসেবে সাফল্য পেলে একরকম অনুভূতি হয়, আর প্রশিক্ষক হিসেবে অন্যরকম। তবে খেলোয়াড় গড়ার মধ্যে আনন্দটা বেশি। সৃষ্টির আনন্দের সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা চলে না। খেলোয়াড় গড়ে তোলা তো এক ধরনের শৈল্পিক ও সৃজনশীল কাজ। প্রশিক্ষকের হাতে হয়তো কলম বা তুলি থাকে না। তবে তার বুকে থাকে কল্পনা। আর এই কল্পনার সঙ্গে কৌশলের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলা হয় একজন খেলোয়াড়।’
মোস্তাফা কামাল স্বাধীনতার পর থেকে জাতীয় ভলিবল দলের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালের জুনে বাংলাদেশে প্রথম শুভেচ্ছা সফরে আসে সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দ ডায়নামো দল। তারা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুষ্টিয়ায় একটি করে এবং ঢাকায় দুটি ম্যাচ খেলে। বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে শুভেচ্ছা সফরে আসে সোভিয়েত ইউনিয়নের কিরঘিজ দল। এ দলটি বাংলাদেশে পাঁচটি ম্যাচ খেলে। তিনিও কোচ ছিলেন। ১৯৭৮ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত অষ্টম এশিয়ান গেমসে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ভলিবল দলের কোচ। তাতে বাংলাদেশ ১৫টি দেশের মধ্যে ১১তম হয়। ১৯৭৯ সালে উজবেকিস্তান বাংলাদেশ সফরে এলে তিনি বাংলাদেশের কোচ ছিলেন। ১৯৮৪ সালে সৌদি আরবে দ্বিতীয় এশিয়ান জুনিয়র ভলিবল চ্যাম্পিয়নশীপে তিনি কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হয় ১৩তম। ১৯৮৭ সালের তৃতীয় সাফ গেমসে জাতীয় ভলিবল দলের প্রশিক্ষণে চীনা কোচের সহযোগী ছিলেন। ১৯৯৩ সালে ঢাকায় সাফ গেমসে বাংলাদেশ মহিলা ভলিবল দলের সহযোগী প্রশিক্ষক ছিলেন। প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি বস্ত্র শিল্প সংস্থা, ওয়াপদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীকে ভলিবল লীগ, জাতীয় ভলিবল, বিজয় দিবস ভলিবল, স্বাধীনতা দিবস ভলিবলে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছেন। অসংখ্য ভলিবল খেলোয়াড় গড়ে তুলেছেন তিনি। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইয়াদ আলী, ভুলু, মুকুল, শামীম আল মামুন, মুন্নু, মিনহাজ আলী, হুমায়ুন, ওয়াসেক, গাফ্ফার, ইসমাইল কুতুবি, এনাম, মোমেন, বাবুল, ইকবাল, সফিউদ্দিন, জাকির, জাহাঙ্গীর, টুটুল, খোকন, ফিরোজ, স্বপন, রুহুল, করিমুল, নজরুল, জিল্লু, মেহেদি, ডলার প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি নিজেকে ঝালিয়ে নেয়ার জন্য অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে। ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ভলিবল প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ ও প্রথম গ্রেড লাভ, ১৯৮৭ সালে মালয়েশিয়ায় প্রতিবন্ধীদের ক্রীড়া প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ ও সনদপত্র অর্জন, ১৯৯২ সালে মালদ্বীপে অলিম্পিক সলিডারিটি ও সার্ক ভলিবল প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগদান করেন।
ভলিবলের পাশাপাশি ফুটবল প্রশিক্ষক হিসেবেও সুখ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে দ্বিতীয় বিভাগের দল সাধারণ বীমাকে চ্যাম্পিয়ন করে ১৯৭৬ সালে প্রথম বিভাগে তোলেন। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি এই দলের কোচ ছিলেন। এ সময় দলটি বেশ সাড়া জাগায়। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে প্রথম বিভাগের দল পিডব্লিউডির কোচের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ১৯৭৬-৭৭ সালে রায়েরবাজারকে তৃতীয় বিভাগ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে তোলেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় ফিফা কোকাকোলা ফুটবল কোচেস ট্রেনিং কোর্সে যোগদান ও কৃতিত্বের সাথে সার্টিফিকেট লাভ করেন। স্বাধীনতার পর ভলিবল রেফারিদের প্রথম কোর্স পরিচালনা এবং বেশ কিছু খেলা পরিচালনা করেন। ১৯৯০ সালে ঢাকায় অলিম্পিক সলিডারিটি স্পোর্টসলিডারশিপ কোর্সে অংশ নেন। ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত ‘স্পোর্টস ফর অল’ সেমিনারে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশ দলের। ২০০৬ সালে কলম্বো সাফ গেমসে ভলিবলের টেকনিক্যাল অফিসিয়াল হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। দেশের ভলিবলকে সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে ‘ভলিবলের আইন-কানুন’ নামে আন্তর্জাতিক আইনের বাংলায় অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির সেরা প্রশিক্ষক নির্বাচিত হন।
দীর্ঘ কোচিং ক্যারিয়ার সম্পর্কে মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘ ভলিবল প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি করলেও প্রশিক্ষণটা ছিল আমার নেশা। সেটা ভলিবলই হোক, আর ফুটবল হোক। এ কারণে ব্যাংকের প্রতিষ্ঠিত চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রশিক্ষকের চাকরি নিয়েছিলাম। যা করার আন্তরিকভাবে করতে চেয়েছি। চেয়েছি নতুন কিছু করতে। প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। তাতে ফলও পেয়েছি। তবে যারা কোচ হবেন, তাদের অবশ্যই ক্রিয়েটিভিটি থাকতে হবে। থাকতে হবে ডেডিকেশন। সৃজনশীল মন ও ডেডিকেশন না থাকলে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি জানা না থাকলে প্রশিক্ষণ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা যাবে না। সে সঙ্গে নিজেকে সব সময় আপ-টু-ডেট রাখতে হবে।’ ফুটবল ও ভলিবলে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে মোস্তাফা কামাল মনে করেন, ‘এক্ষেত্রে প্রতিভাবান কোচের অভাব। এ কারণে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কোনো কিছু পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে না। যারা খেলোয়াড় গড়বেন, তাদের মান যদি আশানুরূপ না হয়, তাহলে ভালো খেলোয়াড় তৈরি হবে কিভাবে?’
সংগঠক হিসেবেও মোস্তাফা কামালের অবদান রয়েছে। ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের স্কুল কোচিং কমিটির চেয়ারম্যান, জাতীয় দলের সিলেকশন কমিটির সহ-সভাপতি, সেক্রেটারি এবং কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির খেলোয়াড় বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ও আজীবন সদস্য। অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ওবায়দুল্লাহ খানের নেতৃত্বে সাবেক ফুটবলারদের নিয়ে পুনর্গঠন করেন ‘সোনালী অতীত ক্লাব’। পর্যায়ক্রমে এই ক্লাবের সমন্বয়কারী, কোষাধ্যক্ষ, যুগ্ম সম্পাদক ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রশিক্ষক কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং পরিষদের অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন।
মোস্তাফা কামাল দু’কন্যার জনক। তার স্ত্রী দিলারা কামাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক। ১৯৯৯ সালে তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন। এরপর তিনি পল্টন প্রোপার্টিজ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েও তা ঘোষিত না হওয়ায় তিনি মানসিকভাবে কিছুটা হলেও আঘাত পেয়েছেন। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান নিয়েও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদানে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। এর একটা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা প্রয়োজন। কে আগে কে পরে, তার একটা তালিকা থাকলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো না। সিনিয়রদের পরে পুরস্কার দেয়া হলে তার সম্মান ও সেই অনুভূতি থাকে না।’
বাঙালি খেলোয়াড়দের নিয়ে ভলিবলের সেরা একটি দল গঠন করার কথা বললে ভলিবল খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে অভিজ্ঞ মোস্তাফা কামালের বিবেচনায় সেটি এমন : ইয়াদ আলী, ভুলু, মুকুল, গোলাম কুদ্দুস চৌধুরী, আফজাল হোসেন, জাকির হোসেন, মুন্নু, খন্দকার আবুল হাসান, সফিজউদ্দিন, মোহাম্মদ উল্লাহ, সোহরাব ও অসিত কুমার নন্দী।
সামগ্রিকভাবে নিজের জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘আমি আমার জীবন নিয়ে খুব বেশি অতৃপ্ত নই। জীবনে যা পেয়েছি, তাতে আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট। যদিও মানুষের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। পুরোপুরি তৃপ্ত বা সন্তুষ্ট কেই বা হতে পেরেছে? ছোটখাট সেসব ক্ষোভ, আক্ষেপ বা না পাওয়ার বেদনা বাদ দিলে আমার জীবনের প্রাপ্তিটুকু নিয়ে আমি আনন্দিত।’ নিজের জীবন নিয়ে ক’জনাই বা তৃপ্ত হতে পারেন? মোস্তাফা কামাল পেরেছেন। এ কারণেই তিনি অন্য সবার চেয়ে একটু আলাদা। #
১৬-১০-২০০৭
ক্রীড়াঙ্গনকেই জীবনের মূলমন্ত্র হিসেবে নেন মোস্তাফা কামাল। খেলাধুলায় নিজেকে সঁপে দিয়ে এর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ব্যথা-বেদনার সঙ্গে নিজেকে গভীরভাবে জড়িয়ে ফেলেন। প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি নিয়ে কেটেছে জীবনের ফেলে আসা দিনগুলো। কখনো-সখনো গভীর হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছেন। প্রতিবন্ধকতা এসেছে। কিন্তু তাতে হতোদ্যম হননি। ভেঙ্গে পড়েননি। তিনি তো জীবনের শুরুতেই জেনেছেন- খেলাধুলায় জয় যেমন আছে, তেমনি আছে পরাজয়। এ দুটোকে মেনে নিয়েই তো খেলাধুলায় জড়িয়েছেন। তার উপলব্ধির জগতটাও তো ঠুনকো নয়। পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে কোনো কিছু গ্রহণ কিংবা বর্জন করার মত মন ও মানসিকতা তিনি স্বভাবগতভাবে তৈরি করে নিয়েছেন। এ কারণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের একটা আলাদা ভাবমূর্তি তিনি গড়তে পেরেছেন।
প্রশিক্ষক ও সংগঠক ক্যারিয়ারের আড়ালে অনেকটাই যেন হারিয়ে গেছেন খেলোয়াড় মোস্তাফা কামাল। চেনা-জানা গন্ডির বাইরে তার খেলোয়াড়ী জীবনটা বিস্মৃতির আড়ালে চাপা পড়ে গেছে। অথচ খেলোয়াড় হিসেবে বর্ণাঢ্য এক জীবনের অধিকারী তিনি। ফুটবল ও ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে ষাট দশকে তিনি ছড়িয়েছেন উজ্জ্বলতা। তার ক্রীড়াশৈলীর দীপ্তিতে উদ্ভাসিত হয়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। ভলিবলে তিনি গড়ে তোলেন নিজস্ব একটা অবস্থান। ভলিবল ইতিহাসের সফলতম ক্রীড়াবিদদের অন্যতম একজন হিসেবে তিনি বিবেচিত হয়ে থাকেন।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৪২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মোস্তাফা কামালের জন্ম। পিতাকে না দেখার এক হাহাকার নিয়ে ভূমিষ্ট হন তিনি। তবে পারিবারিক পরিবেশটি ছিল খেলাধুলার অনুকূলে। যে কারণে শৈশব থেকেই খেলাধুলার সঙ্গে নিবিড়তা গড়ে ওঠে। চাচা সিরাজুল হক ছিলেন নামজাদা ফুটবলার। চল্লিশের দশকে তিনি ছিলেন কলকাতা মোহনবাগান ক্লাবের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়। ফুটবলার হিসেবে বাড়ির আঙিনায় টানানো চাচার ছবিটি তার বুকে খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন-বীজ পুঁতে দেয়। বড় ভাই মোহাম্মদ ওমর চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টের হয়ে ফুটবল লীগে খেলেছেন। আর মেঝ ভাই খালেদ মোমিন ছিলেন অলরাউন্ডার। তিনি ফুটবল, ভলিবল ও অ্যাথলেটিক্সে কৃতিত্ব দেখান। তবে পঞ্চাশ ও ষাট দশকে ফুটবলে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ারী ও পুলিশের লেফট উইঙ্গার হিসেবে খ্যতি অর্জন করেন। মূলত মেঝ ভাই ছিলেন মোস্তাফা কামালের ফ্রেন্ড, ফিলোসফার ও গাইড। তার খেলোয়াড়ী জীবন তাকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে। মেঝ ভাই যে যে খেলায় দক্ষতা দেখিয়েছেন, তিনিও সেসব খেলায় আকৃষ্ট হন।
নোয়াখালীর বামনী হাইস্কুলে পড়ার সময় খেলোয়াড় হিসেবে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটতে থাকে। অ্যাথলেটিক্সের ৪০০, ৮০০ ও ১৫০০ মিটার স্প্রিন্টের পাশাপাশি ফুটবল ও ভলিবলে তিনি সাফল্য দেখান। ১৯৫৮ সালে আন্তঃজেলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন নোয়াখালী জেলা দলের। খেলাটা শরীরে এমনভাবে দোলা দিয়ে যায় যে, ম্যাট্রিক পরীক্ষা চলাকালে এলাকার ফুটবল ফাইনালে অংশ নিয়েছিলেন। ম্যাট্রিক পাস করে ১৯৫৯ সালে ভর্তি হন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। এই কলেজে ভর্তি হওয়ার পর জাতীয় পর্যায়ের খেলাধুলায় নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। কলেজের হয়ে অংশ নেন বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। ১৯৬১ সালে একদিন আউটার স্টেডিয়ামে জগন্নাথ কলেজের হয়ে ভলিবল খেলার সময় চোখে পড়ে যান সে সময়কার অলরাউন্ডার কৃতী ক্রীড়াবিদ খন্দকার আবুল হাসানের। ভলিবল খেলোয়াড়, অ্যাথলেট ও ফুটবলার হিসেবে খ্যাতিমান আবুল হাসান তাকে নিয়ে যান সে সময়কার ছাত্রদের কাছে সমাদৃত আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবে। সে সময় প্রথম বিভাগ লীগে আজাদের ভলিবল দলটি ছিল দুর্দান্ত। সে দলে সুযোগ করে নেয়াটা সহজ ছিল না। কিন্তু মোস্তাফা কামাল তার সহজাত প্রতিভা দিয়ে ১৯৬২ সাল থেকে আজাদের অংশ হয়ে যান। লিফটার হিসেবে তার কোনো জুড়ি ছিল না। তিনি আলতো করে বল এমনভাবে তুলে দিতেন, তাতে স্ম্যাশারদের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যেত। দল পয়েন্ট তুলে নিত ফটাফট। অল্প সময়ের মধ্যে নিজের অবস্থানটা এতটা সুদৃঢ় করতে সক্ষম হন যে, ১৯৬৩ ও ১৯৬৪ সালে তিনি আজাদের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় আজাদে খেলতেন নিয়াজি, এখলাক, আজগর, নাসিম, মুশতাক, আবুল, গোলাম মাবুদ প্রমুখ। ১৯৬৬ সালে ফুটবলার হিসেবে যোগ দেন ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। সে বছর মোহামেডানের ভলিবল দলকে ঢেলে সাজানো হয়। আর এক্ষেত্রে তিনি ভূমিকা রাখেন। সেবার লীগে রানার্সআপ হয় মোহামেডান। এরপর ভলিবল লীগে মোহামেডানের দাপট। ১৯৬৭, ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় মোহামেডান। আর এই হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় নেতৃত্ব দেন তিনি। এ দলের উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় হলেন- আবুল হাসান, মোহাম্মদ উল্লাহ, সুভাষ কর্মকার, ফরিদ চৌধুরী, তহুরুর রহমান, জিয়া, মাহমুদ, সিরাজ, মুনীর, নবি, ফারুক, বাবুল প্রমুখ। ১৯৭০ সালে শক্তিশালী ভলিবল দল দল গঠন করে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। এক্ষেত্রেও উদ্যোগী ভূমিকা রাখেন তিনি। সেবারও তার দল চ্যাম্পিয়ন হয়। ভলিবলে সে সময় তাকে বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান দল গঠনের কথা চিন্তা করা যেত না। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর তিনি খেলেন পূর্ব পাকিস্তান দলের হয়ে। ১৯৬৩ সালে পেশোয়ারে, ১৯৬৪ সালে ঢাকায়, ১৯৬৬ সালে লাহোরে, ১৯৬৭ সালে করাচীতে, ১৯৬৮ সালে পেশোয়ারে, ১৯৬৯ সালে লাহোরে ও ১৯৭০ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তান জাতীয় ভলিবল চ্যাম্পিয়নশীপ। এর মধ্যে ১৯৬৪, ১৯৬৬, ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালে হয় পাকিস্তান অলিম্পিক। ১৯৬৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ভলিবল দলের অধিনায়ক এবং পূর্র্ব পাকিস্তানের সেরা ভলিবল হিসেবে পুরস্কৃত হন। এছাড়া ১৯৬৬ ও ১৯৬৮ সালে সেরা নৈপুণ্য দেখিয়ে পাকিস্তান জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালে ব্যাংকক এশিয়ান ভলিবল চ্যাম্পিয়নশীপে যে ৩৪ জন খেলোয়াড়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়, পূর্ব পাকিস্তান থেকে ছিলেন আবুল, মুনির ও মোস্তাফা কামাল। ১৯৭২ সালে প্রথম স্বাধীনতা দিবস ভলিবল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ সাদা দলের অধিনায়ক ছিলেন এবং এ খেলার মাধ্যমেই খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেন।
সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের সেরা ভলিবল দল ও খেলোয়াড় প্রসঙ্গে মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘আজাদ স্পোর্টিং, ওয়ারী, মোহামেডান, ইস্টএন্ড, ভিক্টোরিয়া, পিডব্লিউডি, বাসাবো তরুণ সংঘ, শান্তিবাগ, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান প্রভৃতি ছিল প্রথম সারির ক্লাব। তবে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব ছিল ছাত্রদের নিয়ে গড়া। ক্লাবের পরিবেশও ছিল উন্নতমানের। তখন অবশ্য ভলিবলে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। খেলাটা ছিল অ্যামেচারসুলভ। খাওয়া-দাওয়া, যাতায়াত আর মাঝে-মধ্যে কোনো উপলক্ষে অল্প কিছু হাতখরচা। এর বেশি নয়। আর খেলোয়াড়দের মধ্যে এখলাক, খন্দকার আবুল হাসান, ফরিদ চৌধুরী, গোলাম কুদ্দুস চৌধুরী, আমিন, আমিনুল ইসলাম খান (পরবর্তীকালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক), আইয়ুব, সুভাষ কর্মকার, মাবুদ চৌধুরী, মোফাজ্জল, বাদশা, মোহাম্মদ উল্লাহ, কানু, মিন্টু, আজিজ প্রমুখের খেলা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে আমার গুরু ছিলেন আবাঙালি খেলোয়াড় এখলাক। তিনি পূর্ব পাকিস্তান দলে লিফটার হিসেবে খেলতেন। তার কাছ থেকেই আমি খেলা শিখি। খেলার আধুনিক কলাকৌশল শেখানোর ক্ষেত্রে তার অবদান বেশি। তিনি খেলা ছেড়ে দেয়ার পর তার জায়গাটা আমি নেই।’
পশ্চিম পাকিস্তানীদের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানীদের পার্থক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানে ভলিবল খুবই জনপ্রিয় খেলা ছিল। এশিয়ার অন্যতম সেরা দল ছিল তারা। তাদের শারীরিক যোগ্যতা ছিল ভালো। তারা খেলতো বেশি। অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিত। আর পূর্ব পাকিস্তানে ভলিবল লীগ ছিল একমাত্র মানসম্মত আসর। বছরের অধিকাংশ সময় বসে থাকতে হতো হাত গুটিয়ে। যে কারণে খেলায় উন্নতি করার সুযোগ ছিল সীমিত।’
ভলিবলের পাশাপাশি ফুটবলেও দক্ষতা দেখান মোস্তাফা কামাল। ১৯৬২ সালে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ভলিবল খেলার সময় ফুটবলে তার নৈপুণ্যের বিষয়টি চাউর হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ফুটবল ক্যারিয়ার সম্পর্কে জানতেন আজাদের তৎকালীন সময়ের সেরা গোলরক্ষক রণজিত দাস। তিনি আমাকে অনেক আগে থেকেই চিনতেন। তাছাড়া ফুটবলার হিসেবে তিনি আমাকে চাকরি দেন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে। আমার আজাদে ফুটবল খেলার বিষয়েও তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। সে বছর আজাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন নিশিত, লিও, বাটু, মোর্শেদ, মুক্তা, অমল, আবুল, মোজাম্মেল, নূরুন্নবী, সামাদ প্রমুখ।’ মোস্তাফা কামাল হয়ে উঠেন আজাদের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। খেলতেন রাইট ইন কিংবা সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে। চার বছর খেলেন আজাদে। এরপর তিনি ১৯৬৬ সালে আমন্ত্রণ পান ঢাকা মোহামেডানে। এ বিষয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আজাদের হয়ে খেলার সময় আমার খেলায় মুগ্ধ হন মোহামেডানের খ্যাতিমান ফুটবলার গজনবী। তিনি খেলোয়াড় হলেও মোহামেডানের দল গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন। তাছাড়া তার আলাদা একটা ইমেজ ছিল। তিনি আমন্ত্রণ জানাতেই মোহামেডানে যোগ দিতে দ্বিধা করিনি। মোহামেডান সে সময় দেশসেরা ফুটবলারদের আখড়া। খেলতেন আবদুল্লাহ, রসুল বক্স, জাম্বু, এ এন খান, মুসা, তোরাব আলী, জাকারিয়া পিন্টু, প্রতাপ, জহির, শামসু, গফুর, বশির, গজনবী, আসলাম, নূরুন্নবী, হাশেম দীন, আলো, কাদের বক্স প্রমুখ। তাদের মাঝে স্থান করে নেয়াটা চাট্টিখানি কথা নয়। তথাপি মোহামেডান তখন আমার কাছে মুগ্ধতার অপর নাম। তাদের হয়ে খেলাটা আমার কাছে ছিল স্বপ্নের মত। আর এই স্বপ্নের প্রলোভন আমার পক্ষে এড়ানো সম্ভব হয়নি। দলে স্থান করে নেয়া কঠিন জেনেও আমি মোহামেডানেই পাড়ি জমাই।’ ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত মোহামেডানের হয়ে খেলার পর পায়ে আঘাত পাওয়ায় আর খেলতে পারেননি। এর মধ্যে মোহামেডান ১৯৬৬ ও ১৯৬৯ সালে লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়। ফুটবলে নিজের সেরা ম্যাচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৯৬৮ সালের ২৮ মে ঢাকা সিনিয়র ডিভিশন ফুটবল লীগে মোহামেডানের হয়ে মৌসুমের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামি। প্রতিপক্ষ ইস্টএন্ড ক্লাব। রসুল বক্স দলকে এগিয়ে নেন। এরপর খেলা যেন আমার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। একাই দুই গোল করি। প্রথমার্ধে মোহামেডানের লিড ৩-০ গোলে। এরপর বৃষ্টি এসে খেলাটিকে ভাসিয়ে দিয়ে যায়। আমার জীবনের সেরা খেলাটি পরিত্যক্ত হয়ে গেলে মনে বেশ কষ্ট পেয়েছিলাম। এছাড়া ১৯৬৫ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকায় শের-এ-বাংলা ফুটবল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ঢাকা মোহামেডানের বিপক্ষে ন্যাশনাল ব্যাংকের হয়ে ম্যাচটিতে বোধহয় ভালোই খেলেছিলাম। সে বছরের লীগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান দলে ছিলেন নূরুন্নবী, আসলাম, জহির, দেবিনাশ, আবিদ, গফুর, প্রতাপ, হাফিজ, শামসু, আবদুল্লাহ ও মুসা। ন্যাশনাল ব্যাংকের হয়ে খেলেছিলাম এহতেশাম, মুবাশ্বের, গাউস, আবুল, কায়কোবাদ, সামাদ, জামিল, সাহাবুদ্দিন, বশির, আলম ও আমি। খেলাটি ড্র হয় ২-২ গোলে। তবে আমার খেলা বেশ প্রশংসিত হয়। ন্যাশনাল ব্যাংকের দুটি গোলই করি আমি।’ ১৮ নভেম্বর দ্য পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় লেখা হয় : For the National Bank their right-out Kamal ran with the ball like an army watch-dog and swooped on the vital spot whenever he got a chance. He was ably supported by centreforward Shahabuddin and Bashir. Kamal tested the Mohammedan citadel in the very third minute of the kick off with a good placement that beat goal-keeper Nurunnabi (1-0). Play became absorbing as the Mohammedans exerted pressure on the rival territory for the equaliser. Right in Hafiz did it in the 18th minute (1-1). Proceedings later in the first half did not yield any result. In the second half National Bank again went into the lead. Kamal scored another goal in the 13th minute (2-1). ২০ মিনিটে মোহামেডানের মুসা গোল করে সমতা আনলে খেলাটি রি-প্লে হয়। এ ম্যাচে খেলার পর তিনি মোহামেডানের গজনবীর মন কেড়ে নিতে সক্ষম হন। এছাড়া আরেকটি ম্যাচের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘খুব সম্ভবত ১৯৬৭ সালের লীগে মোহামেডানের হয়ে পি ই রেলওয়ের বিপক্ষে ম্যাচটিও ভালই খেলি। যদিও সে ম্যাচটি ছিল মাকরানী ফুটবলার লেফট আউট মুসার। তার অসাধারণ ভেল্কিতে মোহামেডান জয়ী হয় ৬-০ গোলে। মুসা একাই করেন পাঁচ গোল। তারপরও আমি এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলাম। একটি গোলও করেছিলাম। সে ম্যাচে মোহামেডানের হয়ে খেলেছিলাম নূরুন্নবী, জলিল, তোরাব আলী, আসলাম, কাদের, গফুর, প্রতাপ, আবদুল্লাহ, বশির, মুসা ও আমি। ম্যাচের রেফারী ছিলেন খ্যাতিমান ফুটবলার চুন্না রশীদ।’
খেলোয়াড়ী জীবন শেষে খেলোয়াড় গড়ার সংকল্প নিয়ে মোস্তাফা কামাল বেছে নেন প্রশিক্ষকের জীবন। তারই অংশ হিসেবে ১৯৭২ সালে ভারতের পাতিয়ালার এনআইএস থেকে ভলিবলে ডিপ্লোমা লাভ করেন। আর এই ডিপ্লোমা অর্জনের পর ন্যাশনাল ব্যাংক, স্বাধীনতার পর নাম পরিবর্তন করে রাখা সোনালী ব্যাংকের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে ১৯৭৩ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তথা বিকেএনএস-এ। এ ব্যাপারে তাকে উৎসাহিত করেন তৎকালীন বিকেএনএস-এর অবৈতনিক সচিব কাজী আনিসুর রহমান এবং বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। বিকেএনএস-এ যোগ দেয়ার পর প্রশিক্ষণ দেয়াটা তার কাছে হয়ে ওঠে নেশার মত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে নেশা ছাড়া কোনো কিছুতেই সার্থকতা পাওয়া যায় না। নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে সমর্পণ না করতে পারলে সফলতা আসে না। নিজের হাতে গড়া খেলোয়াড়রা যখন সাফল্য অর্জন করেন, তখন বুক ভরে যায়। সেটিকে নিজের সাফল্য হিসেবেই মনে হয়। আসলে খেলোয়াড় হিসেবে সাফল্য পেলে একরকম অনুভূতি হয়, আর প্রশিক্ষক হিসেবে অন্যরকম। তবে খেলোয়াড় গড়ার মধ্যে আনন্দটা বেশি। সৃষ্টির আনন্দের সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা চলে না। খেলোয়াড় গড়ে তোলা তো এক ধরনের শৈল্পিক ও সৃজনশীল কাজ। প্রশিক্ষকের হাতে হয়তো কলম বা তুলি থাকে না। তবে তার বুকে থাকে কল্পনা। আর এই কল্পনার সঙ্গে কৌশলের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলা হয় একজন খেলোয়াড়।’
মোস্তাফা কামাল স্বাধীনতার পর থেকে জাতীয় ভলিবল দলের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালের জুনে বাংলাদেশে প্রথম শুভেচ্ছা সফরে আসে সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দ ডায়নামো দল। তারা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুষ্টিয়ায় একটি করে এবং ঢাকায় দুটি ম্যাচ খেলে। বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে শুভেচ্ছা সফরে আসে সোভিয়েত ইউনিয়নের কিরঘিজ দল। এ দলটি বাংলাদেশে পাঁচটি ম্যাচ খেলে। তিনিও কোচ ছিলেন। ১৯৭৮ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত অষ্টম এশিয়ান গেমসে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ভলিবল দলের কোচ। তাতে বাংলাদেশ ১৫টি দেশের মধ্যে ১১তম হয়। ১৯৭৯ সালে উজবেকিস্তান বাংলাদেশ সফরে এলে তিনি বাংলাদেশের কোচ ছিলেন। ১৯৮৪ সালে সৌদি আরবে দ্বিতীয় এশিয়ান জুনিয়র ভলিবল চ্যাম্পিয়নশীপে তিনি কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ হয় ১৩তম। ১৯৮৭ সালের তৃতীয় সাফ গেমসে জাতীয় ভলিবল দলের প্রশিক্ষণে চীনা কোচের সহযোগী ছিলেন। ১৯৯৩ সালে ঢাকায় সাফ গেমসে বাংলাদেশ মহিলা ভলিবল দলের সহযোগী প্রশিক্ষক ছিলেন। প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি বস্ত্র শিল্প সংস্থা, ওয়াপদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীকে ভলিবল লীগ, জাতীয় ভলিবল, বিজয় দিবস ভলিবল, স্বাধীনতা দিবস ভলিবলে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছেন। অসংখ্য ভলিবল খেলোয়াড় গড়ে তুলেছেন তিনি। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইয়াদ আলী, ভুলু, মুকুল, শামীম আল মামুন, মুন্নু, মিনহাজ আলী, হুমায়ুন, ওয়াসেক, গাফ্ফার, ইসমাইল কুতুবি, এনাম, মোমেন, বাবুল, ইকবাল, সফিউদ্দিন, জাকির, জাহাঙ্গীর, টুটুল, খোকন, ফিরোজ, স্বপন, রুহুল, করিমুল, নজরুল, জিল্লু, মেহেদি, ডলার প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি নিজেকে ঝালিয়ে নেয়ার জন্য অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে। ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ভলিবল প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ ও প্রথম গ্রেড লাভ, ১৯৮৭ সালে মালয়েশিয়ায় প্রতিবন্ধীদের ক্রীড়া প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ ও সনদপত্র অর্জন, ১৯৯২ সালে মালদ্বীপে অলিম্পিক সলিডারিটি ও সার্ক ভলিবল প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগদান করেন।
ভলিবলের পাশাপাশি ফুটবল প্রশিক্ষক হিসেবেও সুখ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে দ্বিতীয় বিভাগের দল সাধারণ বীমাকে চ্যাম্পিয়ন করে ১৯৭৬ সালে প্রথম বিভাগে তোলেন। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি এই দলের কোচ ছিলেন। এ সময় দলটি বেশ সাড়া জাগায়। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে প্রথম বিভাগের দল পিডব্লিউডির কোচের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ১৯৭৬-৭৭ সালে রায়েরবাজারকে তৃতীয় বিভাগ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে তোলেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় ফিফা কোকাকোলা ফুটবল কোচেস ট্রেনিং কোর্সে যোগদান ও কৃতিত্বের সাথে সার্টিফিকেট লাভ করেন। স্বাধীনতার পর ভলিবল রেফারিদের প্রথম কোর্স পরিচালনা এবং বেশ কিছু খেলা পরিচালনা করেন। ১৯৯০ সালে ঢাকায় অলিম্পিক সলিডারিটি স্পোর্টসলিডারশিপ কোর্সে অংশ নেন। ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত ‘স্পোর্টস ফর অল’ সেমিনারে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশ দলের। ২০০৬ সালে কলম্বো সাফ গেমসে ভলিবলের টেকনিক্যাল অফিসিয়াল হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। দেশের ভলিবলকে সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে ‘ভলিবলের আইন-কানুন’ নামে আন্তর্জাতিক আইনের বাংলায় অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির সেরা প্রশিক্ষক নির্বাচিত হন।
দীর্ঘ কোচিং ক্যারিয়ার সম্পর্কে মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘ ভলিবল প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি করলেও প্রশিক্ষণটা ছিল আমার নেশা। সেটা ভলিবলই হোক, আর ফুটবল হোক। এ কারণে ব্যাংকের প্রতিষ্ঠিত চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রশিক্ষকের চাকরি নিয়েছিলাম। যা করার আন্তরিকভাবে করতে চেয়েছি। চেয়েছি নতুন কিছু করতে। প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। তাতে ফলও পেয়েছি। তবে যারা কোচ হবেন, তাদের অবশ্যই ক্রিয়েটিভিটি থাকতে হবে। থাকতে হবে ডেডিকেশন। সৃজনশীল মন ও ডেডিকেশন না থাকলে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি জানা না থাকলে প্রশিক্ষণ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা যাবে না। সে সঙ্গে নিজেকে সব সময় আপ-টু-ডেট রাখতে হবে।’ ফুটবল ও ভলিবলে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে মোস্তাফা কামাল মনে করেন, ‘এক্ষেত্রে প্রতিভাবান কোচের অভাব। এ কারণে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কোনো কিছু পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে না। যারা খেলোয়াড় গড়বেন, তাদের মান যদি আশানুরূপ না হয়, তাহলে ভালো খেলোয়াড় তৈরি হবে কিভাবে?’
সংগঠক হিসেবেও মোস্তাফা কামালের অবদান রয়েছে। ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের স্কুল কোচিং কমিটির চেয়ারম্যান, জাতীয় দলের সিলেকশন কমিটির সহ-সভাপতি, সেক্রেটারি এবং কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির খেলোয়াড় বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ও আজীবন সদস্য। অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ওবায়দুল্লাহ খানের নেতৃত্বে সাবেক ফুটবলারদের নিয়ে পুনর্গঠন করেন ‘সোনালী অতীত ক্লাব’। পর্যায়ক্রমে এই ক্লাবের সমন্বয়কারী, কোষাধ্যক্ষ, যুগ্ম সম্পাদক ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রশিক্ষক কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং পরিষদের অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন।
মোস্তাফা কামাল দু’কন্যার জনক। তার স্ত্রী দিলারা কামাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক। ১৯৯৯ সালে তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন। এরপর তিনি পল্টন প্রোপার্টিজ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েও তা ঘোষিত না হওয়ায় তিনি মানসিকভাবে কিছুটা হলেও আঘাত পেয়েছেন। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান নিয়েও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদানে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। এর একটা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা প্রয়োজন। কে আগে কে পরে, তার একটা তালিকা থাকলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো না। সিনিয়রদের পরে পুরস্কার দেয়া হলে তার সম্মান ও সেই অনুভূতি থাকে না।’
বাঙালি খেলোয়াড়দের নিয়ে ভলিবলের সেরা একটি দল গঠন করার কথা বললে ভলিবল খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে অভিজ্ঞ মোস্তাফা কামালের বিবেচনায় সেটি এমন : ইয়াদ আলী, ভুলু, মুকুল, গোলাম কুদ্দুস চৌধুরী, আফজাল হোসেন, জাকির হোসেন, মুন্নু, খন্দকার আবুল হাসান, সফিজউদ্দিন, মোহাম্মদ উল্লাহ, সোহরাব ও অসিত কুমার নন্দী।
সামগ্রিকভাবে নিজের জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘আমি আমার জীবন নিয়ে খুব বেশি অতৃপ্ত নই। জীবনে যা পেয়েছি, তাতে আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট। যদিও মানুষের চাওয়া-পাওয়ার শেষ নেই। পুরোপুরি তৃপ্ত বা সন্তুষ্ট কেই বা হতে পেরেছে? ছোটখাট সেসব ক্ষোভ, আক্ষেপ বা না পাওয়ার বেদনা বাদ দিলে আমার জীবনের প্রাপ্তিটুকু নিয়ে আমি আনন্দিত।’ নিজের জীবন নিয়ে ক’জনাই বা তৃপ্ত হতে পারেন? মোস্তাফা কামাল পেরেছেন। এ কারণেই তিনি অন্য সবার চেয়ে একটু আলাদা। #
১৬-১০-২০০৭
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন