বেবি, ডোন্ট ইউ ক্রাই / দুলাল মাহমুদ
কাঁদছে ব্রাজিল। কাঁদছে দুনিয়াব্যাপী সাম্বার অনুরাগীরা। সুন্দরীতমা, তুমিও কাঁদছো। সবাইকে ছাপিয়ে কেন জানি তোমার কান্নাটাই আমার বুকে সমুদ্রের ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ছে। আমি একটুও সইতে পারছি না। কেন পারছি না। জানি না। তোমাকে আমি চিনি না। তোমার নামও জানি না। এ কারণে সুন্দরীতমা বলেই তোমাকে সম্বোধন করলাম। রাগ করো না কিন্তু। আমি তো যা হোক তোমাকে এক পলক হলেও দেখতে পেয়েছি। দেখেছি তোমার মুখ। তোমার অভিব্যক্তিও। কি সুন্দর করে তুমি সেজে এসেছো। তোমার বাহারি ক্যাপ, তোমার কানের দুল, তোমার গলার চেইন, তোমার সোনালি চুল, তোমার কাজলটানা ভ্রু, তোমার লিপষ্টিক রাঙানো ওষ্ঠজোড়া তোমাকে করে তুলেছে আকর্ষক। তুমি যেন হলুদ, সবুজ আর নীল রঙের একটুকরো রঙধনু। তুমি যেন ব্রাজিলের জাতীয় পতাকা। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, আমি যেন ভালোবাসার ব্রাজিলকে দেখতে পাচ্ছি। তোমার গণ্ডদেশ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুতে অনুধাবন করতে পারছি ব্রাজিলের মর্মযাতনাও। তোমার ঠোঁটে, তোমার চিবুকে, তোমার মুখাবয়বে যে কষ্ট, যে যন্ত্রণা, যে বেদনার প্রতিচ্ছবি, তাতে স্পষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্বপ্ন ভঙের মর্মস্পর্শী যাতনা। আমি তোমার মর্মবেদনা বুঝতে পারলেও তুমি তো আমাকে একদমই জানতে পারছো না। তাতে কিইবা যায় আসে? আমি তো কিছুটা হলেও তোমায় চিনতে পেরেছি। বুঝতে পেরেছি তোমার আবেগ। তোমার অনুভূতি। তোমার নিবেদন। তোমার গভীর কালো চোখের অশ্রুই তো সব কথা বলে দিচ্ছে। তুমি তো আমার দূরের কেউ নও। আমাদের দু’জনার আবেগ-অনুভূতি তো বয়ে চলেছে একই ধারায়। আমরা চেয়েছি সুন্দর ফুটবল দেখতে। সুন্দর ফুটবলে মুগ্ধ হতে। সুন্দর ফুটবলের জয়ধ্বনি করতে। সুন্দরের প্রতি তোমার আকুতি, সুন্দরের প্রতি তোমার আরাধনা, সুন্দরের প্রতি তোমার ভালোবাসাই তো তোমাকে চিনিয়ে দেয়। আমি বুঝতে পারি তোমার সুন্দর মনটাকে, তোমার সুন্দর হৃদয়টাকে, তোমার সুন্দর আত্মাকে। তুমি কোথায় থাকো, কত দূরে থাকো, কীভাবে থাকো, সেটা তো বড় কোনো বিষয় নয়। তোমাকে যে বুঝতে পারছি, অনুভব করতে পারছি, জানতে পারছি, সেটাই বড় কথা। আর মনটাই তো আসল। মনের সঙ্গে যদি মিলে যায় মনের, এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী আছে আর বলো? আর কে না জানে, সুন্দর ফুটবল বললেই আমরা বুঝতে পারি একটি দেশকে। যেখানে ফুটবল আছে, যেখানে সাম্বা আছে, আর সেখানেই তো আছে ব্রাজিল। ব্রাজিলের ফুটবলেই তো দেখতে পেয়েছি শিল্পীর তুলির নিপুণ আঁচড়, শুনতে পেয়েছি সুরেলা ধ্বনি, অনুভব করেতে পেরেছি অধরা মাধুরী। আর তুমি যদি ব্রাজিলিয়ান হয়ে থাকো, তাহলে তুমিও তো এরই অংশ। প্রতিনিয়ত অনুভব করো ব্রাজিলীয় ফুটবলের সুর-ছন্দ-আনন্দ। কিন্তু আজ যেন সব কিছু থেমে গেছে। থেমে গেছে সুরের ঝরনাধারা। থেমে গেছে সাম্বার ছন্দ। থেমে গেছে কোপাকাবানা সৈকতের আনন্দের নিত্য-নতুন পশরা। যেন চারিদিকে নেমে এসেছে ঘোর অমানিশা। কোথাও আলো নেই। আনন্দ নেই। উচ্ছ্বাস নেই। জানি, আমার চেয়ে তোমার কষ্ট, তোমার বেদনা, তোমার যাতনা অনেক বেশি। যে কারণে তুমি এই দুঃসহ অবস্থা একদমই মেনে নিতে পারছো না। তোমার বুক ভেঙে যাচ্ছে। পাড় ভাঙার মতো সেই শব্দও যেন আমি শুনতে পারছি। অনুভব করতে পারছি হৃদয় দিয়ে। তোমার মতো না হলেও আমারও বুকের মধ্যে জমে আছে অনেক কান্না। কত অপমান, কত অবজ্ঞা, কত অবহেলা নিয়ে জীবন বয়ে নিয়ে যাই, তবুও কাঁদি না। কাঁদতে পারি না। জীবনের জটিলতা হৃদয়কে পাথর করে দিলেও এখন বুঝতে পারছি, বুকের ভিতরে কোথাও বয়ে চলেছে বেদনার ঝরনাধারা। তোমার কান্না দেখে সেটা যেন বাঁধ মানতে চাইছে না। তুমি হয়তো তোমার দেশের জন্য, তোমার প্রিয় দলের জন্য, তোমার একান্ত অনুভবের জন্য কাঁদছো। আর তোমাকে দেখে আমার ভিতর থেকেও উঠছে কান্নার টেউ। কারণ, আমিও যে ভালোবেসেছি তোমার ব্রাজিলকে। ব্রাজিলের সুন্দর ফুটবলকে। ব্রাজিলের সাম্বাকে। যে কারণে তুমি আছো ব্রাজিলে আর আমি তোমার থেকে কত কত দূরে। তবুও আমাদের কান্নাটা হয়ে গেছে একাকার। কিন্তু কান্নাও তো থামাতে পারছে না কষ্টের এই জলপ্রপাত। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। তুমিও যেমন পারছো না, আমিও তো পারছি না। ভালোবাসার এমন অপমান মেনে নেওয়া যায় না। মেনে নিতে পারছিও না।
এ কেমন ব্রাজিলকে দেখলাম? এই কি আমাদের ভালোবাসার ব্রাজিল? এটা কি স্বপ্ন নাকি দুঃস্বপ্ন? এখনও একটুও বিশ্বাস করতে পারছি না, পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে হারিয়েছে জার্মানি! জার্মানরা যতই প্রতিপত্তিশালী হোক, তাই বলে এভাবে বেইজ্জত হবে স্বাগতিকরা? যেন হিংস্র বাঘের কবলে অসহায় হরিণের ছিন্ন-ভিন্ন হওয়া। যেন চৈত্রের গনগনে সূর্যকে চোখের পলকে ঢেকে দিয়েছে অমাবস্যা। যেন হলুদের ঢেউ খেলানো শস্যক্ষেত্রকে বিরান করে দিয়েছে অশুভ কোনো শক্তি। এতটা অসহায়, এতটা বিপন্ন, এতটা লজ্জা ফুটবল ইতিহাস খুব একটা দেখেনি। এ তো শুধু ব্রাজিলের ফুূটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লজ্জাই নয়, এ তো ফুটবলেরও লজ্জা। শিরোপা প্রত্যাশী একটি দল নিজের মাটিতে এতটা নাজেহাল, এতটা সহায়হীন, এতটা বিপর্যস্ত হবে, এটা ভাবতেই পারা যায় না। এই মর্মবেদনা সইতে পারা যায় না।
সেই শৈশবে যে ব্রাজিলের মাদকতায় বুঁদ হয়েছিলাম, ইদানিং সেই ব্রাজিলকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমার স্বপ্নের ব্রাজিল যেন একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছিল। তার কারুকার্যতা, তার সৃজনশীলতা, তার বনেদিয়ানা আস্তে-ধীরে ধসে পড়ছিল। নিজের স্বকীয়তা, নিজের শৈলী, নিজের আভিজাত্য বিসর্জন দিয়ে হারিয়ে ফেলছিল নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। আর নিজের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেললে কারো কাছেই তেমন গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। যে কারণে ব্রাজিলীয় ঘরানা ক্রমান্বয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছিল। শৈল্পিক ফুটবলের সেই দোলা দুর্লভ হয়ে যেতে থাকে। এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের খেলা একদমই হৃদয় স্পর্শ করেনি। অল্প বয়সী একটি ছেলে নেইমারের উপর যেভাবে দলটি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তা মোটেও ভালো লাগেনি। এমন দল নিয়ে যে বেশি দূর যাওয়া যায় না, সেটাও বুঝতে পেরেছিলাম। তাই বড় কিছু প্রত্যাশা করিনি। কিন্তু তাই বলে এতটা অধঃপতন হবে, সেটা কখনো কল্পনাও করিনি। এই দুঃখ, এই কষ্ট, এই বেদনা কখনো মুছে যাবে না। সারা জীবনের জন্য বুকের মধ্যে একটা ক্ষত চিহ্ন আঁকা হয়ে গেল। সুন্দরীতমা, এই ক্ষত যেমন আমার, এই ক্ষত যেমন তোমার, এই ক্ষত সমগ্র ব্রাজিলের। এমনকি এই ক্ষত ফুটবলেরও।
ব্রাজিলের ফুটবলের ভয়াবহ এই বিপর্যয়ে আমাদের সবার বুকেই জমে আছে কান্না। আমরা সবাই হয়তো কাঁদতে পারছি না। কিন্তু আমাদের কান্নাটা যেন তোমার চোখে জল হয়ে গড়িয়েছে। তবে এটাও তো ঠিক, ফুটবল তো এমনই। কাউকে হাসায়। কাউকে কাঁদায়। কাউকে কম। কাউকে বেশি। জানি, হৃদয়বিদারক এই পরাজয়ে কোনো সান্ত্বনা হয় না। তবুও জীবন তো বয়ে চলে আপন নিয়মে। কেঁদে কেঁদে আর কী হবে বলো? থাক, আর কেঁদো না লক্ষীটি। তোমার কান্না আর সইতে পারছি না।
এ কেমন ব্রাজিলকে দেখলাম? এই কি আমাদের ভালোবাসার ব্রাজিল? এটা কি স্বপ্ন নাকি দুঃস্বপ্ন? এখনও একটুও বিশ্বাস করতে পারছি না, পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে হারিয়েছে জার্মানি! জার্মানরা যতই প্রতিপত্তিশালী হোক, তাই বলে এভাবে বেইজ্জত হবে স্বাগতিকরা? যেন হিংস্র বাঘের কবলে অসহায় হরিণের ছিন্ন-ভিন্ন হওয়া। যেন চৈত্রের গনগনে সূর্যকে চোখের পলকে ঢেকে দিয়েছে অমাবস্যা। যেন হলুদের ঢেউ খেলানো শস্যক্ষেত্রকে বিরান করে দিয়েছে অশুভ কোনো শক্তি। এতটা অসহায়, এতটা বিপন্ন, এতটা লজ্জা ফুটবল ইতিহাস খুব একটা দেখেনি। এ তো শুধু ব্রাজিলের ফুূটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লজ্জাই নয়, এ তো ফুটবলেরও লজ্জা। শিরোপা প্রত্যাশী একটি দল নিজের মাটিতে এতটা নাজেহাল, এতটা সহায়হীন, এতটা বিপর্যস্ত হবে, এটা ভাবতেই পারা যায় না। এই মর্মবেদনা সইতে পারা যায় না।
সেই শৈশবে যে ব্রাজিলের মাদকতায় বুঁদ হয়েছিলাম, ইদানিং সেই ব্রাজিলকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমার স্বপ্নের ব্রাজিল যেন একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছিল। তার কারুকার্যতা, তার সৃজনশীলতা, তার বনেদিয়ানা আস্তে-ধীরে ধসে পড়ছিল। নিজের স্বকীয়তা, নিজের শৈলী, নিজের আভিজাত্য বিসর্জন দিয়ে হারিয়ে ফেলছিল নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। আর নিজের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেললে কারো কাছেই তেমন গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। যে কারণে ব্রাজিলীয় ঘরানা ক্রমান্বয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছিল। শৈল্পিক ফুটবলের সেই দোলা দুর্লভ হয়ে যেতে থাকে। এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের খেলা একদমই হৃদয় স্পর্শ করেনি। অল্প বয়সী একটি ছেলে নেইমারের উপর যেভাবে দলটি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তা মোটেও ভালো লাগেনি। এমন দল নিয়ে যে বেশি দূর যাওয়া যায় না, সেটাও বুঝতে পেরেছিলাম। তাই বড় কিছু প্রত্যাশা করিনি। কিন্তু তাই বলে এতটা অধঃপতন হবে, সেটা কখনো কল্পনাও করিনি। এই দুঃখ, এই কষ্ট, এই বেদনা কখনো মুছে যাবে না। সারা জীবনের জন্য বুকের মধ্যে একটা ক্ষত চিহ্ন আঁকা হয়ে গেল। সুন্দরীতমা, এই ক্ষত যেমন আমার, এই ক্ষত যেমন তোমার, এই ক্ষত সমগ্র ব্রাজিলের। এমনকি এই ক্ষত ফুটবলেরও।
ব্রাজিলের ফুটবলের ভয়াবহ এই বিপর্যয়ে আমাদের সবার বুকেই জমে আছে কান্না। আমরা সবাই হয়তো কাঁদতে পারছি না। কিন্তু আমাদের কান্নাটা যেন তোমার চোখে জল হয়ে গড়িয়েছে। তবে এটাও তো ঠিক, ফুটবল তো এমনই। কাউকে হাসায়। কাউকে কাঁদায়। কাউকে কম। কাউকে বেশি। জানি, হৃদয়বিদারক এই পরাজয়ে কোনো সান্ত্বনা হয় না। তবুও জীবন তো বয়ে চলে আপন নিয়মে। কেঁদে কেঁদে আর কী হবে বলো? থাক, আর কেঁদো না লক্ষীটি। তোমার কান্না আর সইতে পারছি না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন