মাটির বিশ্বকাপ মানুষের বিশ্বকাপ
পৌষের হিম সন্ধ্যা। সূর্য তখন ডুবে গেছে। ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এসেছে শিশিরভেজা গ্রামীণ জনপদে। কিশোরগঞ্জের দিকে চলে গেছে ব্যস্ত একটি সড়ক। তারই বুক চিরে হুট করে ডানদিকে নেমে গেছে পিচঢালা মসৃৃণ পথ। স্থানীয় জনগণের ভালোবাসায় ধন্য এই রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে কৃষি উন্নয়ন ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের নামে। রাস্তাটির কোল ঘেঁষে চরপুলিয়ামারী গ্রাম। ময়মনসিংহ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের শম্ভুগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামটি সেদিন হয়ে ওঠে অন্যরকম। চারপাশ আলোয় আলোয় আলোকিত। বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে গ্রামটি সরগরম। জমজমাট। সেই বিকেল থেকে একটি মাঠকে কেন্দ্র করে সুশৃঙ্খলবদ্ধ হয়ে অধীর অপেক্ষায় আশপাশের গ্রাম থেকে ছুটে আসা হাজারো মানুষ। তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই। গাছের ডালেও ঝুলতে থাকেন উৎসাহীরা। কারোরই আগ্রহের একটুও কমতি নেই। কনকনে শীতকে পাত্তা না দিয়ে ছুটে এসেছেন সেই দূর-দূরান্ত থেকে। সব বয়সী মানুষ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা উপেক্ষা করেছেন ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতল হাওয়াকে। কেউ চাদরে জড়িয়ে, কেউবা এসেছেন সোয়েটার ও মাঙ্কি টুপি পরে। কারো মুখে পান। আমন ধান কাটার পর সবার মনেই আনন্দের রেশ। চারপাশে নবান্নের আমেজ। মনটাও ফুরফুরে। পিঠা-পুলির সমাহার ঘরে ঘরে। আনন্দময় এমন দিনে বড় এক উৎসবের উপলক্ষ নিয়ে আসে চ্যানেলের আই-এর ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’। আয়োজন করে ‘কৃষকের বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০১১’। প্রতীকী এক বিশ্বকাপ। ব্যতিক্রমধর্মী এ আয়োজনের ব্যাখ্যা দিলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম চ্যানেল আই-এর পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, ‘জাতীয় পর্যায়ের কোনো আনন্দ বা উৎসব থেকে বাংলার কৃষকরা পিছিয়ে থাকুক, এটা আমরা চাই না। এরআগে আমরা আয়োজন করেছি কৃষকের বিশ্বকাপ ফুটবল, কৃষকের ঈদ আনন্দ, কৃষকের বৈশাখী আনন্দ। সামনেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মহোৎসব। যেহেতু বাংলাদেশ স্বাগতিক দেশ, এটা আমাদের জন্য গর্বের ও মর্যাদার। এই গর্ব ও মর্যাদার প্রতিটি অংশের অংশীদার গ্রামের ১১ কোটি মানুষ যাতে হতে পারেন, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
আর এই প্রত্যাশার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান চরপুলিয়ামারীর বাসিন্দারা। ক্রিকেটের সঙ্গে তাদের জীবনে কোনোরকম যোগসূত্র ছিল না। থাকার কথাও নয়। এই খেলাটি কীভাবে খেলতে হয়- সেটা তো দূরে থাকুক, এর কোনো কিছুই তাদের হৃদয়তন্ত্রীতে কখনই ঝংকার তোলেনি। এই বিশ্বকাপ তাদের জীবনে যোগ করে নতুন মাত্রা। ক্রিকেট, ব্যাট, বল, রান, ছক্কা, চার তাদের জীবনে নিয়ে আসে নতুন ব্যঞ্জনা, নতুন উদ্দীপনা। স্থানীয় সংগঠক কামরুল হকের ভাষায়, ‘বল চিনতো না। ব্যাটও চিনতো না। রানও কি জিনিস, বুঝতো না। টানা ১৫ দিন প্রতিদিন সকাল-বিকেল তাদেরকে শেখানো হয় কোনটা বোলিং, কোনটা ব্যাটিং, কোনটা ফিল্ডিং। তারপর তারা একটু একটু করে কঠিন এই খেলাটা আয়ত্তে আনেন। খেলাটায় তারা মজা পেয়ে যান। মন দিয়ে অনুশীলন করেন।’ যে মাঠটিতে খেলা হয়, সেটি কিছুদিন আগেও ছিল ভরা সোনালী ধানক্ষেত। এই ধানক্ষেতটিকে ‘স্টেডিয়াম’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দিনের পর দিন কাজ করেন স্থানীয়রা। এবড়োথেবড়ো জমিটিকে ক্রিকেট খেলার উপযোগী করতে বেশ হিমশিম খেতে হয়। রোলার দিয়ে মাঠটিকে সমান্তরাল করা হলেও এখনও নাকে লাগে আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। জেদী বালকের মতো কোথাও কোথাও নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করে আমন ধানের শুকনো নাড়া। মাঠের কোথাও কোথাও গড়ে তোলা হয় গ্যালারি। বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে নামতে হয় মাঠে। মাঠটিকে সাজানো হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠের আদলে। টানানো হয় সামিয়ানা। উড়তে থাকে নানা রঙের পতাকা। ব্যাট ও বলের আকারে লাগানো প্ল্যাকার্ডে ছিল ক্রিকেটের মহিমা। টুনি বাল্ব দিয়ে সাজানো হয় আলোর মালা। সবকিছুতেই ছিল রঙের উচ্ছ্বলতা। দর্শকরা যাতে মাঠে না ঢুকতে পারেন, সেজন্য মাঠের চারপাশ ঘের দেয়া হয় বাঁশ দিয়ে। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বানানো হয় স্ট্যাম্প। ছিল হরেক রঙের বিজ্ঞাপনী বোর্ড। তাতে ছিল মজার মজার বিজ্ঞাপন। সবই কৃষি ও কৃষককে নিয়ে। এই বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে বেচাকিনিও। গরম চা, সেদ্ধ ডিম, শীতের পিঠা, বাদাম, বুট, ভাজাপোড়ার চাহিদা ছিল অনেক বেশি।
২ জানুয়ারি পুরো আয়োজনে ব্যতিক্রম ছিল ফ্লাডলাইটের আলো ঝলমল রাত। নতুবা সবকিছুতেই ছিল গ্রামীণ আমেজ। ফসলের মাঠ, কিষাণ খেলোয়াড়, গ্রামীণ দর্শক যোগ করে ভিন্ন মাত্রা। খেলায় অংশ নেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ এবং গতবারের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া নামে দুটি দল। এই দু’দলের হয়ে খেলেন স্থানীয় কৃষকরা। সবারই বয়স ষাটোর্ধ। প্রবীণদের নিয়ে দল গঠন প্রসঙ্গে এ আয়োজনের মূল পরিকল্পক শাইখ সিরাজ বলেন, ‘এই খেলাটি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে। টিভি দর্শকরা যাতে মজা পান, সেজন্যই দল গঠন করা হয়েছে প্রবীণদের নিয়ে।’ সন্ধ্যা ৬টার একটু পরই শুরু হয় খেলা। যথানিয়মে এই খেলায়ও প্রতীকী প্রধান অতিথি ছিলেন শম্ভুগঞ্জের স্পোর্টস মিনিস্টার শেখ মহিউদ্দীন আহমদ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল, আইসিসির আদলে ফার্মার্স ক্রিকেট কাউন্সিল, এফসিসির প্রেসিডেন্ট কামরুল হক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল আতশবাজির আয়োজন। আলোর এই ঝরনাধারা অবাক চোখে দেখেন স্থানীয়রা। মুগ্ধতা নিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘জাদু দেখাইতেছে।’ নিস্তব্ধ গ্রামের অন্ধকারের বুকে আলোর এই রোশনাই আসলে ভেল্কিবাজির মতোই লেগেছিল। দু’দলের খেলোয়াড়দের পরনে ছিল বাংলার কৃষকদের প্রচলিত শীতের পোশাক। লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, সোয়েটার কিংবা গেঞ্জি বা শার্টের সঙ্গে চাদর বা মাফলার। কারো কারো মাথায় ছিল টুপি। তবে দু’দলকে আলাদাভাবে বোঝার জন্য পোশাকের ওপরে ছিল বিশেষভাবে তৈরি জার্সি। তাতে ছিল প্রত্যেকের নাম। জার্সি নাম্বার। বাংলাদেশ দলের জার্সি ছিল লাল-সবুজ রঙের আর অস্ট্রেলিয়া দলের হলুদাভ। উভয় দলে ছিলেন ৯ জন করে ক্রিকেটার। অতিরিক্ত ক্রিকেটারও ছিলেন একজন। আম্পায়ারের পরনে ছিল লুঙ্গি, চাদর। আর মাথায় ছিল কৃষকের চিরায়ত প্রতীক মাথাল। খেলা হয় ১০ ওভার করে। আন্তর্জাতিক নিয়মেই খেলা হয়। ছিল থার্ড আম্পায়ার। টিভি রিপ্লে দেখার সুযোগ না থাকলেও সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ঠিকই। কোনো পক্ষই আপত্তি তোলেনি। মাঠে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় দর্শকদের দেখানো হয় সরাসরি খেলা। খেলার ভিডিও ধারণের জন্য মাঠের চারপাশে বসানো হয় ১০টি ক্যামেরা। বিভিন্ন কোণ থেকে খেলা রেকর্ড করার জন্য ছিল ক্রেনের ব্যবস্থা। প্রযুক্তির এই অত্যাধুনিক ব্যবস্থাও ছিল গ্রামের মানুষদের অন্যতম আকর্ষণ। খেলোয়াড়রা যখন মাঠে নামেন, তাদের কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের ডাব্লিউ জি গ্রেসকে। দাড়ি ও টুপিতে বিশালদেহী গ্রেসের মত অবিকল না হলেও তাদেরকে অনেকটাই বাংলাদেশী সংস্করণ মনে হতে থাকে। তবে বলিউডের অভিনেতা ও প্রযোজক আমীর খানের হিন্দি ফিল্ম ‘লগান’-এর দৃশ্যপটও ভেসে ওঠে কারো কারো চোখে। সেই আমেজই অনেকটা পাওয়া যায়। খেলা শুরুর আগে আবাদী মাঠে বানানো পিচ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। নিজেদের দল নিয়ে অভিমত দেন দুই অধিনায়ক। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ফসল ফলানোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে শক্তি ও ঘাম। তারই প্রতিফলন দেখা যায় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান নুরুল আমিনের কব্জিতে। গায়ের শক্তি দিয়ে কব্জির মোচড়ে তিনি যখন বল সীমানাছাড়া করছিলেন, তখন উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন দর্শকরা। যেন সত্যি সত্যিই অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের পিটিয়ে ছাতু বানাচ্ছেন বাংলাদেশের তামিম ইকবাল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ ফুটবলের দর্শকদের মতো স্থানীয় দর্শকরাও প্লাস্টিকের ভুভুজেলা, বাঁশি আর নানারকম বাদ্য বাজিয়ে ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করেন। এছাড়াও তাদের হাতে ছিল চার-ছক্কার প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন। ছিল বাংলাদেশ লেখা ব্যানার। দর্শকদের মতিয়ে দেয় ব্যান্ডপার্টির দল। উপভোগ্য ছিল চিয়ার্স-লিডারদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া রঙিন পোশাকে সজ্জিত তিন বানরের নাচ। খেলার উত্তেজনাকর মুহূর্তে বানরগুলো প্রদর্শন করে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি। আর ধারাবিবরণীতে ছিলেন দুই পরিচিত মুখ আবদুল হামিদ ও মঞ্জুর হাসান মিন্টু। তাদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় একজন ধারাভাষ্যকার। তারা চাদর মুড়ি দিয়ে মাঠের পাশের একটি খুপড়ি ঘরে বসে দর্শকদের বিনোদনের খোরাক যোগান। তবে খেলার প্রতিটি মুহূর্তে দর্শক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মাটি ও মানুষের রূপকার শাইখ সিরাজ। তার উপস্থিতি দর্শকদের স্পন্দিত করে। আনন্দিত করে। যে মানুষটিকে তারা প্রতিনিয়ত দেখেন টিভি পর্দায়, যার পরামর্শে তারা উৎপাদন করেন বাড়তি ফসল, তাকে সামনে পেয়ে তারা হন আবেগাপ্লুত। এ কারণে মাঠের বাইরে তুমুল হৈ চৈ চলার সময় খেলায় নীরবতার প্রয়োজন হলে হ্যামিলনের বংশীবাদক হয়ে ওঠেন শাইখ সিরাজ। তিনি মাইক হাতে মুহূর্তের মধ্যে নিস্তব্ধ করে দিয়েছেন মাঠ। আবার দর্শকদের জাগিয়েও তুলেছেন। তিনি যে গ্রামের মানুষের হৃদয়ে কতটা ঠাঁই করে নিয়েছেন, তা অনুভূত হয়েছে প্রতিটি মুহূর্তে। খেলার পরতে পরতে ছিল আবেগ, উত্তেজনা আর আনন্দ। রান করার পর ব্যাটসম্যানদের উদযাপনের ভঙ্গি ছিল বেশ মজার। ফিল্ডাররাও দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন। কখনো ঝাঁপিয়ে পড়ে, কখনো লুঙ্গি দিয়ে মাছ ধরার মতো করে ঠেকিয়েছেন বলের দুরন্ত গতি। উইকেট পতনের পর আনন্দ করেছেন বিচিত্র ভঙ্গিতে। সবকিছুতেই ছিল নিজস্ব ছন্দ, নিজস্ব আনন্দ। বাংলাদেশ দলের সমর্থনের পাল্লাই ছিল ভারি। স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানদের দর্শকরা সমর্থন দিয়েছেন দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে। বাংলাদেশ এক উইকেটে তোলে ১২২ রান। নুরুল আমীন একাই করেছেন ৮০ রান। খেলার বিরতিতে পানীয় হিসেবে দেয়া হয় ডাব ও ঘোল। ডাব ও ঘোল পরিবেশন করা হয় ভ্যানে। জবাবী ইনিংসে ৭৫ রান করে অস্ট্রেলিয়া আউট হলে উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে সারা মাঠে। বাংলাদেশ জয়ী হয় ৭৫ রানে। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নুরুল আমিনকে ডামি ছাগল দেয়ার পর দেয়া হয় একটি আস্ত ছাগল। চ্যাম্পিয়ন দলকে দেয়া হয় ডামি বিশ্বকাপ ট্রফি। ট্রফি হাতে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার ও সমর্থকরা। প্রকৃত বিশ্বকাপ জয়ী দলের মতো এই বিজয়ী দলও ক্যামেরার ফ্লাশের আলোয় ঝলসে ওঠে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স, বিবিসি সহ দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক কভারেজ পায় কৃষকদের এই বিশ্বকাপ।
তবে এই বিশ্বকাপে জয়-পরাজয়ের চেয়ে খেলায় আমোদিত হয়েছেন দর্শকরা। তারা ক্রিকেটের নিয়ম-কানুন খুব একটা জানেন না। জানাটা তেমন প্রয়োজনীয় ছিল না। তবে এটুকু তো বুঝতে পেরেছেন, রান নিলে কিংবা আউট হলে খুশী হওয়া যায়। তাছাড়া এলাকার প্রবীণদের মাঠের কসরত তাদের জন্য ছিল আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। ক্রিকেট এমন একটি খেলা, খুব দ্রুত রপ্ত করা কঠিন, যে কারণে এক পক্ষকাল তালিম নিয়েও অনেকের পক্ষেই মনে রাখা সম্ভব হয়নি। তাই আউট হওয়ার পরও মাঠে দাঁড়িয়ে থেকেছেন ব্যাটসম্যান কুদ্দুস। এমনকি থার্ড আম্পায়ার এসে ব্যাটসম্যানকে সরিয়ে নিতে চাইলে তিনি রাজি হননি। বল ব্যাটসম্যানের ব্যাটে না লাগলেই আম্পায়ার দিয়েছেন ওয়াইড বল। দর্শকরা যে এসব খুব একটা বোঝেন, তা নয়। তারপরও তারা পেয়েছেন নির্দোষ আনন্দ। হেসেছেন প্রাণ খুলে। হাড় কাঁপানো শীতও কাবু হয়ে যায় তাদের প্রাণের উচ্ছ্বাসে। বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বসবাস গ্রামে। তাদের জীবনে খুব একটা আনন্দ নেই। প্রতীকী বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ব্যাট-বল হাতে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন প্রবীণ কৃষকরা। আনন্দিত হয়েছেন নিজেরাও।
মিডিয়াব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ ও তার কর্মীবাহিনী অসাধ্য সাধন করেছেন। প্রতিকূল পরিবেশে আয়োজন করেছেন এই মজার বিশ্বকাপ। নিবেদিতপ্রাণ একদল কর্মীবাহিনীর তুলির আঁচড়ে অজপাড়াগাঁটি সেজে ওঠে বিশ্বকাপের মোহনীয় সাজে। অন্ধকারে ফোটে আলোর ফুল। আর তার সৌরভ নিয়েছেন কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর একটি অংশ।
প্রতীকী এই বিশ্বকাপ আয়োজন করে বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে গ্রামের মানুষের হৃদয়ে নিয়ে গেছে চ্যানেল আই-এর ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’। এদিন একটি গ্রামে এটি সীমাবদ্ধ থাকলেও ১১ ফেব্রুয়ারি চ্যানেল আই-এর দুপুর ২টার নিউজের পর এ সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হলে তা হয়ে ওঠবে তাবৎ গ্রামীণ মানুষের বিশ্বকাপ। কৃষকের বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপভোগ করার পর প্রকৃত বিশ্বকাপ ঠাঁই করে নেবে সবার হৃদয়ে। তার রেশ ছড়িয়ে পড়বে গ্রামীণ জনপদে। প্রতীকী অর্থে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ জয়ী হলেও এটি বাংলাদেশের সব মানুষেরই স্বপ্ন। আর এই স্বপ্নটিকে জাগিয়ে দিলেন কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। একদিন হয়তো বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে, তখন অনেকেরই মনে পড়বে কৃষকের এই বিশ্বকাপের কথা। মাটি ও মানুষের বিশ্বকাপের কথা।
আর এই প্রত্যাশার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান চরপুলিয়ামারীর বাসিন্দারা। ক্রিকেটের সঙ্গে তাদের জীবনে কোনোরকম যোগসূত্র ছিল না। থাকার কথাও নয়। এই খেলাটি কীভাবে খেলতে হয়- সেটা তো দূরে থাকুক, এর কোনো কিছুই তাদের হৃদয়তন্ত্রীতে কখনই ঝংকার তোলেনি। এই বিশ্বকাপ তাদের জীবনে যোগ করে নতুন মাত্রা। ক্রিকেট, ব্যাট, বল, রান, ছক্কা, চার তাদের জীবনে নিয়ে আসে নতুন ব্যঞ্জনা, নতুন উদ্দীপনা। স্থানীয় সংগঠক কামরুল হকের ভাষায়, ‘বল চিনতো না। ব্যাটও চিনতো না। রানও কি জিনিস, বুঝতো না। টানা ১৫ দিন প্রতিদিন সকাল-বিকেল তাদেরকে শেখানো হয় কোনটা বোলিং, কোনটা ব্যাটিং, কোনটা ফিল্ডিং। তারপর তারা একটু একটু করে কঠিন এই খেলাটা আয়ত্তে আনেন। খেলাটায় তারা মজা পেয়ে যান। মন দিয়ে অনুশীলন করেন।’ যে মাঠটিতে খেলা হয়, সেটি কিছুদিন আগেও ছিল ভরা সোনালী ধানক্ষেত। এই ধানক্ষেতটিকে ‘স্টেডিয়াম’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দিনের পর দিন কাজ করেন স্থানীয়রা। এবড়োথেবড়ো জমিটিকে ক্রিকেট খেলার উপযোগী করতে বেশ হিমশিম খেতে হয়। রোলার দিয়ে মাঠটিকে সমান্তরাল করা হলেও এখনও নাকে লাগে আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। জেদী বালকের মতো কোথাও কোথাও নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করে আমন ধানের শুকনো নাড়া। মাঠের কোথাও কোথাও গড়ে তোলা হয় গ্যালারি। বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে নামতে হয় মাঠে। মাঠটিকে সাজানো হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠের আদলে। টানানো হয় সামিয়ানা। উড়তে থাকে নানা রঙের পতাকা। ব্যাট ও বলের আকারে লাগানো প্ল্যাকার্ডে ছিল ক্রিকেটের মহিমা। টুনি বাল্ব দিয়ে সাজানো হয় আলোর মালা। সবকিছুতেই ছিল রঙের উচ্ছ্বলতা। দর্শকরা যাতে মাঠে না ঢুকতে পারেন, সেজন্য মাঠের চারপাশ ঘের দেয়া হয় বাঁশ দিয়ে। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বানানো হয় স্ট্যাম্প। ছিল হরেক রঙের বিজ্ঞাপনী বোর্ড। তাতে ছিল মজার মজার বিজ্ঞাপন। সবই কৃষি ও কৃষককে নিয়ে। এই বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে বেচাকিনিও। গরম চা, সেদ্ধ ডিম, শীতের পিঠা, বাদাম, বুট, ভাজাপোড়ার চাহিদা ছিল অনেক বেশি।
২ জানুয়ারি পুরো আয়োজনে ব্যতিক্রম ছিল ফ্লাডলাইটের আলো ঝলমল রাত। নতুবা সবকিছুতেই ছিল গ্রামীণ আমেজ। ফসলের মাঠ, কিষাণ খেলোয়াড়, গ্রামীণ দর্শক যোগ করে ভিন্ন মাত্রা। খেলায় অংশ নেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ এবং গতবারের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া নামে দুটি দল। এই দু’দলের হয়ে খেলেন স্থানীয় কৃষকরা। সবারই বয়স ষাটোর্ধ। প্রবীণদের নিয়ে দল গঠন প্রসঙ্গে এ আয়োজনের মূল পরিকল্পক শাইখ সিরাজ বলেন, ‘এই খেলাটি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে। টিভি দর্শকরা যাতে মজা পান, সেজন্যই দল গঠন করা হয়েছে প্রবীণদের নিয়ে।’ সন্ধ্যা ৬টার একটু পরই শুরু হয় খেলা। যথানিয়মে এই খেলায়ও প্রতীকী প্রধান অতিথি ছিলেন শম্ভুগঞ্জের স্পোর্টস মিনিস্টার শেখ মহিউদ্দীন আহমদ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল, আইসিসির আদলে ফার্মার্স ক্রিকেট কাউন্সিল, এফসিসির প্রেসিডেন্ট কামরুল হক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল আতশবাজির আয়োজন। আলোর এই ঝরনাধারা অবাক চোখে দেখেন স্থানীয়রা। মুগ্ধতা নিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘জাদু দেখাইতেছে।’ নিস্তব্ধ গ্রামের অন্ধকারের বুকে আলোর এই রোশনাই আসলে ভেল্কিবাজির মতোই লেগেছিল। দু’দলের খেলোয়াড়দের পরনে ছিল বাংলার কৃষকদের প্রচলিত শীতের পোশাক। লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, সোয়েটার কিংবা গেঞ্জি বা শার্টের সঙ্গে চাদর বা মাফলার। কারো কারো মাথায় ছিল টুপি। তবে দু’দলকে আলাদাভাবে বোঝার জন্য পোশাকের ওপরে ছিল বিশেষভাবে তৈরি জার্সি। তাতে ছিল প্রত্যেকের নাম। জার্সি নাম্বার। বাংলাদেশ দলের জার্সি ছিল লাল-সবুজ রঙের আর অস্ট্রেলিয়া দলের হলুদাভ। উভয় দলে ছিলেন ৯ জন করে ক্রিকেটার। অতিরিক্ত ক্রিকেটারও ছিলেন একজন। আম্পায়ারের পরনে ছিল লুঙ্গি, চাদর। আর মাথায় ছিল কৃষকের চিরায়ত প্রতীক মাথাল। খেলা হয় ১০ ওভার করে। আন্তর্জাতিক নিয়মেই খেলা হয়। ছিল থার্ড আম্পায়ার। টিভি রিপ্লে দেখার সুযোগ না থাকলেও সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ঠিকই। কোনো পক্ষই আপত্তি তোলেনি। মাঠে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় দর্শকদের দেখানো হয় সরাসরি খেলা। খেলার ভিডিও ধারণের জন্য মাঠের চারপাশে বসানো হয় ১০টি ক্যামেরা। বিভিন্ন কোণ থেকে খেলা রেকর্ড করার জন্য ছিল ক্রেনের ব্যবস্থা। প্রযুক্তির এই অত্যাধুনিক ব্যবস্থাও ছিল গ্রামের মানুষদের অন্যতম আকর্ষণ। খেলোয়াড়রা যখন মাঠে নামেন, তাদের কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের ডাব্লিউ জি গ্রেসকে। দাড়ি ও টুপিতে বিশালদেহী গ্রেসের মত অবিকল না হলেও তাদেরকে অনেকটাই বাংলাদেশী সংস্করণ মনে হতে থাকে। তবে বলিউডের অভিনেতা ও প্রযোজক আমীর খানের হিন্দি ফিল্ম ‘লগান’-এর দৃশ্যপটও ভেসে ওঠে কারো কারো চোখে। সেই আমেজই অনেকটা পাওয়া যায়। খেলা শুরুর আগে আবাদী মাঠে বানানো পিচ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। নিজেদের দল নিয়ে অভিমত দেন দুই অধিনায়ক। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ফসল ফলানোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে শক্তি ও ঘাম। তারই প্রতিফলন দেখা যায় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান নুরুল আমিনের কব্জিতে। গায়ের শক্তি দিয়ে কব্জির মোচড়ে তিনি যখন বল সীমানাছাড়া করছিলেন, তখন উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন দর্শকরা। যেন সত্যি সত্যিই অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের পিটিয়ে ছাতু বানাচ্ছেন বাংলাদেশের তামিম ইকবাল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ ফুটবলের দর্শকদের মতো স্থানীয় দর্শকরাও প্লাস্টিকের ভুভুজেলা, বাঁশি আর নানারকম বাদ্য বাজিয়ে ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করেন। এছাড়াও তাদের হাতে ছিল চার-ছক্কার প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন। ছিল বাংলাদেশ লেখা ব্যানার। দর্শকদের মতিয়ে দেয় ব্যান্ডপার্টির দল। উপভোগ্য ছিল চিয়ার্স-লিডারদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া রঙিন পোশাকে সজ্জিত তিন বানরের নাচ। খেলার উত্তেজনাকর মুহূর্তে বানরগুলো প্রদর্শন করে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি। আর ধারাবিবরণীতে ছিলেন দুই পরিচিত মুখ আবদুল হামিদ ও মঞ্জুর হাসান মিন্টু। তাদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় একজন ধারাভাষ্যকার। তারা চাদর মুড়ি দিয়ে মাঠের পাশের একটি খুপড়ি ঘরে বসে দর্শকদের বিনোদনের খোরাক যোগান। তবে খেলার প্রতিটি মুহূর্তে দর্শক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মাটি ও মানুষের রূপকার শাইখ সিরাজ। তার উপস্থিতি দর্শকদের স্পন্দিত করে। আনন্দিত করে। যে মানুষটিকে তারা প্রতিনিয়ত দেখেন টিভি পর্দায়, যার পরামর্শে তারা উৎপাদন করেন বাড়তি ফসল, তাকে সামনে পেয়ে তারা হন আবেগাপ্লুত। এ কারণে মাঠের বাইরে তুমুল হৈ চৈ চলার সময় খেলায় নীরবতার প্রয়োজন হলে হ্যামিলনের বংশীবাদক হয়ে ওঠেন শাইখ সিরাজ। তিনি মাইক হাতে মুহূর্তের মধ্যে নিস্তব্ধ করে দিয়েছেন মাঠ। আবার দর্শকদের জাগিয়েও তুলেছেন। তিনি যে গ্রামের মানুষের হৃদয়ে কতটা ঠাঁই করে নিয়েছেন, তা অনুভূত হয়েছে প্রতিটি মুহূর্তে। খেলার পরতে পরতে ছিল আবেগ, উত্তেজনা আর আনন্দ। রান করার পর ব্যাটসম্যানদের উদযাপনের ভঙ্গি ছিল বেশ মজার। ফিল্ডাররাও দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন। কখনো ঝাঁপিয়ে পড়ে, কখনো লুঙ্গি দিয়ে মাছ ধরার মতো করে ঠেকিয়েছেন বলের দুরন্ত গতি। উইকেট পতনের পর আনন্দ করেছেন বিচিত্র ভঙ্গিতে। সবকিছুতেই ছিল নিজস্ব ছন্দ, নিজস্ব আনন্দ। বাংলাদেশ দলের সমর্থনের পাল্লাই ছিল ভারি। স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানদের দর্শকরা সমর্থন দিয়েছেন দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে। বাংলাদেশ এক উইকেটে তোলে ১২২ রান। নুরুল আমীন একাই করেছেন ৮০ রান। খেলার বিরতিতে পানীয় হিসেবে দেয়া হয় ডাব ও ঘোল। ডাব ও ঘোল পরিবেশন করা হয় ভ্যানে। জবাবী ইনিংসে ৭৫ রান করে অস্ট্রেলিয়া আউট হলে উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে সারা মাঠে। বাংলাদেশ জয়ী হয় ৭৫ রানে। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নুরুল আমিনকে ডামি ছাগল দেয়ার পর দেয়া হয় একটি আস্ত ছাগল। চ্যাম্পিয়ন দলকে দেয়া হয় ডামি বিশ্বকাপ ট্রফি। ট্রফি হাতে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার ও সমর্থকরা। প্রকৃত বিশ্বকাপ জয়ী দলের মতো এই বিজয়ী দলও ক্যামেরার ফ্লাশের আলোয় ঝলসে ওঠে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স, বিবিসি সহ দেশ-বিদেশের সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক কভারেজ পায় কৃষকদের এই বিশ্বকাপ।
তবে এই বিশ্বকাপে জয়-পরাজয়ের চেয়ে খেলায় আমোদিত হয়েছেন দর্শকরা। তারা ক্রিকেটের নিয়ম-কানুন খুব একটা জানেন না। জানাটা তেমন প্রয়োজনীয় ছিল না। তবে এটুকু তো বুঝতে পেরেছেন, রান নিলে কিংবা আউট হলে খুশী হওয়া যায়। তাছাড়া এলাকার প্রবীণদের মাঠের কসরত তাদের জন্য ছিল আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। ক্রিকেট এমন একটি খেলা, খুব দ্রুত রপ্ত করা কঠিন, যে কারণে এক পক্ষকাল তালিম নিয়েও অনেকের পক্ষেই মনে রাখা সম্ভব হয়নি। তাই আউট হওয়ার পরও মাঠে দাঁড়িয়ে থেকেছেন ব্যাটসম্যান কুদ্দুস। এমনকি থার্ড আম্পায়ার এসে ব্যাটসম্যানকে সরিয়ে নিতে চাইলে তিনি রাজি হননি। বল ব্যাটসম্যানের ব্যাটে না লাগলেই আম্পায়ার দিয়েছেন ওয়াইড বল। দর্শকরা যে এসব খুব একটা বোঝেন, তা নয়। তারপরও তারা পেয়েছেন নির্দোষ আনন্দ। হেসেছেন প্রাণ খুলে। হাড় কাঁপানো শীতও কাবু হয়ে যায় তাদের প্রাণের উচ্ছ্বাসে। বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বসবাস গ্রামে। তাদের জীবনে খুব একটা আনন্দ নেই। প্রতীকী বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ব্যাট-বল হাতে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন প্রবীণ কৃষকরা। আনন্দিত হয়েছেন নিজেরাও।
মিডিয়াব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ ও তার কর্মীবাহিনী অসাধ্য সাধন করেছেন। প্রতিকূল পরিবেশে আয়োজন করেছেন এই মজার বিশ্বকাপ। নিবেদিতপ্রাণ একদল কর্মীবাহিনীর তুলির আঁচড়ে অজপাড়াগাঁটি সেজে ওঠে বিশ্বকাপের মোহনীয় সাজে। অন্ধকারে ফোটে আলোর ফুল। আর তার সৌরভ নিয়েছেন কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর একটি অংশ।
প্রতীকী এই বিশ্বকাপ আয়োজন করে বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে গ্রামের মানুষের হৃদয়ে নিয়ে গেছে চ্যানেল আই-এর ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’। এদিন একটি গ্রামে এটি সীমাবদ্ধ থাকলেও ১১ ফেব্রুয়ারি চ্যানেল আই-এর দুপুর ২টার নিউজের পর এ সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হলে তা হয়ে ওঠবে তাবৎ গ্রামীণ মানুষের বিশ্বকাপ। কৃষকের বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপভোগ করার পর প্রকৃত বিশ্বকাপ ঠাঁই করে নেবে সবার হৃদয়ে। তার রেশ ছড়িয়ে পড়বে গ্রামীণ জনপদে। প্রতীকী অর্থে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ জয়ী হলেও এটি বাংলাদেশের সব মানুষেরই স্বপ্ন। আর এই স্বপ্নটিকে জাগিয়ে দিলেন কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। একদিন হয়তো বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে, তখন অনেকেরই মনে পড়বে কৃষকের এই বিশ্বকাপের কথা। মাটি ও মানুষের বিশ্বকাপের কথা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন