উৎসবের রঙ যেখানে হলুদ / দুলাল মাহমুদ
হলুদ বললে সাধারণত খারাপ কিছুই আমাদের মনে হয়। বিবর্ণতার প্রতীক যেন হলুদ। চোখে শস্য ফুল দেখা কিংবা হলুদ সাংবাদিকতা নিশ্চয়ই ভালো কিছু নয়। জন্ডিসের রঙ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে হলুদ। এছাড়া ‘ইয়েলো ফিভার’ বললে বোঝায় নানান রকম রোগ-ব্যাধি। এসবের প্রাদুর্ভাব হলে কেউই বোধকরি হলুদের জয়জয়কার চাইবেন না। কিন্তু উৎসবের রঙও যে হলুদ হতে পারে, সেটা তো আমরা জানি। আমাদের দেশে বসন্ত বরণে দেখা যায় হলুদের উল্লাস। বাসন্তী রঙের শাড়ি কিংবা হলুদ সালোয়ার কামিজ আর খোঁপায় গাঁদা ফুলের মালায় সজ্জিত নারী আমাদের মনটাকে করে তোলে রোমান্টিক। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের কাল্পনিক চরিত্র হিমুর মতো কেউ হলুদ পাঞ্জাবি পরিধান করলে বেশ ভালোই লাগে। বিয়েতে হলুদের অনুষ্ঠান কম-বেশি সবারই প্রার্থিত। হলুদ ছাড়া তরকারি রান্নার কথাও আমরা ভাবতে পারি না। এসব তো বাঙালি ঘরানার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু দুনিয়াব্যাপী হলুদকে উৎসবের রঙ হিসেবে পরিচিত করিয়েছে ব্রাজিল। হলুদ রঙের জাগরণ ঘটিয়েছে ব্রাজিল। হলুদকে মর্যাদার আসনে অভিষিক্ত করেছে ব্রাজিল। এ কারণে ব্রাজিল বললে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এমন একটি দেশ, যেখানে দেখতে পাওয়া যায় হলুদের অবাক বিচ্ছুরণ। ব্রাজিল দেশটি যেন হলুদের নন্দনকানন। চারপাশে হলুদের এত আভা, এত শোভা, যা ধাঁধিয়ে দেয় আমাদের চোখ। আমাদের মন। আমাদের হৃদয়। এ দেশটির জাতীয় পতাকায় শোভা পায় হলুদ। যদিও সবুজ ও নীলের প্রাধান্যই বেশি, তারপরও সব ছাপিয়ে যায় হলুদ অসমকোণী চতুর্ভুজটি। জাতীয় ফুল ‘ইপে-অ্যামারেলো’ও উজ্জ্বল হলুদ। জাতীয় পতাকার রঙেই রঙিন ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দলের হলুদ জার্সি। আর এই জার্সির উজ্জ্বলতায় আলোকিত হয়ে ওঠে সারা দুনিয়া। ব্রাজিল দল যখন ফুটবল খেলে, তখন যেন দুরন্ত বাতাসে ঢেউ খেলে যায় হলুদ শস্য ক্ষেত। কখনোবা মনে হয়, যেন বিস্তীর্ণ জমিতে গাঁদা ফুল মনের আনন্দে নাচছে, দুলছে, হাসছে। সারা মাঠে হলুদের অপূর্ব মাতামাতি। আর এর কারণ ব্রাজিলের শৈল্পিক ফুটবল। সুন্দর ফুটবলের স্রষ্টা তো ‘সেলেসাও’রা। এই সুন্দর ফুটবলের কারণেই বিশ্বব্যাপী হলুদ রঙ এত জনপ্রিয়, এত সমাদৃত, এত আদরণীয়। ব্রাজিলের শিল্পিত ও প্রাণবন্ত ফুটবল দর্শকদের বুকে আনন্দের শিহরণ জাগায়। চোখ ও মনে দেয় আরাম। সংগত কারণেই তাতে প্রতিফলিত হয় হলুদের জয়গান। তখন মনে হয়, সুন্দর ফুটবলের রঙ বুঝিবা হলুদ। আর ব্রাজিলের খেলা থাকলে পুরো গ্যালারিতে লেগে যায় হলুদের মচ্ছব। মনমাতানো ফুটবলের পাশাপাশি সাম্বা নাচের দোলায় মাতাল হয় পুরো স্টেডিয়াম। সাম্বা নাচেও থাকে হলুদের উচ্ছ্বাস। সুরে, ছন্দে, নৃত্যে গ্যালারি রূপ নেয় অনেকটা রক অ্যান্ড রোলের হলুদ মঞ্চে। প্রাণোচ্ছ্বল সেই হলুদের কোনো তুলনা হয় না। অবশ্য ব্রাজিলের যে কোনো উৎসবেই দেখা যায় হলুদের উচ্ছ্বলতা ও উজ্জ্বলতা। ব্রাজিলের উৎসবের রঙই যেন হলুদ।
হলুদের দেশ হিসেবে পরিচিত সেই ব্রাজিলে ১২ জুন, বাংলাদেশ সময় ১৩ জুন মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ২০তম বিশ্বকাপ ফুটবলের মহোৎসব। আগামী দিনগুলোতে সারা দুনিয়ায় দেখা যাবে হলুদের রাজত্ব। এমনিতে যেখানে ব্রাজিলের উপস্থিতি, সেখানেই হলুদের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে চারপাশ। আর এবার বিশ্বকাপ ফুটবল তো রীতিমতো ঘটিয়ে দেবে হলুদবিপ্লব। মূলত বিশ্বকাপের প্রতিটি দলই উঁচুমানের ক্রীড়াশৈলী দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে, কিন্তু আয়োজক হিসেবে আলাদাভাবে নজর কাড়বে ব্রাজিল। তাতে থাকছে হলুদের প্রাধান্য। এমনিতে ব্রাজিল ফুটবল দলের হলুদ জার্সি, সাম্বা নাচ, গ্যালারি ভর্তি দর্শক বুকের মধ্যে এঁকে দেয় ভালোবাসার রঙধনু। বিশ্বকাপ উপলক্ষে এসব আরো বেশি বর্ণিল ও গ্ল্যামারার্স হয়ে ধরা দেবে। সেইসঙ্গে অবকাঠামো, রাস্তা-ঘাট, সমুদ্র সৈকত, পর্যটন এলাকা সহ সর্বত্রই ছয়লাপ হয়ে ওঠবে হলুদে হলুদে। যেহেতু বিশ্বকাপে মেতে ওঠবে সারা দুনিয়া, সেহেতু হলুদই হবে আনন্দের রঙ। উৎসবের রঙ। ভালোবাসার রঙ। আমাদের সকাল-দুপুর-রাতগুলোও হয়ে ওঠবে হলুদময়।
dulalmahmud@yahoo.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন